সময়ে-অসময়ে শিশুর বিপদ-আপদ এবং অভিভাবকের করণীয়

ডা. ইমনুল ইসলাম ইমন
১৫ জুলাই ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
সময়ে-অসময়ে শিশুর বিপদ-আপদ এবং অভিভাবকের করণীয়

শিশুর অসুখ-বিসুখ দিনরাত যেন লেগেই থাকে। হঠাৎ করে নবজাতকের কান্না, পেট ব্যথা, কান ব্যথা, পিঁপড়া অথবা পোকামাকড়ের কামড়, নাক দিয়ে রক্ত পড়া, হাত-পা মচকানো, অ্যালার্জির কারণে সাদা শরীরে লাল দানা ইত্যাদি সমস্যার কারণে বাবা-মা উদ্বিগ্ন হন এবং চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। শিশু স্বাস্থ্য সম্পর্কে সাধারণ ধারণা থাকলে চিকিৎসকের কাছে না গিয়েও এসব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।

কান্না : খিদে পেলে, পেটব্যথা অথবা কানব্যথার কারণে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শিশুরা কান্নাকাটি করে থাকে। খিদে ও ব্যথার কান্নার ধরন খেয়াল করলেই সহজেই মা পৃথক করতে পারেন। খিদের কান্নার সময় শিশুরা থেকে থেকে কান্না করে। পাশাপাশি মুখ হাঁ করে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে। মা বুকের বা ফিডার দুধ দেওয়ামাত্র কান্নার অবসান হয়। অন্যদিকে ব্যথার কান্না সুতীব্র এবং একটানা চলতে থাকে। খাবার দিলেও কান্নার উপশম হয় না। পেটে গ্যাস বা কোষ্ঠকাঠিন্য হলে পেটব্যথার জন্যও শিশুকে কাঁদতে দেখা যায়।

পেটব্যথা : ডায়রিয়া, আমাশয় জীবাণু, জিয়ার্ডিয়ার জীবাণু, কৃমি ইত্যাদিতে শিশুর খাবারে অনীহা, বমি বমি ভাব, পেট ফেঁপে থাকা, পাতলা পায়খানা অথবা আমযুক্ত মলত্যাগ করতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে দুধ পরিবর্তন করলে, বুকের দুধ ছাড়িয়ে গরুর দুধ বা বাজারে প্রচলিত দুধ দিলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ সময় শিশুকে কাঁধের ওপর রেখে আলতো করে চাপড় দিলে গ্যাস বের হয়ে যায়, কান্নাও থেমে যায়। এছাড়া সিমেথিকোন জাতীয় পেটব্যথার ড্রপ ব্যবহার করলেও উপকার পাওয়া যায়। তবে পেটব্যথার জন্য গ্রাইপওয়াটার জাতীয় জিনিস খাওয়ানো উচিত নয়।

কানব্যথা : শিশুর ঠাণ্ডা লেগে কানের সংক্রমণ হলে, ময়লা জমলে, আঘাত পেলে কানব্যথা করতে পারে। এসব অসুবিধার চিকিৎসা ব্যবস্থা ভিন্ন ভিন্ন। তাই এ সময় কানে গরম তেল ব্যবহার করা নিষেধ। তবে কানে গরম সেঁক দেওয়া যেতে পারে। প্যারাসিটামল সিরাপ বয়স অনুযায়ী খাওয়াতে হবে। শিশু মুখ খুলে শ্বাস নিলে নাকের নরমাল স্যালাইন ড্রপ দিতে হবে, গোসলের সময় কানে যেন পানি না যায়, সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।

পিঁপড়া বা পোকামাকড়ের কামড় : শিশুর বিছানার চাদর, কাঁথা, জামা, ওয়াল ক্লথ ভালো করে দেখে নিতে হবে। পিঁপড়ার কামড়ে শিশুর দেহে চাকা চাকা লাল দানা ভেসে উঠে জ্বলতে থাকে। খাবারজনিত এলার্জি, যেমনÑ চিংড়ি, গরুর মাংস, বেগুন খেলে অথবা নতুন কোন পোশাক পড়লেও এমন লাল লাল চাকা চামড়ায় ভেসে উঠতে পারে। শিশুর প্রস্রাব-পায়খানার রাস্তা ভালো করে দেখতে হবে, যাতে পিঁপড়া বা পোকামাকড় আটকে না থাকে। এ সময় এন্টিহিস্টামিন সিরাপ বয়স অনুযায়ী খাওয়ালে দ্রুত ফল পাওয়া যায়।

হাত-পা মচকানো : অসাবধানতাবশত শিশুকে এক হাতে ধরে কোলে নিতে গেলে হাতের সংলগ্ন জয়েন্টের মাংসপেশি অথবা লিগামেন্ট ছিড়ে যেতে পারে অথবা হাড্ডিগুলো স্থানচ্যুত হতে পারে। সঙ্গে সঙ্গে বরফ সেঁক দিন, প্যারাসিটামল জাতীয় সিরাপ খাওয়ান এবং ডাক্তারের পরমার্শ নিন।

নাক দিয়ে রক্ত পড়া : হঠাৎ করে নাক দিয়ে রক্ত পড়তে ঘাবড়েন না। নাকে ঘা হলে এবং সেই ঘা খুঁটলে শিশুদের নাক দিয়ে রক্ত পড়ে। পাশাপাশি নাকে আঘাত পেলে, ঠাণ্ডাজনিত কারণে, রক্তের কোন অসুখের কারণেও নাক দিয়ে রক্ত পড়তে দেখা যায়। হঠাৎ করে নাক দিয়ে রক্ত পড়া শুরু হলে ঠাণ্ডা মাথায় যা করবেন তা হলোÑ শিশুর নাক দুটো দুই আঙ্গুলে চেপে ধরুন। বরফ সেঁক দিন নাকের ওপর। না কমলে তুলো গুটাল করে নাকের ছিদ্রে প্রবেশ করান।

শিশুর শ্বাস বন্ধ রাখা : হঠাৎ করেই সুস্থ শিশু কান্না করতে করতে শ্বাস বন্ধ করে ফেলতে পারে, হাত-পা শক্ত করতে পারে এবং এক পর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলতে পারে। এতে শিশুর ক্ষতি হওয়ার আশংকা নেই।

লেখক : অধ্যাপক, শিশুরোগ বিভাগ, বিএমইউ, ঢাকা

চেম্বার : আলোক মাদার এন্ড চাইল্ড কেয়ার, মিরপুর-৬, ঢাকা