ছাত্রদলের কমিটি বাতিলের দাবিতে সড়ক অবরোধ, সাবেক সভাপতির ওপর হামলা
শরীয়তপুর জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার পর থেকেই একটি পক্ষ কমিটি বাতিলের দাবিতে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করে আসছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত তৃতীয় দিনের মতো জেলা শহরের প্রধান সড়কের চৌরঙ্গী মোড়ে তারা বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেন। এসময় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হলে চালক, যাত্রী ও পথচারীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
এদিকে শরীয়তপুর সরকারি কলেজের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় জেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ভিপি রুহুল আমিন মুন্সির ওপর হামলা চালায় বিক্ষোভকারীরা।
স্থানীয় সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির ৩৫ সদস্যের শরীয়তপুর জেলা আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেন। কমিটিতে এইচএম জাকিরকে আহ্বায়ক এবং সোহেল তালুকদারকে সদস্য সচিব করা হয়।
এছাড়া ১৬ জনকে যুগ্ম আহ্বায়ক এবং ১৭ জনকে সদস্য করা হয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে কেন্দ্রীয় দপ্তরে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই কমিটি ঘোষণার পর থেকেই শহরে বিক্ষোভ শুরু করে জেলা ছাত্রদলের একটি অংশ। একই দিন বিকেলে ছাত্রদলের দুপক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হন।
পরদিন বুধবারও শরীয়তপুর-ঢাকা সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেন তারা। ফলে ফের তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় বিক্ষোভকারীদের।
এরই ধারাবাহিকতায় আজও চৌরঙ্গী মোড়ে দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করেন তারা। ফলে যানজটের কারণে সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েন। পুলিশ হস্তক্ষেপ করে যান চলাচল স্বাভাবিক করে। বিক্ষোভ শেষে একটি মিছিল নিয়ে তারা শরীয়তপুর সরকারি কলেজের দিকে যান।
এই সময়েই কলেজের সামনে দিয়ে স্ত্রীসহ মোটরসাইকেলে বাড়ি ফেরার পথে হামলার শিকার হন জেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ভিপি রুহুল আমিন মুন্সি। হামলাকারীরা তার মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়।
পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠান। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
রুহুল আমিন মুন্সির ওপর হামলার প্রতিবাদে বিএনপি ও জেলা ছাত্রদলের একাংশ তাৎক্ষণিকভাবে শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেন।
এ বিষয়ে ভিপি রুহুল আমিন মুন্সির স্ত্রী অ্যাডভোকেট মুনিরা আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামী আমাকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। হঠাৎ বিক্ষোভকারীরা তার ওপর হামলা চালায় এবং মোটরসাইকেলটি পুড়িয়ে দেয়। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে ঢাকা নিয়ে যাচ্ছি। আমি এ ঘটনার বিচার চাই এবং আইনি পদক্ষেপ নেব।’
এ বিষয়ে জেলা ছাত্রদলের সদস্যসচিব সোহেল তালুকদার বলেন, ‘যারা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতির ওপর হামলা করতে পারে, তারা ছাত্রদলের কেউ হতে পারে না। যারা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও গুমলীগের লোকজন নিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাসহ সাংগঠনিক ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।’
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সরদার এ কে এম নাসির উদ্দীন কালু বলেন, ‘ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি বাতিলের দাবিতে একটি পক্ষ বিক্ষোভ করছে। আমরা বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি। তবে যারা সড়ক অবরোধ করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছে এবং যারা ফৌজদারি অপরাধে জড়িত, তাদের অবশ্যই বিচার হওয়া উচিত।’
তবে রুহুল আমিন মুন্সীর ওপর হামলার বিষয়ে বিক্ষোভকারীদের কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি, তাদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা সাড়া দেননি।
আরও পড়ুন:
সাকিবকে নিয়ে যা বললেন ওবায়দুল কাদের
পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘ছাত্রদের কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে একটি পক্ষ আজও শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে সড়ক অবরোধ করে। এতে সড়কের দুই পাশে যানজটের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করি।’
ওসি আরও বলেন, ‘বিএনপি নেতা রুহুল আমিন মুন্সির ওপর হামলার খবর পেয়েছি। তবে এখনও কেউ অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’