শিশুর গ্রীষ্মকালীন সমস্যায় বাবা-মায়ের করণীয়
গরমকালে শিশুরা নানা ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যায় পড়ে। কারণ তাদের শরীর বয়স্কদের মতো দ্রুত তাপমাত্রা পরিবর্তন এবং পানিশূন্যতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে না। গরমে শিশুর কিছু সাধারণ স্বাস্থ্যগত সমস্যা এবং তা প্রতিকারে বাবা-মা যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন তা হলো
সাধারণ স্বাস্থ্যগত সমস্যা : গ্রীষ্মে শিশু যে ধরনের সমস্যায় পড়ে তা হলো
পানিশূন্যতা : গরমকালে ঘামের মাধ্যমে শিশুর শরীর থেকে প্রচুর পানি বের হয়ে যায়। যথেষ্ট পরিমাণে পানি পান না করলে এই সময় দেখা দিতে পারে পানিশূন্যতা। এর লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে শুকনো মুখ, কম প্রস্রাব, গাঢ় রঙের প্রস্রাব, খিটখিটে মেজাজ ও দুর্বলতা। মারাত্মক পানিশূন্যতা বিপজ্জনক হতে পারে।
জ্বর : গরমের কারণে বা অন্য কোনো সংক্রমণের কারণে শিশুদের জ্বর হতে পারে। গরমে ভাইরাসের সংক্রমণও বাড়ে।
পেটের সমস্যা : গরমে খাদ্যে বিষক্রিয়া বা সংক্রমণের কারণে ডায়রিয়া, বমি বা পেটে ব্যথা হতে পারে।
ত্বকের সমস্যা : এই সময় ঘামাচি, অ্যালার্জি বা অন্যান্য ত্বকের সংক্রমণ গরমে শিশুদের মধ্যে দেখা যায়।
আরও পড়ুন:
শীতে গর্ভবতী মায়েদের যত্ন
সর্দি ও কাশি : অতিরিক্ত গরমের কারণে বা হঠাৎ তাপমাত্রার পরিবর্তনের ফলে সর্দি ও কাশি হতে পারে।
হিট স্ট্রোক : অতিরিক্ত গরমে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে হিট স্ট্রোক হতে পারে, যা একটি জরুরি অবস্থা। এর লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে খুব বেশি মাত্রার জ্বর, দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস, দ্রুত হৃদস্পন্দন, ত্বক লালচে ও শুকনো হয়ে যাওয়া ও অজ্ঞান হয়ে যাওয়া। এসব লক্ষণ দেখা দিলে শিশুর প্রতি আরও বেশি যত্নশীল হতে হবে।
প্রতিকার ও যত্ন : এসব সমস্যা সমাধানে যা করতে হবে তা হলো
পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করানো : শিশুদের নিয়মিতভাবে পানি পান করানো, শরবত, ডাবের পানি বা অন্যান্য তরল খাবার দিন। ৬ মাসের কম বয়সী শিশুকে ঘন ঘন বুকের দুধ পান করানো উচিত।
সহজপাচ্য খাবার : গরমে শিশুদের হালকা ও সহজে হজমযোগ্য খাবার দিন। ভাজাভুজি ও মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। তাজা ফল ও সবজি তাদের খাদ্যতালিকায় যোগ করুন।
আরামদায়ক পোশাক : শিশুদের হালকা, ঢিলেঢালা এবং সুতির পোশাক পরাবেন, যা বাতাস চলাচল করতে সাহায্য করে।
পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা : শিশুকে নিয়মিত গোসল করান। তাদের শরীর পরিষ্কার রাখুন। ঘামাচি এড়াতে দিনে কয়েকবার নরম কাপড় দিয়ে শরীর মুছে দিন।
ঠাণ্ডা ও বাতাস চলাচল করা ঘরে রাখা : শিশুদের সরাসরি রোদ থেকে দূরে রাখুন এবং তাদের ঠান্ডা ও বাতাস চলাচল করা ঘরে রাখার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে পাখা বা এয়ার কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। এসির তাপমাত্রা ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখা ভালো।
বাইরে খেলাধুলা সীমিত করা : দিনের বেলায় যখন তাপমাত্রা বেশি থাকে তখন শিশুদের বাইরে খেলাধুলা করতে দেবেন না। সকালের ঠান্ডা আবহাওয়া বা সন্ধ্যার পরে খেলাধুলার জন্য উপযুক্ত সময়।
সানস্ক্রিন ব্যবহার : বাইরে বের হওয়ার আগে শিশুদের ত্বকে সানস্ক্রিন লাগান।
আরও পড়ুন:
জরায়ুমুখ ক্যানসারের লক্ষণগুলো জেনে রাখুন
জরুরি অবস্থায় দ্রুত চিকিৎসা : যদি শিশুর মধ্যে পানিশূন্যতা, হিট স্ট্রোক বা অন্য কোনো গুরুতর লক্ষণ দেখা যায়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। গরমকালে শিশুদের স্বাস্থ্যের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। সঠিক যত্ন ও সতর্কতা অবলম্বন করে তাদের সুস্থ রাখা সম্ভব।
লেখক : শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ
চেম্বার : আলোক মাদার অ্যান্ড চাইল্ড কেয়ার, মিরপুর-৬, ঢাকা
হটলাইন : ১০৬৭২