প্রক্টর-ছাত্র উপদেষ্টাকে শাড়ি-চুড়ি দিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ

বেরোবি প্রতিনিধি
২০ জুলাই ২০২৫, ২০:০৮
শেয়ার :
প্রক্টর-ছাত্র উপদেষ্টাকে শাড়ি-চুড়ি দিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলেও বাস্তবে ভিন্নচিত্র লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ক্যাম্পাসজুড়ে ছাত্রদল ও শিবিরের বৈঠক, প্রোগ্রাম এবং বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের অভিযোগ উঠেছে। এসব কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ আর নিন্দা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শুধু তাই নয়, প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এবং ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরে শাড়ি ও চুড়ি উপহার দিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

আজ রবিবার বিকেল ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ গেইটে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর দপ্তর এবং ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরে শাড়ি ও চুড়ি উপহার দিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এসমং তারা নানান স্লোগান দিতে দেখা যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী শামসুর রহমান সুমন বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবে এই বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম সূতিকাগার। প্রশাসনের ১০৮তম সিন্ডিকেটে লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু সেই সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বিভিন্ন লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র সংগঠনের সদস্য ফরম বিতরণ শুরু করছে। এতে শিক্ষার্থীদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। আমরা চাই শিক্ষার্থীরা ন্যায্যতার ভিত্তিতে কথা বলবে, আর সেই লেজুড়রা তাদের গলা চেপে ধরবে। যেমনটা গলা চেপে ধরেছিলো আবু সাঈদকে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা শিক্ষার একটি সুষ্ঠু পরিবেশ চেয়ে সমুন আরো বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা মননশীলতার মধ্যে দিয়ে এগিয়ে যাবে। ছাত্র রাজনীতি গণতান্ত্রিক চর্চার জন্য ছাত্র সংসদ অনতিবিলম্বে কার্যকর করতে হবে। কোনো লেজুড়বৃত্তিক সংগঠনকে এই ক্যাম্পাসে দেখতে চাই না। যেসব সংগঠন শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করবে তারাই ছাত্র সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতির ইতিহাস আমরা দেখেছি। তারা সিট বাণিজ্য, শিক্ষার্থীদের নানাভাবে হয়রানি, র‍্যাগিং করেছে। আমরা গেস্টরুম কালচার থেকে বেরিয়ে আসতে চাই।’

ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী এস এম আশিক বলেন, ‘নোংরা রাজনীতির কারণে আমরা আবু সাঈদকে হারিয়েছি। পরিষ্কারভাবে আমরা জানিয়ে দিতে চাই—এই ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি কোনো স্থান হবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দেখেছি লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতিকে প্রশাসন প্রটোকল ও প্রশ্রয় দিচ্ছে বিধায় তারা এসব কার্যক্রম করার সাহস পাচ্ছে। আমরা প্রশাসনকে পরিষ্কারভাবে বলে দিতে চাই আপনারা শিক্ষার্থীদের দাবি, আকাঙ্ক্ষা নিয়ে কাজ করতে না পারলে আপনারা দায়িত্ব ছেড়ে দেন। যারা শিক্ষার্থীদের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে কাজ করবে—এমন প্রশাসনকেই আমরা চাই।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শওকাত আলী বলেন, ‘আমি এর আগেও ছাত্র সংগঠনগুলোকে ডেকেছি। তাদের জিজ্ঞেস করেছিলাম লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ, আপনারা এসব বিষয় জানেন না? তারা পরে ভুল বুঝতে পারে। তাদেরকে শোকজও করেছিলাম।’

তিনি আরও বলেন, ‘লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি কেউ করতে না পারে সেজন্য তিন সদস্যের একটা কমিটি গঠন করে দিয়েছি। তারা বিষয়গুলো দেখছে। এরপর প্রমাণস্বরূপ তাদের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুসারে ব্যবস্থা নিবো।’

এর আগে গত ২৮ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৮তম সিন্ডিকেট সভায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছে প্রশাসন। তবে সম্প্রতি বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের নতুন কমিটি করেছে। আজ রবিবার প্রকাশ্যে বেরোবি শাখা ছাত্রদলের নেতারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে সদস্য ফরম বিতরণকে কেন্দ্র করে বিতর্ক চলে। এর জেরে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে শাড়ি-চুড়ি উপহার দেয় তারা।