বাংলাদেশি প্রযুক্তির অনন্য অর্জন, কনভেতে হল জি২০-র সিডসসা সভা
প্রযুক্তি দুনিয়ায় বাংলাদেশি পণ্যের এমন দাপট আগে দেখেনি কেউ। বিশ্বখ্যাত জুম, গুগল মিট কিংবা টিমস নয়, দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশের ‘কনভে’তে হয়েছে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের জোট জি২০-এর সিডসসা সভা।
দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রপতি এইচ. ই. সিরিল রামাফোসা’র নেতৃত্বে কনভের ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে ‘সাসটেইনেবল ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট সিম্পোজিয়াম (সিডসসা)-২০২৫ সভায় অংশ নিয়েছেন ২৭ দেশের মন্ত্রী, কূটনীতিক, নীতিনির্ধারক এবং বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিরা।
সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে গত ২৬ ও ২৭ মে। কনভে এই আন্তর্জাতিক সিম্পোজিয়ামের অফিসিয়াল ভিডিও কনফারেন্সিং স্ট্রিমিং পার্টনার। আর কনভে’র এই মাইলফলক সাফল্য বিশ্বের কাছে প্রযুক্তি সক্ষমতার বিচারে নতুন বাংলাদেশকে পরিচয় করিয়েছে।
বাংলাদেশের বুয়েটসহ শীর্ষ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ প্রকৌশলীদের তৈরি এই ‘কনভে’ কেবল একটি ভিডিও কনফারেন্সের অ্যাপ বা সেবা নয়, বরং একে বলা যায় পূর্ণাঙ্গ, নিরাপদ ও স্কেলেবল অফিস কোলাবোরেশন সল্যুশন, যা দেশীয় উদ্ভাবনে বৈশ্বিক মানের সক্ষমতার প্রমাণ দিল।
কনভের ডেভেলপমেন্টের সঙ্গে যুক্ত সফটওয়্যার প্রকৌশলী আল আমরু বিল মারুফ আমাদের সময় কে বলেন, বৈশ্বিক গুরুত্বপূর্ণ এই সভার স্ট্রিমিং পার্টনার হিসেবে কনভে উচ্চমানের ভিডিও সম্প্রচার, রিয়েল-টাইম মাল্টিল্যাঙ্গুয়াল ট্রান্সক্রিপশন, এবং ভার্চুয়াল অংশগ্রহণের সুবিধা প্রদান করছে। রাষ্ট্রপতির উদ্বোধনী ভাষণ দিয়ে শুরু হওয়া এই দুই দিনের সভায় কনভে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিগত ভূমিকা পালন করছে।
তিনি বলেন, কনভের যে প্রমিস, তা খুব কম পণ্যেরই আছে। কনভে শুধু আমাদের দেশের জন্য রেলেভ্যান্ট এমন না, এই প্রডাক্টের পুরো বিশ্বে ছড়ানোর প্রমিস আছে। জুম, মিটের কম্পিটিটর হবার প্রমিস আছে। কনভে এখন আফ্রিকায়, আমেরিকায়, অস্ট্রেলিয়ায়। কিন্তু কনভের ডেভেলপার আমরা বাংলাদেশে।
উল্লেখ্য, কনভে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান সিনেসিস আইটির একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবন।
সিনেসিস আইটির চিফ বিজনেস অফিসার এএসএম নুরুন নবী বলেন, সিডডসার মতো এতো বড় সভা রিয়েল টাইমে ইংরেজি, বাংলা, ফরাসি, পর্তুগিজ, এবং স্প্যানিশসহ পাঁচটি ভাষায় ট্রান্সক্রাইব করে কনভে বিশ্বজনীন অংশগ্রহণকে আরও সহজ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করে তুলেছে। বাংলাদেশের প্রযুক্তি বিশ্বের মঞ্চে যে জায়গা করে নিচ্ছে।
তিনি বলেন, দেশীয় প্রযুক্তির অগ্রযাত্রায় সিনেসিস আইটি অসামান্য ভূমিকা রেখে চলেছে, যা তাদের অর্জিত বহু আন্তর্জাতিক পুরস্কারে প্রতিফলিত হয়। সিনেসিস আইটি বিটিআরসির জন্য তৈরি সিবিভিএমপি (সেন্ট্রাল বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন অ্যান্ড মনিটরিং প্লাটফর্ম) প্রকল্প ২০১৯ সালে অর্জন করে আইটিইউ এক্সিলেক্স অ্যাওয়ার্ড, ২০২১ সালে পায় ডব্লিউএসআইএস চ্যাম্পিয়ন অ্যাওয়ার্ড এবং ২০২৪ সালে অ্যাপিকটা চ্যাম্পিয়নের মত আন্তর্জাতিক পুরষ্কার পায়।
এছাড়াও করোনা মহামারিকালে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবস্থাপনায় অনন্য অবদানের জন্য সিনেসিস আইটি ২০২০ সালে অর্জন করে উইটসা গ্লোবাল এক্সিলেন্স চ্যাম্পিয়ন অ্যাওয়ার্ড, যা বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের সক্ষমতা ও শ্রেষ্ঠত্বের উজ্জ্বল প্রমাণ। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে প্রতিষ্ঠানটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ডিজিটাল প্রকল্প যেমন— ই-রিটার্ন (অনলাইন রিটার্ন সাবমিশন) এবং ই-টিআইএন (অনলাইন ট্যাক্স রেজিস্ট্রেশন) বাস্তবায়নে অসাধারণ সফলতা অর্জন করেছে।
কনভে সুবিধাসমূহ:
১- ভিডিও কনফারেন্স হোস্টিং ও নিয়ন্ত্রণ- উন্নত কন্ট্রোল প্যানেল দিয়ে সহজেই মিটিং আয়োজন ও পরিচালনা।
২- টিম ও গ্রুপ ম্যানেজমেন্ট- অফিস বা প্রজেক্টভিত্তিক আলাদা গ্রুপ গঠন ও ব্যবস্থাপনা।
৩- ইন্টিগ্রেটেড চ্যাট ও টাস্ক ম্যানেজমেন্ট : মিটিং চলাকালীন বা পরবর্তী সময়ে দলের সদস্যদের সাথে চ্যাট এবং টাস্ক নির্ধারণ ও ফলোআপ।
৪- ক্লাউড স্টোরেজ ও ফাইল শেয়ারিং : দলীয় কাজের জন্য প্রয়োজনীয় ফাইল সহজেই সংরক্ষণ ও শেয়ার করার ব্যবস্থা।
আরও পড়ুন:
যে গ্রহে হয় বালুবৃষ্টি
৫- রিয়েল টাইম স্ক্রিন শেয়ারিং- লাইভ প্রেজেন্টেশন বা ডেমো প্রদর্শনের জন্য স্ক্রিন শেয়ারিং সুবিধা।
৬- ডিজিটাল হোয়াইটবোর্ড : ক্রিয়েটিভ ও ইন্টারঅ্যাক্টিভ আলোচনার জন্য ভার্চুয়াল হোয়াইটবোর্ড।
৭- এআইভিত্তিক অটো মিটিং মিনিটস ও ট্রান্সক্রিপশন- বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে মিটিং নোট এবং ট্রান্সক্রিপশন তৈরি।
৮- স্পিকার আইডেন্টিফিকেশন (বাংলা ও ইংরেজি)- কে কখন কথা বলেছে, তা শনাক্ত করার সুবিধা।
৯- বহুভাষার ট্রান্সক্রিপশন সাপোর্ট : বিভিন্ন ভাষায় মিটিং রেকর্ড ও বিশ্লেষণ।
১০- কম ব্যান্ডউইথে কার্যকর মিটিং সুবিধা : নিম্নগতির ইন্টারনেটেও নির্বিঘ্নে ও মানসম্মতভাবে চলবে ভার্চুয়াল মিটিং।
১১- বিগ মিটিং ফিচার- একসঙ্গে পাঁচ হাজারের বেশি অংশগ্রহণকারীর ভার্চুয়াল সভা আয়োজন, শিগগিরই যা বাড়ছে দশ হাজারে।
আরও পড়ুন:
এআই টিম ভেঙে দিল মেটা
১২- এআই অ্যানালিটিকস ও অটোমেটেড রিপোর্টস- মিটিং পারফরম্যান্স ও কার্যকারিতা মূল্যায়নের জন্য ইনবিল্ট ডেটা অ্যানালাইসিস সিস্টেম।
১৩- উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থা বা অ্যাডভান্স সিকিউরিটি- স্পর্শকাতর সংস্থার জন্য প্রয়োজনীয় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও এনক্রিপশন সাপোর্ট।
১৪- ক্লাউট ও অন-প্রিমিস হোস্টিং অপশন : চাহিদা অনুযায়ী ক্লাউড বা নিজস্ব সার্ভারে ইনস্টলেশন, ডেটা রেসিডেন্সি ও স্যাভেরেইন্টি নিশ্চিত।