১৫ বছর পর বাড়ি ফিরে ছেলের মৃত্যুর খবর পেলেন বাবা
সৌদি প্রবাসী বাবা দুই বছর বয়সে একমাত্র ছেলেকে রেখে সুখের আশায় পাড়ি জমান সৌদি আরবে। ১৫ বছর পর সকালে বাড়ি ফিরে আসেন বাবা কামাল হোসেন। আর এদিনই সন্ধ্যা নামতেই ছেলে নুরউদ্দীনের মৃত্যুর খবর পেয়ে যেন দুনিয়া ভেঙ্গে পড়ল তার মাথার ওপর।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলায় ঢাকা-ফরিদপুর -বরিশাল মহাসড়কের ভাঙ্গা দক্ষিণপাড় বাস স্ট্যান্ড সংলগ্ন কুমার নদের সেতু থেকে পড়ে তার মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে। ছেলেটি এসএসসি পরীক্ষা শেষে সহপাঠী বন্ধুদের সঙ্গে ওই এলাকায় চিল্লায় (তবলিগ) গিয়েছিল।
নিহত নুরুদ্দিন (১৭) নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার মোহনগঞ্জ গ্রামের সৌদি প্রবাসী কামাল হোসেনের ছেলে। এবার সে মোহনগঞ্জ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল।
দুর্ঘটনায় নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেন ভাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আশরাফ হোসেন।
আরও পড়ুন:
ডেঙ্গুতে ৬ জনের মৃত্যু
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বাবা কামাল হোসেন একমাত্র ছেলে নুরুদ্দিন জন্মের দুই বছর বয়স রেখে ১৫ বছর পূর্বে পাড়ি জমান সৌদি আরবে। ছেলেটির বয়স এখন ১৭ বছর। ছেলেটি এবার এসএসসি পরীক্ষা শেষে বন্ধুদের সঙ্গে তবলীগ জামাতে এক চিল্লায় (৪০ দিনের জন্য) ইসলাম শিক্ষা ও দ্বীনের দাওয়াত দিতে ৩৬ দিন আগে বাড়ি থেকে বের হয়। এক চিল্লা শেষ হতে আর মাত্র বাকি ছিল ৪ দিন। তারপরেই বাবা ছেলের সঙ্গে দেখা হবে এই ছিল তাদের মনের বাসনা। তাদের সাক্ষাৎ হলো ঠিকই, তবে জীবিত নয়।
গতকাল মঙ্গলবার বাদ আসর ৫ বন্ধু মিলে ভাঙ্গায় গোল চত্বর দেখার জন্য বের হয়। মাগরিবের আজান হলে জামাত ধরতে ভাঙ্গা ঈদগাহ মারকাজ মসজিদের উদ্দেশ্যে দ্রুত হাঁটতে থাকে তারা। ৪ বন্ধুদের টপকিয়ে অনেক দূর পর্যন্ত এগিয়ে যায় নুরুদ্দিন। হঠাৎ অন্ধকারে সেতু থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হয় সে। অন্য বন্ধুরা দৌড়ে এসে স্থানীয়দের সহায়তায় নুরুদ্দীনকে মুমূর্ষ অবস্থায় ভাঙ্গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে নুরুদ্দিনের মৃত্যু হয়।
এ বিষয়ে নুরুদ্দিনের বন্ধু মহাসিন বলে, ‘নুরুদ্দিনসহ আমরা ৫ বন্ধু এসএসসি পরীক্ষা শেষ করে নেত্রকোনা থেকে ভাঙ্গা মারকাজ মসজিদে আসি। সেখান থেকে মুরুব্বীরা আমাদেরকে চুমুরদি ইউনিয়নের বিভিন্ন মসজিদে ইসলামের দাওয়াত দিতে পাঠান। আমরা বর্তমান পূর্ব সদরদী মাতুব্বর বাড়ি জামে মসজিদে অবস্থান করি। গতকাল মঙ্গলবার বাদ আসর আমরা ৫ বন্ধু ভাঙ্গায় ঘুরতে আসি। মাগরিবের আযানের সময় হলে দ্রুত ঈদগাহ মসজিদের দিকে মাগরিবের জামাত ধরতে একা একাই দ্রুত গতিতে হাঁটতে থাকে সে। হঠাৎ সেতু থেকে নুরুদ্দিন নিচে পড়ে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যায় সে।’
মহাসেন আরও বলে, ‘নুরুদ্দিন মেধাবী ছাত্র ছিল। পঞ্চম শ্রেণি থেকেই নামাজি ছিল সে। ওর উদ্বুদ্ধতেই আমরা চিল্লায় দ্বীনের পথে বের হয়েছি। অথচ কিভাবে কী হয়ে গেল? আল্লাহপাকের ফয়সালা বুঝে উঠতে পারছিনা। আমাদের চিল্লা শেষ হতে আর মাত্র বাকি ছিল ৪ দিন। এরপরেই আমরা সবার বাড়ি ফিরে যাওয়ার কথা। নুরুদ্দিন ফিরল ঠিকই, কিন্তু লাশ হয়ে। আমরা কী বলে সান্ত্বনা দেব ওর বাবা মাকে?’
এ বিষয়ে ভাংগা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আশরাফ হোসেন জানান, নুরুদ্দিন ঘুরতে গিয়ে ব্রিজ থেকে পড়ে দুর্ঘটনায় নুরুদ্দিনের মৃত্যু হয়। তার মরদেহ বিনা ময়নাতদন্তে তার পরিবারের কাছে রাতেই হস্তান্তর করা হয়েছে।