ওবায়দুল কাদেরের ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে বিএনপি নেতার ছবি ভাইরাল

কোম্পানীগঞ্জ (নোয়াখালী) প্রতিনিধি
২৩ জুলাই ২০২৫, ১৬:৪৫
শেয়ার :
ওবায়দুল কাদেরের ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে বিএনপি নেতার ছবি ভাইরাল

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ঘনিষ্ঠ সহকর্মী দুই নেতাকে একই সারিতে নিয়ে অনুষ্ঠান করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ।

সম্প্রতি এমন একটি ভিডিও ও কয়েকটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে নোয়াখালী জেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে।

জানা যায়, গত ১৯ জুলাই দুপুরের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে সানকেন মিডোজ স্টেট পার্কে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার রামপুর-মুছাপুর ইয়াং স্টার আয়োজনে গেট টুগেদার অনুষ্ঠিত হয়। এতে মুছাপুর ও রামপুর ইউনিয়নের প্রবাসীরা অংশ গ্রহণ করেন।

অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদেরর ঘনিষ্ঠ সহচর মুছাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান এবং নিউইয়র্ক স্টেট আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব আলী ও রামপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ইকবাল বাহার চৌধুরীকে একই সারিতে বসিয়ে বক্তব্য দেন বিএনপি নেতা বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ। নেতাকর্মী ওই ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে নিন্দার ঝড় তুলেন। এ নিয়ে নোয়াখালীর রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওবায়দুল কাদেরের পরিবারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত মুছাপুর ইউনিয়ন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও নিউইয়র্ক স্টেট আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব আলী ও রামপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ইকবাল বাহার চৌধুরী। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তারা গোপনে আমেরিকায় পালিয়ে যায়। আওয়ামী লীগ নেতা আইয়ুব আলীর সঙ্গে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও ব্যাপক ঘনিষ্ঠতা ছিল।

ভাইরাল হওয়া ছবি দিয়ে বিএনপি সমর্থক তাফসির হোসেন নামে এক ব্যক্তি লিখেছেন, ‘প্রিয় আবেদ ভাই। নোয়াখালী-৫ আসনের নেতাকর্মীরা আপনার থেকে এমন কিছু আশা করে নাই। আওয়ামী দোসরদের সঙ্গে আপনার ছবি দেখে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।’

জিয়াউর রহমান নামে এক ব্যক্তি লিখেছেন, ‘নোয়াখালী-৫ আসনের এমপি প্রার্থী আবেদ সাহেব কি আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের দায়িত্বে নামছেন নাকি। ভালো খুব ভালো, এগিয়ে যান।’

অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্যে বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ ১৩-১৪ হাজার মাইল দূরে গিয়ে সবার সঙ্গে একত্রিত হতে পারায় তিনি শুকরিয়া আদায় করেন। এ সময় তিনি উপস্থিত সবার সুস্বাস্থ্য, নেক হায়াত ও সবার হেদায়েত কামনা করেন আল্লাহর কাছে।

এ বিষয়ে জানতে নিউইয়র্ক স্টেট আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব আলী জানান, এখানে বিএনপি-জামায়াত বড় পরিচয় নয়। এখানে সবচেয়ে বড় পরিচয় আমরা বাংলাদেশি। এখানে হচ্ছে একটি সম্প্রীতি। তা ছাড়াও এটি কোনো দলের কর্মসূচি নয়, এটি একটি সামাজিক কর্মসূচি ও বন্ধন। যুক্তরাষ্ট্রে এলে সব দলমত ঊর্ধ্বে রেখে মিলনমেলা হয়। বাংলাদেশের সুনাম রাখতে এ সামাজিক কাজগুলো করা হয়।

রামপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ইকবাল বাহার চৌধুরীর মোবাইল ফোনে কল করা হলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। তাই এ বিষয়ে তার কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

নোয়াখালী জেলা বিএনপির সদস্যসচিব হারুনুর রশীদ আজাদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও ফোন রিসিভ হয়নি। তাই এ বিষয়ে তার কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

যোগাযোগ করা হলে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘গত ১২ জুলাই আমি আমেরিকা আসি। ছাত্রদলের নেতারা এসে আমার এলাকার দুটি ইউনিয়নের গেট টুগেদারের অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেয়। অনুষ্ঠানে আর কারা ছিল- এ বিষয়ে তারা আমাকে কিছু বলে নাই। আমিও জানি না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ওই দুই নেতাকে আমি চিনি না। তাদের সঙ্গে আমার পরিচয়ও নেই। ওটা জাস্ট একটা পুরস্কার বিতরণের অনুষ্ঠান ছিল। আয়োজকরা বলেছে কেউ বক্তব্য রাখবে না। আপনি বাংলাদেশ থেকে এসেছেন ২ মিনিট শুভেচ্ছা জানাবেন। ওরা দুই জনই কাদের মির্জার সঙ্গে ক্লোজ এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডেও ছিল। আমি সেটা পরে খবর নিয়ে জেনেছি। কিন্তু আয়োজকরা আমাকে তাদের বিষয়ে সতর্ক করলে এ ছবি উঠত না। ২-১ জন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি দিয়ে পোস্ট করেছে বলে শুনেছি।’