খাবার থাইরয়েডের কার্যকারিতা যেভাবে প্রভাবিত করে

ডা. শাহজাদা সেলিম
২৬ মে ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
খাবার থাইরয়েডের কার্যকারিতা যেভাবে প্রভাবিত করে

খাবার থাইরয়েডের কার্যকারিতা ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুভাবেই প্রভাবিত করে। থাইরয়েড হরমোন উৎপাদন ও নিয়ন্ত্রণের জন্য আয়োডিন, সেলেনিয়াম, জিংক ও আয়রনের মতো গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান অপরিহার্য। গতকাল ২৫ মে বিশ^জুড়ে পালিত হলো বিশ্ব থাইরয়েড দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য ছিলÑ ‘আপনার থায়রয়েডকে জানুন, রোগের শুরুতে নির্ণয় করুন, সুস্থ থাকুন।’

থাইরয়েড হরমোন (টি৪ ও টি৩) সংশ্লেষণে আয়োডিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর অভাব হাইপোথাইরয়েডিজম ও গলগণ্ড রোগের কারণ হতে পারে। আবার অতিরিক্ত গ্রহণ থাইরয়েডের কার্যকারিতা ব্যাহত করতে পারে, বিশেষ করে যাদের থাইরয়েডের রোগ আছে। টি৪ হরমোনকে আরও সক্রিয় টি৩-তে রূপান্তর করতে সহায়তা করে সেলেনিয়াম। পাশাপাশি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে থাইরয়েডকে রক্ষা করতে সহায়তা করে। সেলেনিয়ামের ঘাটতি বা বাড়তি দুটিই ক্ষতিকর। জিংক হরমোন সংশ্লেষণ ও রূপান্তরে ভূমিকা পালন করে এবং ঘাটতি হাইপো-থাইরয়েডিজমে অবদান রাখতে পারে। হরমোন উৎপাদনে সরাসরি যুক্ত না হলেও আয়রন থাইরয়েডের কার্যকারিতা সমর্থন করে। এটির ঘাটতি হাইপোথাইরয়েডিজমের লক্ষণগুলো আরও খারাপ করতে পারে।

খাবারের সঙ্গে সম্পর্ক : কিছু খাদ্য উপাদান থাইরয়েডের স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ক্রুসিফেরাস শাকসবজি (যেমন বাঁধাকপি, ব্রকলি ও কেল) হলো গয়টারোজেনিক, যা গলগণ্ড বাড়ায়। তবে এগুলো রান্না করলে তাদের গলগণ্ডের প্রভাব উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়। সয়া প্রচুর পরিমাণে খেলে থাইরয়েড হরমোন উৎপাদন ও শোষণে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে, বিশেষ করে যাদের আয়োডিনের মাত্রা কম বা থাইরয়েডের সমস্যা আছে। উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার লেভোথাইরক্সিন শোষণকে প্রভাবিত করতে পারে। তাই উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার গ্রহণের আগে আলাদাভাবে খালি পেটে ওষুধ খাওয়া উচিত। প্রক্রিয়াজাত খাবার, অস্বাস্থ্যকর চর্বি ও চিনিসমৃদ্ধ খাবার প্রদাহ বৃদ্ধি করতে পারে, যা অটোইমিউন থাইরয়েডের সমস্যা আরও খারাপ করে তুলতে পারে। এ ছাড়া সিলিয়াক রোগ বা গ্লুটেন সংবেদনশীলতা আছেÑ এমন ব্যক্তিরা গ্লুটেনমুক্ত খাবার থেকে উপকৃত হতে পারেন। কারণ এটি হাশিমোটো থাইরয়েডাইটিসের মতো অটোইমিউন থাইরয়েড রোগের সঙ্গে সম্পর্কিত। কেউ কেউ অটোইমিউন প্রোটোকল খাবার গ্রহণ করেন, তবে এ জন্য পেশাদার তত্ত্বাবধানের প্রয়োজন। নিরামিষাশীদের খাদ্য নিয়ে যখন পরিকল্পনা করা হয়, তখন পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়োডিন, সেলেনিয়াম, জিংক ও আয়রন গ্রহণ নিশ্চিত করা উচিত।

পরামর্শ : আয়োডিনযুক্ত লবণ ও আয়োডিনসমৃদ্ধ খাবার পরিমিতভাবে খান। সেলেনিয়াম, জিংক ও আয়রন–সমৃদ্ধ খাবার খাদ্যতালিকায় রাখুন। বিভিন্ন ধরনের ফল, শাকসবজি ও গোটা শস্যদানা খেতে হবে। সবজি রান্না করে খেতে হবে। সয়া পরিমিত খাবেন। থাইরয়েড ওষুধের জন্য সঠিক সময় অনুসরণ করুন। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে খাবারের তালিকা তৈরি করুন।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ

বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (সাবেক বিএসএমএমইউ)

চেম্বার : কমফোর্ট ডক্টরস চেম্বার, ৩ গ্রিনরোড, ধানমন্ডি, ঢাকা

হটলাইন : ০১৭৩১৯৫৬০৩৩, ১০৬৭৩