বজ্রপাতের সময় করণীয়-সতর্কতা

লাইফস্টাইল ডেস্ক
২৮ জুলাই ২০২৫, ১১:০৮
শেয়ার :
বজ্রপাতের সময় করণীয়-সতর্কতা

বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা আমাদের দেশে নতুন কিছু নয়। গ্রামাঞ্চলে এ ঘটনা বেশি ঘটে থাকে। প্রতিবছর বজ্রপাতে অনেক মানুষ প্রাণ হারান। বিশেষ করে হাওর এলাকা বা বিস্তীর্ণ খোলা অঞ্চলে বজ্রপাতের ঘটনা বেশি ঘটে। মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাবে বজ্রপাতে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। তাই কিছু সতর্কতা মেনে চললে, বজ্রপাতে প্রাণহানী থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।

বজ্রপাতের সময় কোথায় থাকা উচিত? 

বজ্রপাতের সময় সবচেয়ে নিরাপদ স্থান বাড়ির অভ্যন্তর। এসময় পাকা বাড়ির নিচে বা অন্য কোনো ছাউনির নিচে আশ্রয় নেওয়া উচিত। খোলা মাঠ, উঁচু গাছ বা বিদ্যুতের খুঁটি থেকে অবশ্যই দূরে থাকুন। বজ্রঝড় সচরাচর ৩০-৪৫ মিনিটের মতো স্থায়ী হয়। এই সময়টুকু ঘরের ভেতরে থাকাই সবচেয়ে শ্রেয়। 

রাবারের জুতা পরুন 

আকাশে গভীর ও উলম্ব (খাড়া) মেঘ দেখলেই বুঝবেন বজ্রপাত হতে পারে। এসময় চামড়ার ভেজা জুতা বা খালি পায়ে থাকা খুবই বিপজ্জনক। বজ্রপাতের সময় বাইরে জরুরি প্রয়োজনে বের হতে হবে রাবারের জুতা পরুন। 

বজ্রপাতের সময় মাঠে থাকলে করণীয় 

গ্রামীণ অঞ্চলে মাঠে অবস্থান করলে পায়ের আঙুলে ভর দিয়ে দাঁড়ান। এরপর কানে আঙুল দিয়ে মাথা নিচু করে বসুন। বজ্রপাতের সময় এভাবে নিজেকে নিরাপদ রাখার চেষ্টা অনেক আগে থেকেই প্রচলিত।

উঁচু গাছের কাছে থাকবেন না 

উঁচু গাছপালা বা বিদ্যুতের খুঁটিতে বজ্রপাতের সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই এসব স্থানে আশ্রয় নেবেন না। তালগাছ বা বড় গাছে বজ্রপাত হওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত বেশি থাকে।

বজ্রপাতের সময় ঘরের ভেতরে থাকলেও যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকবেন 

* বজ্রপাতের সময় বাড়িতে থাকলে জানালার কাছাকাছি থাকবেন না। এসময় জানালা বন্ধ রাখুন এবং ঘরের ভেতর থাকুন। বজ্রপাত ও ঝড়ের সময় বাড়ির ধাতব কল, সিঁড়ির রেলিং, পাইপ ইত্যাদি স্পর্শ করবেন না। এমনকি ল্যান্ড লাইন টেলিফোনও স্পর্শ করবেন না। এসব স্পর্শের মাধ্যমে বজ্রপাতের সময় অনেকে আহত হন। 

* ভবনে যদি বজ্রপাত নিরোধক ব্যবস্থা না থাকে তাহলে বজ্রঝড়ের সময় সবাই আলাদা আলাদা কক্ষে বিচ্ছিন্নভাবে অবস্থান করুন।

* বজ্রপাতের সময় বৈদ্যুতিক সংযোগযুক্ত যন্ত্রপাতি স্পর্শ করবেন না। টিভি, ফ্রিজ ইত্যাদি বন্ধ করা থাকলেও ধরবেন না। বজ্রপাতের আভাস পেলে আগেই এসব পণ্যের প্লাগ খুলে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করুন। অনেকসময় বজ্রপাতের কারণে টিভি, ফ্রিজ, এসি, রাউটার, কম্পিউটার এসব নষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটে। 

বজ্রপাতের সময় গাড়ির ভেতর থাকলে করণীয় 

বজ্রপাতের সময় গাড়ির ভেতরে থাকলে সম্ভব হলে গাড়িটি নিয়ে কোনো কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিন। গাড়ির ভেতরের ধাতব বস্তু স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন। গাড়ির কাচেও এসময় হাত দেবেন না।

বজ্রপাতের সময় আরও কিছু করণীয় 

এসময় এমন কোনো স্থানে যাবেন না, যে স্থানে আপনিই উঁচু। ধানক্ষেত বা বড় মাঠে থাকলে তাড়াতাড়ি নিচু হয়ে যান। বাড়ির ছাদ কিংবা উঁচু কোনো স্থানে থাকলে দ্রুত সেখান থেকে নেমে যান।

বজ্রপাতের সময় ছোট কোনো পুকুরে সাঁতার কাটলে বা জলাবদ্ধ স্থানে থাকলে দ্রুত সেখান থেকে সরে পড়ুন। কেননা পানি খুব বেশি বিদ্যুৎ পরিবাহী।

কয়েকজন মিলে যদি খোলা স্থানে থাকেন তাহলে বজ্রপাত শুরু হলে প্রত্যেকে ৫০ থেকে ১০০ ফুট দূরে সরে যান। বজ্রপাত হওয়ার উপক্রম হলে কানে আঙুল দিয়ে নিচু হয়ে বসুন। চোখ বন্ধ রাখুন। কিন্তু মাটিতে শুয়ে পড়বেন না। কারণ মাটিতে শুয়ে পড়লে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।

বজ্রপাতে কেউ আক্রান্ত হলে করণীয় 

বজ্রপাতে আক্রান্ত হলেই যে মৃত্যু হয় এমনটা সবসময় ঠিক নয়। দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করলে আক্রান্ত ব্যক্তি বাঁচতেও পারেন। তাই কেউ অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে বজ্রপাতে আক্রান্ত হলে যত দ্রুত সম্ভব নিকটস্থ চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যান। ওই ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস ও হৃৎস্পন্দন ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করুন।  

আশেপাশে বজ্রপাত হচ্ছে কি না বুঝবেন যেভাবে 

আপনার ওপরে বা আশপাশে বজ্রপাত হওয়ার আগের মুহূর্তে কয়েকটি লক্ষণে তা বোঝা যেতে পারে। যেমন বিদ্যুতের প্রভাবে চুল খাড়া হয়ে যাবে, ত্বক শিরশির করবে বা বিদ্যুৎ অনুভূত হবে। এসময় আশপাশের ধাতব পদার্থ কাঁপতে পারে। এমন পরিস্থিতি হলে বুঝবেন সতর্ক হওয়ার সময় হয়েছে। 

পাতের সময় করণীয়-সতর্কতা