রাজনৈতিক পরিচয় প্রমাণে বিএনপি দেখাল ছবি, জামায়াতের কাছে ভিডিও

কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি
১৫ জুন ২০২৫, ১৯:৫৮
শেয়ার :
রাজনৈতিক পরিচয় প্রমাণে বিএনপি দেখাল ছবি, জামায়াতের কাছে ভিডিও

আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে আপন দুই ভাই নিহত হয়েছেন। তারা দুজন জামায়াত নাকি বিএনপির কর্মী, তা নিয়ে দুই দলের নেতাকর্মীরা ভিন্ন দাবি করছেন।

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার জামালা ইউনিয়নে নিহত দুজন জামায়াতের কর্মী বলে দাবি তুলেছে স্থানীয় বিএনপি। তবে জামায়াত বলছে, ওই দুজন বিএনপির কর্মী ছিলেন।

নিহত দুজন জামায়াতের কর্মী—প্রমাণ হিসেবে একটি ছবির কথা জানায় বিএনপি। তবে জামায়াত প্রমাণ হিসেবে নিহতের ভাইয়ের বক্তব্য তুলে ধরে। একই সঙ্গে বিএনপির প্রতিবাদ সমাবেশের ভিডিও প্রমাণ হিসেবে রয়েছে বলেও জানায় জামায়াত।

জানা যায়, সামাজিক আধিপত্য বিস্তার নিয়ে জামাল ইউনিয়নের বিএনপি নেতা নজরুল ইসলামের সঙ্গে দলটির অপরপক্ষের আরিফ, লিটন, বুলু ও আশরাফের সমর্থকদের মধ্যে দীর্ঘ দিন বিরোধ চলে আসছে। এর জের ধরে গত ১ জুন সকালে ইউনিয়নের নাকোবাড়িয়া গ্রামে উভয়পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এতে অন্তত পাঁচজন আহত হন।

পরে আহতদের উদ্ধার করে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। তাদের মধ্যে মহব্বত হোসেন নামের একজনের অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। তার বড় ভাই ইউনুছ আলীসহ আরও চারজন আহত হন। ঘটনার ৩ দিন পর ইউনুছ আলী রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

এ ঘটনার পর থেকেই নিহত দুই ভাইকে নিয়ে দায় এড়াতে শুরু হয়েছে বিএনপি ও জামায়াতের ঠেলাঠেলি। নিহতদের জামায়াত কর্মী বলে বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হলেও গতকাল শনিবার সকালে পাল্টা সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা জামায়াত সেই দাবি অস্বীকার করেছে। 

এর আগে গত ১১ জুন উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, নিহতরা জামায়াতকর্মী। দীর্ঘ দিন তারা জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। প্রমাণ হিসেবে জামায়াতের একটি অনুষ্ঠানে নিহত ইউনুছ আলীর উপস্থিতির ছবি তুলে ধরা হয়।

শহরের নলডাঙ্গা সড়কের কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজের দলীয় কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পড়েন উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ইলিয়াস রহমান মিঠু।

গতকাল শনিবার সকালে কালীগঞ্জ উপজেলা শহরের বাকুলিয়ায় জামায়াতের দলীয় কার্যালয়ে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপজেলা জামায়াতের আমির আব্দুল হক মোল্লা বলেন, ‘নিহত মতব্বত আলী ও ইউনুছ আলী কখনো জামায়াতের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না।’

এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা এবং হত্যাকারীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দাবি জানিয়ে জামায়াত নেতা বলেন, ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কখনোই হত্যার রাজনীতি করে না। কিন্তু গত ১১ জুন উপজেলা বিএনপি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে যগ্ম আহ্বায়ক ইলিয়াস রহমান মিঠু নিহত ইউনুছ আলীকে জামায়াত কর্মী ও সন্ত্রাসী বলে দাবি করেন। অথচ বিএনপি কর্মী হত্যাকাণ্ডের পর বিএনপির জেলা ও উপজেলার একাধিক শীর্ষ নেতা নিহত ইউনুছ আলীকে বিএনপির কর্মী বলে উল্লেখ করেন। যার ভিডিও আমাদের কাছে সংরক্ষিত আছে বলে উল্লেখ করা হয়।’

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রতিবাদ সমাবেশে নিহতের ভাই ইয়াকুব আলী বিশ্বাস বলেন, ‘আমার ভাই বিএনপি কর্মী হওয়ায় আওয়ামী লীগের ভয়ে ১৬ বছর পালিয়ে ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দেশে এসে তার দল বিএনপি সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হয়েছে।’

লিখিত বক্তব্যে উপজেলা জামায়াতের আমির বলেন, ‘একজন ব্যক্তি ইচ্ছা করলেই জামায়াতের কর্মী হতে পারে না। জামায়াতের কর্মী হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট সিলেবাস ও কর্ম প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে আসতে হয়। কোনো সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ বা এমন কোনো ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ আছে—এমন ব্যক্তি জামায়াতের কর্মী হওয়ার ন্যূনতম কোনো সুযোগ নেই। অথচ সংবাদ সম্মেলনে ইলিয়াস রহমান মিঠু বারবার তাদের দলীয় কর্মীকে জামায়াতের কর্মী বলে প্রচার করার চেষ্টা করেন। এর মধ্যদিয়ে জামায়াতকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেন।’

ওই সংবাদ সম্মেলন থেকে বিএনপির বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায় উপজেলা জামায়াত।