এনএসইউতে ‘সোশ্যাল বিজনেস অ্যাকাডেমিয়া ডায়লগ’ ও তিন কেন্দ্র উদ্বোধন
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি (এনএসইউ) এবং ইউনুস সেন্টারের যৌথ আয়োজনে আজ রবিবার দিনব্যাপী ‘সোশ্যাল বিজনেস অ্যাকাডেমিয়া ডায়লগ’ ও ‘থ্রি জিরো ক্লাব কনভেনশন’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই অনুষ্ঠানের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক ছিল ইউনিভার্সিটির তিনটি নতুন কেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমিন সোনিয়া মুর্শিদ; নিযামী গঞ্জাভি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারের কো-চেয়ার এবং বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. ইসমাইল সেরাগেলদিন; প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বিষয়ক প্রধান সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ; নরওয়ের পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক সাবেক মন্ত্রী ও ইউএন এনভায়রনমেন্টের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এরিক সোলহেইম এবং নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজ ও সিটি ব্যাংক পিএলসি’র চেয়ারম্যান জনাব আজিজ আল কায়সার।
পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত ও জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। অনুষ্ঠানে সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুসের একটি বিশেষ ভিডিও বার্তা প্রদর্শিত হয়।
বার্তায় তিনি বলেন, ‘সোশ্যাল বিজনেস শুধু একটি ধারণা নয়, এটি এখন একটি সামাজিক আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশে সোশ্যাল বিজনেস চর্চার ক্ষেত্রে এনএসইউ দীর্ঘদিন ধরেই অগ্রণী একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সোশ্যাল বিজনেস ফোরাম আয়োজন ও উদ্ভাবনী সংস্কৃতি গড়ে তুলে এনএসইউ অন্যদের জন্য একটি শক্তিশালী উদাহরণ স্থাপন করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা থ্রি জিরোর একটি লক্ষ্য নিয়ে এগুচ্ছি, থ্রি জিরো হলো: শূন্য দারিদ্র, শূন্য বেকারত্ব, ও শূন্য কার্বন নিঃসরণ। এর মাধ্যমে আমরা সকলের জন্য বাসযোগ্য ও বৈষম্যহীন পৃথিবী গড়ে তুলতে চাই।’
প্রধান অতিথি নূরজাহান বেগম বলেন, ‘টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য আমাদেরকে থ্রি জিরো লক্ষ্য পূরণের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। মুনাফা ও ব্যক্তিগত স্বার্থের বাইরে এসে আমাদেরকে সামাজিক প্রভাব, পরিবেশগত টেকসইতা এবং জনগণের কল্যাণের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করাও আমাদের উন্নয়ন কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হওয়া উচিত।’
আজিজ আল কায়সার বলেন, ‘বিশ্ব আজ যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, তার জন্য প্রয়োজন সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী সমাধান। তাই সোশ্যাল বিজনেস ও থ্রি জিরোর ধারণা আজকের দিনে এতোটা প্রাসঙ্গিক। পথটা সহজ হবে না, কিন্তু সম্মিলিত দৃষ্টি ও অভিন্ন লক্ষ্যে আমরা সবকিছুই অতিক্রম করতে পারি।’
লামিয়া মোরশেদ বলেন, ‘এই আয়োজনের মূল প্রতিপাদ্য বিশ্বব্যাপী অগ্রাধিকারের সঙ্গে সঙ্গে অধ্যাপক ইউনুসের দর্শনকেও ধারণ করে। তাঁর কাজ পৃথিবীর লাখো মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে, আমি আশা করি এই অনুষ্ঠান সেই দৃষ্টিভঙ্গিকে আরও দূর পর্যন্ত এগিয়ে নিয়ে যাবে।’
এরিক সোলহেইম বলেন, ‘মানব ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো আমরা এমন অবস্থানে পৌঁছেছি যেখানে অর্থনীতি ও পরিবেশের মধ্যে কোনো সংঘাত নেই। উভয়কেই একসঙ্গে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব। বাংলাদেশ এই ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার পথে নেতৃত্ব দেওয়ার সক্ষমতা রাখে।’
আরও পড়ুন:
ইবির ইসলামের ইতিহাস বিভাগে তালা!
ড. ইসমাইল সেরাগেলদিন বলেন, ‘জ্ঞানই যথেষ্ট নয়, আমাদের প্রয়োজন প্রজ্ঞা। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যেখানে শিক্ষার্থীরা শৃঙ্খলাবোধ, সৃজনশীলতা ও নৈতিকতার দীক্ষা পায়। এমন শিক্ষা ব্যবস্থাই থ্রি জিরো অর্জনের জন্য একটি প্রতিশ্রুতিশীল প্রজন্ম গড়ে তুলবে। এই রূপান্তরের নেতৃত্ব দিতে এনএসইউ’র যথেষ্ট সামর্থ্য রয়েছে।’
শারমিন সোনিয়া মুর্শিদ বলেন, ‘সোশ্যাল বিজনেস লোভের ওপর নয়, বরং সহমর্মিতার ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। এটি দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের কাছ থেকে কেবল নেওয়ার কথা বলে না, বরং কীভাবে তাদের উন্নয়নে সহায়তা করা যায়, সেটাই ভাবনা। থ্রি জিরো-এর স্বপ্ন কোনো কল্পনা নয়, বরং সম্মিলিত মর্যাদা, অর্থবহ কর্মসংস্থান এবং একটি সুস্থ পৃথিবীর বাস্তব পথে যাত্রা।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ও গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল হান্নান চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘এই আয়োজনটি এনএসইউ’র আরেকটি মাইলফলক, যা বৈশ্বিক ও সামাজিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নৈতিক, মানবিক ও দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নেতৃত্ব গড়ে তোলার যাত্রাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আজ যেসব নতুন কেন্দ্র উদ্বোধন হলো, সেগুলোর মাধ্যমে আমাদের পাঠ্যক্রমে নৈতিকতা ও টেকসই চেতনার সংমিশ্রণ আরও সুসংহত হবে।’
অনুষ্ঠানটি শেষ হয় তিনটি কেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মাধ্যমে: এনএসইউ সোশ্যাল বিজনেস সেন্টার, এনএসইউ সোশ্যাল ইমপ্যাক্ট অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি সেন্টার, এবং এনএসইউ ক্লাইমেট অ্যান্ড ডিজাস্টার রেসিলিয়েন্স সেন্টার। এই কেন্দ্রগুলোর যাত্রা এনএসইউ’র শিক্ষাগত উৎকর্ষতা ও সামাজিক প্রভাব তৈরির পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে।