আগের চেয়ে বেশি ঘুরছে পৃথিবী, ছোট হয়ে যাচ্ছে দিন

তথ্য ও প্রযুক্তি ডেস্ক
২২ জুলাই ২০২৫, ১১:২৩
শেয়ার :
আগের চেয়ে বেশি ঘুরছে পৃথিবী, ছোট হয়ে যাচ্ছে দিন

পৃথিবী আগের চেয়ে আরও দ্রুত ঘূর্ণন শুরু করেছে- যার ফলে দিনগুলি কিছুটা ছোট হয়ে যাচ্ছে। এটিকে বৈশ্বিক সময় ব্যবস্থাপনায় এক নজিরবিহীন ঘটনা বলে জানিয়েছেন সময় রক্ষক ও বিজ্ঞানীরা।

আন্তর্জাতিক আর্থ রোটেশন অ্যান্ড রেফারেন্স সিস্টেমস সার্ভিস এবং মার্কিন নৌ অবজারভেটরির তথ্য অনুসারে, গত ১০ জুলাই ছিল এখন পর্যন্ত বছরের সবচেয়ে ছোট দিন, যা ২৪ ঘন্টার চেয়ে ১.৩৬ মিলিসেকেন্ড কম স্থায়ী হয়েছিল। আজ ২২ জুলাই এবং আগামী ৫ আগস্ট আরও ব্যতিক্রমীভাবে ছোট দিন আসছে, যা বর্তমানে ২৪ ঘন্টার চেয়ে যথাক্রমে ১.৩৪ এবং ১.২৫ মিলিসেকেন্ড কম হওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবীর এ গতি বেড়ে যাওয়ায় প্রথমবারের মতো ‘নেগেটিভ লিপ সেকেন্ড’ যুক্ত করার বিষয়টি এখন গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় রয়েছে।

সিএনএন এর এক প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, পৃথিবী সাধারণত ২৪ ঘণ্টায় একবার নিজের অক্ষের চারপাশে ঘোরে। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, পৃথিবী এখন আগের তুলনায় সামান্য হলেও দ্রুত ঘুরছে। ২০২৪ সালের ৫ জুলাই ছিল আধুনিক ইতিহাসে সবচেয়ে ছোট দিন- যা ১.৬ মিলিসেকেন্ড কম ছিল স্বাভাবিক ২৪ ঘণ্টার দিন থেকে।

১৯৭২ সাল থেকে সময়ের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে আন্তর্জাতিক সময়রেখায় ২৭ বার “লিপ সেকেন্ড” যোগ করা হয়েছে। অর্থাৎ একটি অতিরিক্ত সেকেন্ড যুক্ত করে সময় ঠিক রাখা হয়েছে। তবে এবার বিজ্ঞানীরা বলছেন, পরিস্থিতি পাল্টেছে-সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে এবার সময় থেকে একটি সেকেন্ড বাদ দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে, যাকে বলা হচ্ছে “নেগেটিভ লিপ সেকেন্ড”।

বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে গ্লেসিয়ার বা হিমবাহ গলে যাওয়ায় পৃথিবীর ভরের ভারসাম্য পরিবর্তিত হচ্ছে। মেরুর বরফ গলে সমুদ্রপৃষ্ঠে ছড়িয়ে পড়ায় পৃথিবীর নিজ অক্ষে ঘূর্ণন আরও দ্রুত হচ্ছে। আবার কখনো এই গলনই সাময়িকভাবে ঘূর্ণন কমিয়ে দিতে পারে, যার কারণে বিজ্ঞানীরা পুরো বিষয়টি অত্যন্ত সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন।

যদিও সময়ের এমন সূক্ষ্ম পরিবর্তন সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে তেমন প্রভাব ফেলবে না। তবে স্যাটেলাইট, ইন্টারনেট সার্ভার, ব্যাংকিং, আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ও জিপিএস-এর মতো অত্যন্ত সময়নির্ভর প্রযুক্তি ব্যবস্থায় এর বড় প্রভাব পড়তে পারে। অনেক সফটওয়্যার লিপ সেকেন্ড যোগ করার জন্য প্রস্তুত থাকলেও বাদ দেওয়ার ধারণাটি তাদের প্রোগ্রামিং কাঠামোর বাইরে।

বিশ্ব সময় সংস্থা (আইইআরএস) এবং আন্তর্জাতিক সময়মান নির্ধারণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ২০২৯ সালের মধ্যে এক সেকেন্ড বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এমনকি অনেকে বলছেন, ২০৩৫ সালের মধ্যে লিপ সেকেন্ড ব্যবস্থাই পুরোপুরি বাতিল করে দেওয়ার বিষয়টি ভাবা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, অস্ট্রেলিয়ার টাইম স্ট্যান্ডার্ড কর্তৃপক্ষের বিজ্ঞানী ম্যাট কিং বলেন, ‘পৃথিবীর আচরণ বোঝা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। একদিকে গ্লোবাল ওয়ার্মিং, অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ গতিশক্তির প্রভাব-সবকিছু সময়কে প্রভাবিত করছে।’