যুবদল নেতার সুপারিশে ছাড়া পেলেন ছাত্রলীগ নেতা
রাজধানীর শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের যুবদল নেতা কৃষিবিদ কে এম সানোয়ার আলমের সহযোগিতায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতারা আবাসিক হলে অবস্থান করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি নাশকতার পরিকল্পনা করার অভিযোগে গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের কর্মী এবং সাধারষ শিক্ষার্থীরা হলে অবস্থানরত তিন শিক্ষার্থীকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করেন। পরে গ্রেপ্তার এক শিক্ষার্থীকে কৃষিবিদ সানোয়ারের সুপারিশের ভিত্তিতে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেছে ছাত্রদল ও সাধারন শিক্ষার্থীরা।
আটক তিনজন হলেন আল সাদি পিয়াল, মীর আসাদ আল রহমান সায়েম, তৌফিক ই মওলা। তবে পরবর্তীতে আল সাদি পিয়ালকে পুলিশ ছেড়ে দেয়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ যুবদল নেতা সানোয়ার ও আল সাদি পিয়াল একই এলাকা ময়মনসিংহের হওয়ায় আল সাদি পিয়ালকে হলে অবস্থান ও পুলিশের আটক থেকে মুক্ত করতে সাহায্য করেছেন তিনি।
আটকের পরে দেওয়া জবানবন্দিতে ছাত্রলীগ নেতা আল সাদি পিয়াল স্বীকার করেন যুবদল নেতা কৃষিবিদ সানোয়ারের সহযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে দীর্ঘদিন অবস্থান করছিলেন, যা পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা শরিফ জানান, আগস্ট মাসকে ঘিরে দেশব্যাপী অরাজকতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ছাত্রলীগ ও ফ্যাসিস্টদের কিছু নেতাকর্মী নিয়মিত জুম মিটিং করছে। পলাতক অনেকে ক্যাম্পাস সংলগ্ন এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে উঠেছে এবং হলে অবস্থানকারী ছাত্রলীগ কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকেন্ড গেটের চায়ের দোকানে নিয়মিত আড্ডা দেয় এবং ঢাকায় কোনো গোপন কর্মসূচি থাকলে হলে এসে অবস্থান করে। আমরা কয়েকদিন তাদের পর্যবেক্ষণ করি এবং বিভিন্নভাবে তথ্য সংগ্রহের মধ্যে দিয়ে নিশ্চিত হই যে তারা একত্রিত হচ্ছে এবং কিছু একটা করার পরিকল্পনা করছে। এরপর সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের রুমে যাই এবং প্রক্টরকে ফোন করি, কিন্তু তিনি আসতে রাজি হননি। পরে বিষয়টি থানা পুলিশকে জানানো হয় এবং সন্দেহভাজন তিনজনকে পুলিশের জিম্মায় দেওয়া হয়।
আওয়ামী কৃষিবিদদের নেতা ও আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এসব শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন এবং ক্যাম্পাসসহ আশপাশের পরিবেশ পরিস্থিতি সম্পর্কে তাদের থেকে খবর নিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন ছাত্রদল নেতা।
মূলত গতবছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে পতিত আওয়ামীলীগের সরকার পতনের পর বাংলাদেশে আবারও অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আওয়ামিলীগ। এ অবস্থায় নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ বেশ কিছুদিন ধরে গুপ্ত নাশকতার পরিকল্পনা করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (শেকৃবি) ছাত্রলীগের নেতা পরশের নেতৃত্বে একটি গুপ্ত পরিকল্পনার ছক ফাঁস হলে গত বুধবার নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক তিন নেতাকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সহায়তায় পুলিশ আটক করে নিয়ে যায়। পরে ছাত্রলীগ নেতা পিয়ালকে ছাড়াতে করা তদবির বিষয়টি সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের কারণ হয়ে দাড়ায়।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রদল নেতা বলেন,‘মূলত ক্যাম্পাসের সাবেক শিক্ষার্থী এবং যুবদল নেতা সানোয়ারের নিজ এলাকার লোক পিয়াল হওয়ায় তাকে ক্যাম্পাসে থাকার সুযোগ করে দেন। এ ছাড়া পুলিশের নিকট থেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রেও সেই সহযোগিতা করছে। এর আগে কৌশিক নামের একজন ছাত্রলীগ নেওয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে সে বাধা প্রধান করেন।’
আরও পড়ুন:
ইবির ইসলামের ইতিহাস বিভাগে তালা!
আল সাদি পিয়াল ছাড়া পাওয়ার বিষয় শেকৃবি ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির বলেন, ‘আমরাও ছাত্রলীগ নেতা ছাড়া পাওয়ার সঙ্গে যুবদল নেতা সানোয়ার ভাইয়ের সহযোগিতার গুঞ্জন শুনেছি, যা আমাদের কাছে অসত্য মনে হয়েছে। তবে সত্য হলে এটা করা ঠিক হয়নি বলেই আমাদের মত, কেননা সানোয়ার ভাই নিজেও দুঃসময়ের কর্মী, তিনি কোনো ছাত্রলীগ কমীকে আশ্রয় দিবেন তা মেনে নেওয়া যায় না। তবে আমি ছাত্রলীগ নেতা ছাড়া পাওয়ার মূল দায় পুলিশকে দিতে চাই।’
পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার সময়ে উপস্থিত ছাত্রদল নেতা শরিফ বলেন,‘আমরা মূলত তিনজনকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করলেও পরবর্তীতে দুইজনকে আটক দেখানো হয়েছে। কীভাবে একজন ছাড়া পেল তা আমরা অবগত নই।’
যুবদল নেতা কে এম সানোয়ার আলম বলেন,‘আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে। আমার সঙ্গে কোনো যোগসূত্র ছাত্রলীগ নেতা পিয়ালের থাকার কথা নয়, সেখানে পুলিশের নিকট হতে ছাড়ানোর কথা তো দূরের বিষয়। এ ছাড়া ছাত্রলীগ নেতা পিয়ালের আমার বিরুদ্ধে যে জবানবন্দীর ভিডিও এসেছে তা জোরপূর্বক কিংবা যড়যন্ত্রমূলক ভাবে হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত সত্য বের হবে।’
শেরে বাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমামউল হক বলেন, ‘ছাত্রলীগের পোস্টধারী দুইজন নেতাকে শেকৃবি ক্যাম্পসের ছাত্রদল নেতা এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা আমাদের হাতে তুলে দেয়। তদের বিরুদ্ধে মূলত বিভিন্ন ঝটিকা মিছিল এবং অপতৎপরতার অভিযোগ রয়েছে যা বতমানে তদন্তাধীন অবস্থায় রয়েছে।’