করোনা ভাইরাস সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এবং সতর্ক থাকুন
করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ একটি সংক্রামক ব্যাধি, যা করোনাভাইরাস ২ (সার্স-কোভ-২) নামক এক ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণে হয়। চলতি বছর সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ করোনার নতুন দুই সাব-ভ্যারিয়েন্ট এক্সএফজি ও এক্সএফসি। বাংলাদেশে কোভিড-১৯-এ মৃত্যুর ঘটনা সামনে আসায় জনমনে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। চলতি বছর (২৯ জুন পর্যন্ত) মোট ৫৮৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে এবং ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
করোনা ভাইরাসের লক্ষণ : সংস্পর্শে আসার ২-১৪ দিন পর লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে এবং তীব্রতা পরিবর্তিত হতে পারে। এ রোগ নাক বা মুখ থেকে ছোট ছোট ফোঁটার মাধ্যমে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে ছড়ায়। সংক্রমিত হাত-মুখ-নাক ও চোখে লাগালেও আক্রান্ত হতে পারে। শুকনো কাশি-জ্বর-শ্বাসকষ্ট-গলাব্যথা-ক্লান্তি-নাকে গন্ধ না পাওয়া। নতুন ভেরিয়েন্টের ক্ষেত্রে অস্থিসন্ধির ব্যথা, মাথাব্যথা, গলাব্যথা, পিঠব্যথা, নিউমোনিয়ার লক্ষণ, খাওয়ার রুচি কমে যাওয়া ইত্যাদি।
পরীক্ষা : র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা, করোনা ভাইরাসের PCR পরীক্ষা, HR CT Scan of chest করা হয়। চিকিৎসার জন্য CRP, D-Dimer, Procalcitonin ও আরও পরীক্ষার প্রয়োজন হয়।
পজিটিভ হলে করণীয় : বাসায় অবস্থান করতে হবে। নিজেকে আইসোলেশনে (সঙ্গনিরোধ) রাখতে হবে জ্বর ছাড়ার ১ দিন পর পর্যন্ত। তার কাছ থেকে বাসার অন্য সদস্যরা দূরত্বে অবস্থান করবেন। ডাক্তারের পরামর্শে অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ সেবন করবেন। তাছাড়া প্যারাসিটামল, কফ সিরাপ খাওয়া যেতে পারে। অন্য মানুষের সামনে মাস্ক পরবেন। একজন চিকিৎসকের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখুন কিংবা স্বাস্থ্য পরামর্শের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হটলাইন ‘স্বাস্থ্য বাতায়ন ১৬২৬৩’ নাম্বারে ফোন করে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় পরামর্শ নিন। রক্তে অক্সিজেন মাত্রা- পালস অক্সিমিটার কাছে রাখুন। অক্সিজেনের পরিমাণ পর্যবেক্ষণ করুন।
আরও পড়ুন:
শীতে গর্ভবতী মায়েদের যত্ন
যখন হাসপাতলে যাবেন : শ্বাসকষ্ট, শরীরের অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়া, নিউমোনিয়া, অতিমাত্রায় কাশি, অতিমাত্রার জ্বর, শরীরে অস্বাভাবিক দুর্বলতা। এ ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হতে পারে। এ ছাড়া যাদের আগে থেকেই শ্বাসকষ্টজনিত রোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনির রোগ, হার্টের রোগ রয়েছে, গর্ভবতী নারী তাদেরও হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হতে পারে। বেশিরভাগ লোক (প্রায় ৮০%) বিশেষ চিকিৎসার প্রয়োজন ছাড়াই রোগ থেকে সেড়ে উঠেন।
চিকিৎসা :supportive-তরল ও লবণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ, উচ্চমাত্রার অক্সিজেন, অ্যান্টিবায়োটিক, ডেক্সামেথাসন, অ্যান্টি-ভাইরাল ওষুধ, রক্ত পাতলা রাখার ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। কিছু রোগীর ICU-এর প্রয়োজন হয।
প্রতিরোধে করণীয় : বদ্ধ ও ভিড় রয়েছে- এমন জায়গায় মাস্ক পরা খুব গুরুত্বপূর্ণ। হাঁচি বা কাশির সময় টিস্যু, কাপড় বা বাহু দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে রাখুন। ব্যবহৃত টিস্যু দ্রুত নিরাপদ স্থানে ফেলে দিন। নিয়মিত সাবান ও পানি দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে নিয়মিত হাত ধুয়ে নিন। সাবান না থাকলে অ্যালকোহল-ভিত্তিক হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন। আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে কমপক্ষে ৩ ফুট (১ মিটার) শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখুন, বিশেষ করে বয়স্ক ও অসুস্থ ব্যক্তিদের এ ধরনের স্থান এড়িয়ে চলা।
আরও পড়ুন:
জরায়ুমুখ ক্যানসারের লক্ষণগুলো জেনে রাখুন
টিকা গ্রহণ : টিকা সংক্রমণ এবং মারাত্মক রোগ ঠেকাতে সাহায্য করে। বর্তমানে করোনার সংক্রমণ বাড়লেও আতঙ্কিত না হয়ে সচেতনতা, ব্যক্তিগত সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
লেখক : অধ্যাপক ও বিভাগের প্রধান, মেডিসিন বিভাগ
বারডেম জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা
আরও পড়ুন:
শীতে মুলা কেন খাবেন?
চেম্বার : আলোক হেলথ কেয়ার, মিরপুর-১০, ঢাকা