জাবির ছাত্র হলে ছাত্রী, তদন্ত কমিটি গঠন

জাবি প্রতিনিধি
২২ মে ২০২৫, ২১:৪২
শেয়ার :
জাবির ছাত্র হলে ছাত্রী, তদন্ত কমিটি গঠন

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) একটি ছাত্র হলে ছাত্রী প্রবেশের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক ও আলোচনা।

জানা যায়, আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলের একটি কক্ষে ৪ জন ছাত্র ও ১ জন ছাত্রী অবস্থান করছিলেন—এমন একটি ছবি সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ পায়। ছবিটি ভাইরাল হওয়ার পর হল প্রশাসনের নজরে আসে বিষয়টি। পরে হল কর্তৃপক্ষ এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।

জাবির এক ছাত্র বলেন, ‘আমরা হলে নিরাপদ সুশৃঙ্খল পরিবেশ চাই। নিয়মের বাইরে গিয়ে কোনো ছাত্রী হলে ঢুকলে তা সবার নিরাপত্তার জন্য হুমকি এবং বেমানান। এর আগেও মেয়েদের হলে ছেলে প্রবেশের ঘটনা ঘটেছিল।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছবিতে থাকা মেয়েটির নাম ইশরাত জাহান। অন্যান্য শিক্ষার্থীরা হলেন, এফ এম প্রত্যয়, আমিনুল ইসলাম, সামিদুল ইসলাম ও মো. রাশেদ। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ৫২ তম ব্যাচের (২০২২-২৩ সেশনের) শিক্ষার্থী।

ছবিতে থাকা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘এ ঘটনাটি গতবছরের ১৮ অক্টোবরে ঘটেছে। আমাদের বিভাগে শিক্ষার্থীদের ২ গ্রুপের দ্বন্দ্ব হয়। ইশরাতকে খারাপ ভাষায় গালি দেওয়া হয়। গালিগালাজ করেও ক্ষোভ না মেটায় এটিকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ছবিটি তোলা হয় নজরুল হলের ৫২৭ নম্বর কক্ষে।’

অভিযুক্ত ছাত্রী ইসরাত জাহান বলেন, ‘ছবিটি অনেক আগের। সম্ভবত ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর বা অক্টোবর মাসের। তখন কাজী নজরুল ইসলাম হলটি অফিসিয়ালি চালু হয়নি। এমনকি হলে কোনো নিরাপত্তা প্রহরি ছিল না। অনেকেই তখন হলে গিয়ে ছবি তুলেছিল। আমি সেদিন বন্ধুদের সঙ্গে গিয়েছিলাম, কিছুক্ষণ থেকে চলে এসেছি। আমার সঙ্গে আরও ৭-৮ জন বন্ধু ছিল। কিন্তু এখন হঠাৎ করে পুরনো একটি ছবি ভাইরাল করে আমাকে টার্গেট করা হয়েছে। এটা এক ধরনের ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে করা হয়েছে বলেই আমি মনে করি। কেন হঠাৎ করে এখন এই ছবি ছড়ানো হলো, সেটা আমার জানা নেই।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী ছেলেদের হলে ছাত্রীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। এ বিষয়ে ইশরাত স্বীকার করেন, ‘হ্যাঁ, এটা অবশ্যই আমার ভুল হয়েছে। তবে তখন হলে কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না।’

আরেক ছাত্র সাদিমুল ইসলাম বলেন, ‘এটা হল উদ্বোধনের দিনের ছবি। এ ছবিতে আমি আছি। হলে মেয়ে প্রবেশ দেখে আমরাই আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলাম। পরে ভাবলাম প্রথমদিন তাই হয়তো হল প্রশাসন ঢুকতে দিয়েছে। এখানে আমি সম্পূর্ণ হল প্রশাসনের ব্যর্থতা দেখতে পাচ্ছি।’

ছবিতে থাকা রাশেদকে মুঠোফোনে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘আমি ব্যস্ত আছি। ফোন রাখলাম।’ আরেক শিক্ষার্থী প্রত্যয়ের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মামুন হোসেন বলেন, ‘আমি এ বিষয়টি অবগত হয়েছি। তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এখন অফিস টাইম নেই। আমরা অনলাইনে তদন্ত কমিটির নথি পাঠিয়েছি। কমিটির রিপোর্টের ওপর যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশেদুল আলম বলেন, ‘যেহেতু এটা হলের ভেতরের বিষয় তাই এ বিষয়ে ঐই হলের প্রভোস্ট ও ওয়ার্ডেন স্যাররা মিলে সিন্ধান্ত নিবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা বর্হিভূত কোনো কাজ করলে অবশ্যই তাকে শাস্তির আওতায় আনা হবে।’

উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী ছেলেদের হলে ছাত্রীদের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।