এনসিপির পরিচয়ে ছাত্রলীগ নেতাকে অপহরণ, আইফোন ও টাকা আদায়

শ্রীপুর(গাজীপুর)প্রতিনিধি
১১ জুন ২০২৫, ১৬:২০
শেয়ার :
এনসিপির পরিচয়ে ছাত্রলীগ নেতাকে অপহরণ, আইফোন ও টাকা আদায়

গাজীপুরের শ্রীপুরে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পরিচয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা আল রিয়াদ আদনান অন্তরকে অপহরণ করে একদল যুবক। অপহরণের পর রাতভর নির্যাতন চালিয়ে তাকে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। পরে পাঁচ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ও একটি আইফোন নিয়ে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।

অপহৃত আল রিয়াদ আদনান অন্তর (৩০) টঙ্গী এলাকার বাসিন্দা। তিনি শ্রীপুর উপজেলার কড়ইতলা গ্রামের ফালানের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন এবং ব্যবসা করতেন। অন্তর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক ছিলেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর স্ত্রী ইসরাত জাহান আঁখি আজ বুধবার দুপুরে শ্রীপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, গত ২৮ মে রাত ৯টার দিকে উপজেলার মাওনা আ. মালেক মাস্টার কমপ্লেক্সের সামনে থেকে অন্তরকে অপহরণ করে কড়ইতলা গ্রামের উজ্জ্বল হোসাইন (২২), মুলাইদ গ্রামের আলিফ মোড়ল (২০), টেপিরবাড়ি গ্রামের কাইফাত মোড়ল (২৪), মারুফ খান (২২), মিঠুনসহ (২০) মোট ১৩ জন যুবক। অপহরণকারীরা অন্তরকে একটি অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে এবং তার পরিবারের কাছে ফোন করে নিজেদের এনসিপি কর্মী পরিচয় দেয়। তারা বলে, ‘পুলিশে গেলে তোদের ঝুলিয়ে রাখব। দেখসনাই কিভাবে পুলিশ-জনগণ মেরে ঝুলিয়ে রেখেছি। কেউ বিচার করতে আসবে না। তোদের পাশে কেউ থাকবে না।’

ভুক্তভোগীর স্ত্রী ইসরাত জাহান আখিঁ জানান, প্রথমে তারা ৩০ লাখ টাকা দাবি করে এবং নির্যাতনের আওয়াজ ফোনে শুনিয়ে ভয়ভীতি দেখায়। প্রাণের ভয়ে প্রথমে দুই লাখ টাকা পাঠানো হয়। পরে আরও তিন লাখ ৪৫ হাজার টাকা ও অন্তরের ব্যবহৃত আইফোন ১৬ প্রো ম্যাক্স মোবাইল ফোন দিয়ে মুক্তি মেলে। ২৯ মে রাত ১০টার দিকে তাকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় এমসি বাজার-মেম্বারবাড়ি সড়কের একটি নির্জন স্থানে ফেলে রেখে যায় অপহরণকারীরা। ঘটনার পর ভিকটিম পরিবার এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায় নিরাপত্তার কারণে।

এদিকে অভিযুক্ত আলিফ মোড়ল তার নিজের ফেসবুক পোস্টে ভুল স্বীকার করে লেখেন, ‘ছাত্রলীগের এই লোক হাসনাত আব্দুল্লাহ ভাইয়ের হামলাকারী–এ জন্য আমরা তাকে এমসি বাজার/তেলিহাটিসহ বিভিন্ন স্থানে নিয়ে মারধর করি। সত্যি বলতে আমি নিজে বাইকে করে গিয়ে তার বাবার কাছ থেকে দুই দফায় মোট ৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ও আইফোন ১৬ প্রো ম্যাক্সের বক্স নিয়ে আসি।’

পোস্টে তিনি আরও লেখেন, ‘আমি ভুল বুঝেছি, আমাকে ক্ষমা করবেন। আর জীবনে এমন করব না।’

এনসিপির শ্রীপুর উপজেলার আহ্বায়ক প্রার্থী আবু রায়হান মেজবাহ বলেন, ‘অভিযুক্তরা আমাদের দলের কেউ নয়। পুলিশকে আমরা বিষয়টি জানিয়েছি। আইনগত ব্যবস্থায় আমরা সহযোগিতা করব। সাংবাদিকদের বলেছি আপনারা নিউজ করতে পারেন। কোন তথ্য প্রয়োজন হলে আমরা দেব। এনসিপি কখনো অন্যায়কে সমর্থন করে না।’

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল বারিক জানান, ‘আমরা অভিযোগ পেয়েছি। ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত জেনে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’