শিশু যদি কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যায় ভোগে তাহলে যা করবেন

অধ্যাপক ডা. সুরাইয়া বেগম
২৫ জুন ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
শিশু যদি কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যায় ভোগে তাহলে যা করবেন

শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য একটি সাধারণ সমস্যা। প্রায় ৩০ শতাংশ শিশুর মধ্যে এ সমস্যা দেখা যায়। মাতৃদুগ্ধ পান করা শিশু সপ্তাহে কমপক্ষে ১ বার এবং অন্য শিশুরা প্রতি ২-৩ দিনে ১ বার মলত্যাগ করা একেবারেই স্বাভাবিক বলে ধরে নেওয়া হয়। কোষ্ঠকাঠিন্য দুধরনের- ফাংশনাল ও অর্গানিক। প্রায় ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রে ফাংকশনাল কোষ্ঠকাঠিন্য হয় এবং এক্ষেত্রে কোনো মেডিক্যাল বা সার্জিক্যাল কারণ থাকে না। এক বছরের কম বয়সী শিশুর ক্ষেত্রে গত এক মাসে এবং এক বছরের বেশি বয়সীর ক্ষেত্রে গত দুই মাসের মধ্যে উল্লিখিত দুই বা ততোধিক সমস্যা থাকলে ফাংকশনাল কোষ্ঠকাঠিন্য বলা হয়।

ফাংকশনাল কোষ্টকাঠিন্যের কারণ : শিশুকে শক্ত খাবার শুরু করার পর এ সমস্যা দেখা দিতে পারে। ফাইবারযুক্ত খাবার, যেমন- ফলমূল ও শাকসবজি অপর্যাপ্ত গ্রহণ। পর্যাপ্ত পানি পান না করা। ফাস্টফুড ও অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া। টয়লেট প্রশিক্ষণ না দেওয়া এবং উপযুক্ত টয়লেটের ব্যবস্থা না থাকা। আয়রন বা ক্যালসিয়াম জাতীয় ওষুধ সেবন।

অর্গানিক কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ : মেডিক্যাল হাইপোথাইরয়েড, হাইপারক্যালসেমিয়া, সিস্টিক ফাইব্রোসিস। সার্জিক্যাল হার্সপ্রান্ক ডিজিজ, পরিপাকতন্ত্র বা মেরুদ-ের জন্মগত ত্রুটি ইত্যাদি। শুরুতে শিশুরা মল আটকে রাখে। ফলে মল শক্ত হতে থাকে। পেটে মল ক্রমে জমা হতে থাকে। এর পর মলত্যাগ করতে গেলে শক্ত মল বের হওয়ার সময় মলদ্বার ছিঁড়ে যায়। ফলে শিশুরা ভয়ে মলত্যাগ করতে চায় না। এতে দীর্ঘমেয়াদি কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে।

শিশুর কোষ্টকাঠিন্যের লক্ষণ : প্রতি সপ্তাহে তিনবারের কম মলত্যাগ করা, শক্ত ও শুষ্ক মলত্যাগ করা, ব্যথা অনুভূত হওয়া, পেট ফুলে যাওয়া, পেটের ভেতর বা মলদ্বারে শক্ত মলের উপস্থিতি ইত্যাদি। প্রস্রাবের ইনফেকশনের সঙ্গে কোষ্ঠকাঠিন্যের সম্পর্ক রয়েছে। ফলে প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া এবং ঘনঘন প্রস্রাবের সমস্যাও থাকতে পারে।

শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্যের ক্ষেত্রে বিপজ্জনক লক্ষণ : বয়স ৬ সপ্তাহের কম, জন্মের ২৪-৪৮ ঘণ্টা পরেও কালো পায়খানা না হওয়া, ওজন কমে যাওয়া, ঘনঘন বমি হওয়া, পেটে চাকা অনুভূতি হওয়া, পেট ফুলে যাওয়া, মলে রক্ত দেখা দেওয়া ইত্যাদি।

চিকিৎসা : আঁশযুক্ত খাবার, যেমন- ফলমূল ও শাকসবজি গ্রহণ, পর্যাপ্ত পানি পান করা, শিশুকে খেলাধুলায় উৎসাহ প্রদান, টয়লেট প্রশিক্ষণ, খাবার গ্রহণের আধাঘণ্টার মধ্যে প্রতিদিন টয়লেটে বসানো, ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী মল নরম করার ওষুধ ব্যবহার।

প্রতিরোধের উপায় : সুষম খাদ্যগ্রহণ, পর্যাপ্ত পানি পান, খেলাধুলায় উৎসাহ প্রদান, টয়লেটের অভ্যাস ইত্যাদি।

যা মনে রাখতে হবে : শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য একটি সাধারণ সমস্যা। যদি এটি দীর্ঘস্থায়ী হয় বা বিপজ্জনক লক্ষণ দেখা দেয়, তা হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরার্মশ গ্রহণ করবেন।

লেখক : শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ এবং এন্ড্রোক্রাইনোলজিস্ট

চেম্বার : আলোক মাদার অ্যান্ড চাইল্ড কেয়ার, মিরপুর-৬, ঢাকা

হটলাইন : ১০৬৭২