সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক ৭ দিনের রিমান্ডে

আদালত প্রতিবেদক
৩০ জুলাই ২০২৫, ১১:০৩
শেয়ার :
সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক ৭ দিনের রিমান্ডে

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের রায় জাল-জালিয়াতির অভিযোগে মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

আজ বুধবার সকালে বুধবার ঢাকার অতিরিক্ত চীফ মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সানাউল্লাহ তার এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন। 

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহবাগ থানা পুলিশের এসআই মো. খালেক মিয়া তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদনসহ ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন।

রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, মামলার এজাহারনামীয় পলাতক আসামি এ বি এম খায়রুল হক (৮০) গত ২৪ জুলাই যাত্রাবাড়ী থানার মামলা নং-২৫, ৬ জুলাই ধারা-১৪৩/৩০২/১৪৯/১০৯/১১৪/৩৪ পেনাল কোডে গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে জেলহাজতে আটক আছে। আসামি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে জনৈক আব্দুল মান্নান খান কর্তৃক দায়েরকৃত সিভিল আপিল নং-৫৯৬/২০০৫ ও সিভিল পিটিশন নং-৫৯৬/২০০৫ মামলায় বাংলাদেশ সংবিধানের ১৩তম সংশোধনী (অ্যাক্ট নং-১/১৯৯৬) বাতিল পূর্বক ২০১১ সালের ১০ মে একটি সংক্ষিপ্ত রায়/আদেশ প্রদান করেন। 

ওই সংক্ষিপ্ত রায়ে আসামি পরবর্তী দশম ও এগারতম সংসদ নির্বাচন দুটি সংবিধানের ১৩তম সংশোধনীর আলোকে অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে মত প্রদান করেন। এই ১০ মে তারিখের আদেশটি সংক্ষিপ্ত সারমর্ম হলো-বাংলাদেশ সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করা হলেও পরবর্তী দুটি নির্বাচন অর্থাৎ ১০ম ও ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর অধীনে অনুষ্ঠিত হতে পারে। সে ক্ষেত্রে সাবেক প্রধান বিচারপতি বা আপীল বিভাগের বিচারপতিগণকে নিদলীয় তত্ত্বাবধায় সরকারের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যাবে না মর্মে সংবিধান সংশোধনের জন্য মত প্রদান করেন। ওই সংক্ষিপ্ত আদেশটি সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে প্রদান করা হয়। 

উল্লেখ্য যে, আসামি-বিচারপতি এ বি এম খাইরুল হকের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত আদেশের পক্ষে বিচারপতি মোহা. মোজাম্মেল হোসেন, বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন মত প্রদান করলেও বিচারপতি আব্দুল ওয়াহাব মিয়া, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা ও বিচারপতি ইমান আলী আসামীর রায়ের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন।

অতঃপর ২০১১ সালের ১০ মে ওই সংক্ষিপ্ত আদেশের প্রায় ১৬ মাস পরে অর্থাৎ ২০১২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর আসামি এ বি এম খাইরুল হক ইচ্ছাকৃতভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে দুর্নীতিমূলক ওই সংক্ষিপ্ত আদেশ উপেক্ষা করে আপিল মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় লেখেন এবং বিচারপতি মোহাম্মাদ মোজাম্মেল হোসেন, বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ওই দুর্নীতিমূলক ও বিদ্ধেষাত্মকভাবে পূর্ণাঙ্গ রায়ের সঙ্গে সম্মত হয়ে পূর্ণাঙ্গ রায়ে স্বাক্ষর প্রদান পূর্বক রায়টি প্রকাশ করেন। 

যেহেতু আপিল বিভাগের ওই সংক্ষিপ্ত আদেশে উল্লেখিত পরবর্তী দশম ও এগারতম সংসদ নির্বাচন দুটি সংবিধানের ১৩তম সংশোধনীর আলোকে অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে প্রদেয় মত পরিবর্তন করে পূর্ণাঙ্গ রায়টি ‎প্রকাশ করেন, সেহেতু ওই পূর্ণাঙ্গ রায়টি বেআইনি ও আইন বহির্ভূত। আসামি সাবেক বিচারপতি এ বি এম খাইরুল হক বিচারক হিসেবে লোভের বশবর্তী হয়ে দুর্নীতিমূলক ও বিদ্বেষাত্মক এবং বে-আইনিভাবে রায় প্রদান করাসহ অসত্য ও জাল জালিয়াতি সৃষ্টি করেছে।

প্রাথমিক তদন্তে ওই ঘটনায় আসামি এ বি এম খায়রুল হক (৮০) জাল জালিয়ালিতে সরাসরি জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় আসামির এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোসহ ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা প্রয়োজন।

‎এর আগে গত ২৪ জুলাই সকাল সাড়ে আটটার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডির একটি বাসা থেকে তাকে আটক করা হয়। ওইদিনই তাকে বলে ‎জুলাই আন্দোলনের একটি হরা হয়। পরে শুনানি শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর দেশের ১৯তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন খায়রুল হক। ২০১১ সালে ১৭ মে ৬৭ বছর পূর্ণ হওয়ায় অবসর গ্রহণ করেন তিনি। আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময় খায়রুল হক ছিলেন আইন কমিশনের চেয়ারম্যান।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর ১৩ আগস্ট তিনি আইন কমিশন থেকে পদত্যাগ করেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল মামলার মূল রায়দানকারী হিসেবে রাজনৈতিকভাবে সমালোচিত খায়রুল হক।