প্রেগন্যান্সিতে কোনো ধরনের সমস্যায় পড়ে গেলে যা করবেন

অধ্যাপক ডা. নাঈমা শারমিন হক
১৬ জুলাই ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
প্রেগন্যান্সিতে কোনো ধরনের সমস্যায় পড়ে গেলে যা করবেন

গর্ভাবস্থায় শরীরের কোষে কোষে অতিরিক্ত তরল জমে যায়। এ কারণে অনেকেরই পা ফোলাসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়। পা ফুলে যাওয়া সমস্যার নাম ইডিমা। এর প্রভাবই বেশি পড়ে পায়ে। গর্ভাবস্থায় স্বল্পমাত্রায় এ ধরনের পা ফুলে যাওয়া স্বাভাবিক, বিশেষ করে পায়ের গোড়ালি ও পাতায় এ সময় শরীরের কোষ অতিরিক্ত পানি ধরে রাখে। সাধারণত ৫০ থেকে ৮০ শতাংশ অন্তঃসত্ত্বা নারীর এ সমস্যা হয়। গর্ভাবস্থার শেষ কয়েক মাসে এমনটা দেখা যায়। কিন্তু পায়ে অতিরিক্ত পানি এলে, গর্ভবতীর ওজন অতিরিক্ত বাড়তে থাকলে এবং শিশুর নড়াচড়ায় হেরফের হলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

কোন সমস্যা হয় : সাধারনত একজন গর্ভবতীর প্রথম তিন মাসে প্রোজেস্ট্রেরন হরমোন লেভেল অতিরিক্ত বেড়ে যায়, সেই কারণে এ সময়টাতেও কারো কারো পায়ে এবং শরীরে পানি আসতে পারে। গর্ভাবস্থায় শিশুর আকার আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে প্রায় ৫০% বেশি রক্ত ও তরল উৎপাদিত হয়। চতুর্থ মাসের শুরু থেকে গর্ভাবস্থায় জরায়ুর আকার বাড়তে থাকে। গর্ভের শিশু যখন বড় হয়, তখন তার মাথার চাপে মায়ের নিম্নাঙ্গের যে শিরাগুলো দিয়ে রক্ত হৃদপি-ে প্রবাহিত হয় তা বাধাপ্রাপ্ত হয়। এর ফলে নিম্নাঙ্গ থেকে হৃদপি-ে রক্ত প্রবাহ কমে যায়। শিরা থেকে তরল বের হয়ে শরীরের টিস্যুতে জমা হয়। যার ফলে পায়ে পানি আসে বা ফুলে যায়। গর্ভাবস্থার আগে থেকেই উচ্চ রক্তচাপ বা গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট বা কিডনিতে অসুখ থাকলেও পায়ে পানি আসতে পারে। একটানা অনেকক্ষণ কাজ করা, খাবারে পটাশিয়ামের পরিমাণ কম থাকলেও এমনটা হয়। অতিরিক্ত ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় খাওয়া, খাবার বাড়তি লবণ খেলেও এমন হতে পারে।

যা করবেন : গর্ভাবস্থায় পায়ের ওপর ভর দিয়ে বেশীক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন না। শরীরের শিরার ওপর চাপ পড়তে পারে। ফোলা বেড়ে যেতে পারে। কিছুক্ষণ পর পর কিছু সময় বসে থাকুন। বসার সময় পা কিছু একটার ওপর তুলে রাখতে পারেন। আরামদায়ক জুতা ব্যবহার করুন। খাবার লবণের পরিমাণ কম রাখুন। অতিরিক্ত লবণ শরীরে পানি ধরে রাখে। প্যাকেটজাত খাবার খাবেন না। অতিরিক্ত সোডিয়াম কমাতে পটাশিয়ামসমৃদ্ধ খাবার, যেমন- কলা, অ্যাপ্রিকট, কমলা, মিষ্টিআলু, বিট ইত্যাদি খান। পর্যাপ্ত পানি পান করুন। শরীরের অতিরিক্ত পানি কমানোর জন্য পানি খাওয়া আশ্চর্যের মনে হলেও গর্ভাবস্থায় উপকারী। এতে শরীর হাইড্রেটেড থাকবে, অতিরিক্ত তরল প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বেড়িয়ে যাবে। তবে চিনিসমৃদ্ধ পানীয়, যেমন- সোডা বা প্যাকেটজাত জুস না খাওয়াই ভালো। নিয়মিত হাঁটাচলা বা হালকা ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন। তবে কোন ব্যায়াম গর্ভাবস্থায় উপযোগী, জেনে নিন। ঢিলেঢালা ও আরামদায়ক কাপড় পরার চেষ্টা করুন।

যখন অবহেলা করবেন না : পায়ের পাশাপাশি হঠাৎ করে হাতে, মুখে পানি আসা; সঙ্গে মাথাব্যথা করা বা ঝিমঝিম করা, চোখে ঝাপসা দেখা, বুকে ব্যথা হওয়া, শ্বাসকষ্ট হওয়া ও অনেকদিন ধরে কাশি থাকা। এক পায়ে পানি আসা বা ফুলে যাওয়া, সঙ্গে ব্যথা। গর্ভের শিশুর নড়চড়া কমে যাওয়া। শিশুর নড়াচড়া ১২ ঘণ্টায় অন্তত ১০-১২ বার না থাকা। পায়ে পানি আসার সঙ্গে অস্বাভাবিক কোনো লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। কেননা, এমতাবস্থায় যে কোনো সময় গর্ভবতী মায়ের রক্তচাপ বেশি থাকার জন্য খিঁচুনি শুরু হয়ে যেতে পারে, যা মা ও অনাগত সন্তান- দুজনের জন্যই মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ এবং জীবননাশও হতে পারে।


লেখক : ফেলো, ইন্ডিয়ান একাডেমি অব অবস্ অ্যান্ড গাইনোকোলোজি

জেড এইচ সিকদার ওমেন্স মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা

চেম্বার : মেডিনোভা মেডিক্যাল সার্ভিস লি: ইউনিট-২, ধানমন্ডি, ঢাকা।

হটলাইন : ০১৩০৯০১১৫২৯