ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে যেসব তথ্য জেনে রাখা জরুরি

ডা. নাজমুন নাহার
২২ জুলাই ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে যেসব তথ্য জেনে রাখা জরুরি

ডেঙ্গু একটি ভাইরাল জ্বর, যা Aedes aegypti ও Aedes albopictus নামক মশার কামড় থেকে ছড়ায়। এই মশাগুলো দিনে ও রাতে উভয় সময় কামড়ায়। সারাদিন মশাগুলো সাধারণত জনবসতিপ্রধান এলাকায় ঘুরে বেড়ায়। এই মশার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী বছরে ৩৯০ মিলিয়ন সংক্রমণ ঘটে। এর মধ্যে প্রায় ৯৬ মিলিয়ন ক্লিনিক্যাল সঠিকমতো ধরা পড়ে।

লক্ষণ : আকস্মিক উচ্চ জ্বর (40°C); মাথা, চোখের পেছনে, পেশি ও জয়েন্টে বেদনাদায়ক ব্যথা; বমি, ক্লান্তি, গায়ের লালচে ফুসকুড়ি; র‌্যাশ, এবং গুরুতর ক্ষেত্রে গ্যাস্ট্রিক বা রক্তপাতÑ ধমনীতে চাপ কমে যেতে পারে; ডেঙ্গু হেমোরেজিক শক ইত্যাদি।

নির্ণয় ও চিকিৎসা : এক্ষেত্রে যেসব পরীক্ষা ও চিকিৎসা জরুরি তা হলোÑ

রক্ত পরীক্ষা : প্লাটিলেট, হেমাটোক্রিট ও ভাইরাস শনাক্তকরণ ইত্যাদি। কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল নেই; মূলত সহায়ক চিকিৎসা হলোÑ তাপমাপ, বিশ্রাম, তরল গ্রহণ, প্যারাসিটামল (অ্যাসপিরিন, আইবুপ্রোফেন, ন্যাপ্রোক্সেন নয়) গ্রহণ।

সতর্কতা : ডিহাইড্রেশন, প্লাটিলেট কমে গেলে হাসপাতালের ভর্তি দরকার হতে পারে।

প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ : ঘরে জল জমতে দেবেন না। বাক্স, টায়ার, ফুলের গামলা পরিষ্কার রাখা প্রয়োজন। পোশাক ঢেকে পরুন। মশারি ও রেপেল্যান্ট ব্যবহার করুন।

সরকারি উদ্যোগ : One Health নজরদারিতে মশা নিয়ন্ত্রণ ও জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতো প্যাথোজেন নিরীক্ষা (বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে) ও Wolbachia দিয়ে মশা নিয়ন্ত্রণে পার্থক্য প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে ।

বাংলাদেশে বর্তমান অবস্থা : ২০২৫ সালের এই সময় পর্যন্ত অসংখ্য মানুষ যেমন ডেঙ্গুরোগে আক্রান্ত হয়েছে, তেমনি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ মারাও গিয়েছে। ভালো খবর হলো- মৃত্যুর হার অপেক্ষাকৃত কম। তবে সংক্রমণের পরিমাণ ব্যাপক বেড়েছে। সাধারণত জুলাই-সেপ্টেম্বরে সংক্রমণের ঋতু আর বাড়ছেও ব্যাপকভাবে। ২০২৩ সালে দেশজুড়ে প্রায় ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল এবং ১ হাজার ৭০৫ মৃত্যুবরণ করেছে, যা বাংলাদেশে ডেঙ্গুর ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেকর্ড।

ভবিষ্যতে করণীয় : ডেঙ্গুরোগ প্রতিরোধে নানা পদক্ষেপ এখনই নেওয়া উত্তম। এজন্য যা করতে হবে তা হলোÑ

দ্রুত তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ : ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় নজরদারি বাড়াতে হবে এবং প্লাটিলেট হেল্পলাইন চালু করে রাখতে হবে।

দ্রুত ডায়াগনস্টিক সুবিধা : প্রত্যন্ত ও গ্রামাঞ্চলে ক্লিনিক স্থাপন করে দ্রুত ডায়াগনস্টিক সুবিধা বাড়াতে হবে।

ঝড়ের আগে প্রস্তুতি : বর্ষা মৌসুম থেকে শুরু থেকে সচেতনতা অভিযান, পরিষ্কারের দিন, ডেঙ্গু ডে কর্মসূচি পালন করতে হবে।

বিকল্প প্রযুক্তি : Qdenga I Dengvaxia ভ্যাক্সিন প্রয়োগ করতে হবে।

ডেঙ্গু মোকাবিলায় তিন স্তরের দায়িত্ব জরুরি : ব্যক্তিগত, স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে সক্রিয় পদক্ষেপ।

পরিশেষে এ কথা বলব যে, বাংলাদেশে সংক্রমণ ব্যাপকভাবে বেড়ে যাচ্ছে। তবে মৃত্যু কিছুটা কম বলে আপাতত প্রতীয়মান হলেও এটা যে কোনো সময় বেড়ে যেতে পারে। তাই এ ব্যাপারে এখন থেকেই সবাইকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

লেখক : মেডিসিন বিশেষজ্ঞ

চেম্বার : আলোক হাসপাতাল লি.

হটলাইন : ১০৬৭২