৩ লক্ষাধিক টাকা ভাড়া আদায়ে জমা মাত্র ৫৬ হাজার, উচ্চ দ্রব্যমূল্যে দুর্ভোগে শিক্ষার্থীরা
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) মিনি বাজারে দোকান বরাদ্দ ও ভাড়া আদায়ের ক্ষেত্রে চরম অসামঞ্জস্যতা দেখা গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নামমাত্র মূল্যে শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের কাছে দোকান বরাদ্দ দেওয়া হলেও তারা সেগুলো কয়েক গুণ বেশি ভাড়ায় বাইরের ব্যবসায়ীদের কাছে ভাড়া দিয়ে অতিরিক্ত মুনাফা আদায় করছেন। ফলে বাজারের পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শিক্ষার্থীসহ সাধারণ ক্রেতারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ফটক-সংলগ্ন মিনি বাজারে ফার্মেসি, স্টেশনারি, লাইব্রেরি, মিনি রেস্টুরেন্ট, মুদি, সেলুন, মাছ-মাংস, ডিম, সবজি মিলে ২১টি বড় দোকান ও ১৪টি ছোট দোকান রয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিটি ছোট দোকান ১ হাজার এবং বড় দোকান ২ হাজার টাকায় ভাড়া দেওয়া হলেও বরাদ্দপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মকর্তারা সেগুলো ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকায় বাইরের খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে ভাড়া দিয়েছেন।
মিনি বাজার পরিদর্শন করে জানা যায়, বাজারের ৩৫টি দোকান থেকে মাসে ৫৬ হাজার টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা করা হলেও ভাড়া উত্তোলন করা হয় ৩ লাখ টাকারও বেশি। এ ছাড়া দোকানপ্রতি দেড় থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত জামানত নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয় বৃদ্ধি ও সুলভ মূল্যে পণ্য সরবরাহের লক্ষ্যে বাজারটি গঠিত হলেও বরাদ্দপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মকর্তাদের চাতুরির কারনে কোনো উদ্দেশ্যই সফলতার মুখ দেখেনি। অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাগারে জমা হতে পারত এমন অর্থ পেয়ে যাচ্ছে কতিপয় শিক্ষক-কর্মকর্তার পকেটে। পাশাপাশি বাজারটির সবজিসহ নিত্যপণ্যের দাম বাইরের বাজারের তুলনায় বেশি। মাছ-মুরগি কেজিতে ১০-২০ টাকা বেশি দিতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
অল্প টাকায় বরাদ্দ নেওয়া দোকানে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের প্রশ্নে দোকান বরাদ্দপ্রাপ্ত এক শিক্ষক বলেন, ‘দোকান পেতে আমাদের বড় বিনিয়োগ করতে হয়েছে। লাভের জন্যই করেছি। আমরা দুই হাজার টাকায় দোকান নিয়েছি বলে কি একই অর্থে ভাড়া দেব? তা ছাড়া প্রশাসন তো নিয়ম করেনি, আমরা কত টাকায় ভাড়া ওঠাতে পারব?’
তবে বাজারের এক দোকানি বলেন, ‘দোকানের জামানতও আমরাই দিয়েছি। বরাদ্দপ্রাপ্তরা শুধু মাসে মাসে আমাদের থেকে ভাড়া উত্তোলন করেন। এ ছাড়া বিদ্যুৎ ও পানির খরচ তো আছেই। সব মিলিয়ে ব্যবসা চালাতে হলে দাম বাড়াতেই হচ্ছে।’
সম্প্রতি শেকৃবি ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বাজার সমস্যার সমাধানে নতুন ভাবে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে শেকৃবি ছাত্রদলের সভাপতি আহমেদুল কবির তাপস দোকান পূনর্বিন্যাস না হওয়া অবধি সকল ভাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে উত্তোলনের দাবি জানান।
এ ছাড়া অতিরিক্ত উত্তোলিত এই ভাড়া থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের সহযোগিতার দাবিও জানান ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা
এ বিষয়ে মিনি বাজার সংক্রান্ত কমিটির আহ্বায়ক ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড বেলাল হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমাদের কমিটির মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আমরা সব বরাদ্দপ্রাপ্তদের নোটিশ পাঠিয়েছি। বরাদ্দ দেওয়ার নীতিমালায় দোকান বরাদ্দ বাতিলের তিন মাস পূর্বে জানানোর কথা উল্লেখ ছিল। সে প্রেক্ষিতে আগামী ৩ মাসের মধ্যে আমরা বাজারটি সম্পূর্ণ বুঝে পাব। তারপর বাজারটি রিনোভেশন করে পুনরায় মিটিং হতে সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা পরবর্তি পদক্ষেপ নেব। কোনো দাবি করলেও তা নিয়মমাফিক হতে হবে। আমরা শিক্ষার্থীবান্ধব একটা পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছি।’