ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি ও বিএসআরএম যৌথভাবে উদ্বোধন করলো বিএসআরএম স্কুল অফ ইঞ্জিনিয়ারিং
উচ্চশিক্ষায় ইন্ডাস্ট্রি-অ্যাকাডেমিয়ার এ ধরণের কোলাবোরেশন বাংলাদেশে এই প্রথম ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি ও বিএসআরএম গ্রুপ অব কোম্পানিজের যৌথ উদ্যোগে বিএসআরএম স্কুল অফ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের উদ্বোধন করা হয়েছে। গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরুল বাড্ডা ক্যাম্পাসে ‘শেপিং টুমরো: ইনোভেশন ফর সাসটেইনেবিলিটি’ শিরোনামে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্কুলটির অফিসিয়াল লোগো এবং ওয়েবসাইটও উন্মোচিত হয়।
অ্যাকাডেমিয়া ও ইন্ডাস্ট্রির এ ধরণের কোলাবোরেশন বাংলাদেশে এই প্রথম। এই উদ্যোগ বাংলাদেশের প্রকৌশল শিক্ষাকে নতুনভাবে এগিয়ে নেয়ার মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই নতুন স্কুলের লক্ষ্য হলো এমন প্রকৌশলী গড়ে তোলা যারা প্রযুক্তিগত দক্ষতার পাশাপাশি উদ্ভাবন, নৈতিকতা এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার মানদণ্ডে পরিপূর্ণ হয়ে আগামীর যোগ্য নেতৃত্ব হিসেবে গড়ে উঠবে।
এই যৌথ সহযোগিতা বিএসআরএম এর বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সেই সঙ্গে এই উদ্যোগ ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদের শিক্ষা দর্শনের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত। স্যার ফজলে বিশ্বাস করতেন- শিক্ষাব্যবস্থা হতে হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক, ফলপ্রসূ এবং মানব উন্নয়নের জন্য। বিএসআরএম স্কুল অফ ইঞ্জিনিয়ারিং সেই চেতনারই প্রতিফলন, যেখানে শিক্ষা হবে উদ্ভাবনের পথপ্রদর্শক এবং মানব কল্যাণে নিবেদিত।
এই যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্বকে বার্তা জানাচ্ছে যে, বাংলাদেশ এখন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে গ্লোবাল সাউথে এগিয়ে যাচ্ছে। এখান থেকেই গড়ে উঠছে এমন নেতৃত্ব, যারা মানব কল্যাণকে অগ্রাধিকার দিয়ে ভবিষ্যতের নগর, শিল্প ও সমাজকে নতুনভাবে গড়ে তুলবে।
বিএসআরএম স্কুল অফ ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুলটি ইতোমধ্যেই অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকাডেমিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে উন্নত গবেষণায় অর্থায়ন, অত্যাধুনিক গবেষণাগার স্থাপন, এবং মেধাবী ও আর্থিকভাবে অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি প্রদান। এসব উদ্যোগের মাধ্যমে ভবিষ্যতের প্রযুক্তিনির্ভর সমাজ গঠনে প্রস্তুত হচ্ছে দক্ষ ও দায়িত্বশীল প্রকৌশলী।
বিএসআরএমের চেয়ারম্যান আলী হুসাইন আকবর আলী এফসিএ বলেন, জাতি গঠনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো উচিত সরকার ও অন্যান্য খাতের এই ধরণের সহযোগিতা করা। এই ধরণের উদ্যোগ দেশকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করে। এই দর্শনের অন্যতম প্রমাণ হলো বিএসআরএম স্কুল অফ ইঞ্জিনিয়ারিং-এর প্রতিষ্ঠা। যা শিক্ষার মাধ্যমে উন্নত জাতি গঠনের প্রতি প্রতিষ্ঠানটির প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘দেশ আপনাদের ডাকছে। বাইরের দিকে তাকাবেন না। এখানেই থাকুন, এখানেই কাজ করুন, এখানেই নিজেকে গড়ে তুলুন। আপনার জ্ঞান, শক্তি আর চিন্তাধারা আজ এই দেশেই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। আপনি যদি আজ দেশের যদি জন্য কিছু করেন সেটি কাল আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে পথ দেখাবে।’
অনুষ্ঠানে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারপারসন তামারা হাসান আবেদ বলেন, ‘আজ বিএসআরএম স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের উদ্বোধনের মাধ্যমে আমরা শিক্ষা ব্যবস্থাকে মর্যাদা, ন্যায়বিচার ও সুযোগ তৈরির একটি মাধ্যম হিসেবে গড়ে তুলতে আমাদের অঙ্গীকারকে আবারও পুনর্ব্যক্ত করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এমন একটি পরিবেশ তৈরিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যেখানে জানার চেষ্টাকে উৎসাহিত করা হয়, বৈচিত্র্যকে সম্মান করা হয়, এবং যেখানে প্রতিটি শিক্ষার্থী নিজেকে ইতিবাচক পরিবর্তনের বাহক হিসেবে বিশ্বাস করে।’
আরও পড়ুন:
ইবির ইসলামের ইতিহাস বিভাগে তালা!
ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, এই সহযোগিতার ফলে ইন্ডাস্ট্রির জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অ্যাকাডেমিয়ার সঙ্গে একত্রিত হয়ে তা ইতিবাচকভাবে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে।’
তিনি আরও বলেন, ব্র্যাক ও ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির এই সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং বিএসআরএম এর মানবিক মূল্যবোধ- সব মিলিয়ে এটি কেবল একটি উদ্যোগ নয়, বরং একটি বৃহত্তর সামাজিক পরিবর্তনের অংশ।’
অনুষ্ঠানে বিএসআরএম স্কুল অফ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের একজন স্কলারশিপপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
একটি প্রাণবন্ত সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ও স্কুলের উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত টি-শার্ট ডিজাইন প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি শেষ হয়।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন স্কুলের ডিন প্রফেসর আরশাদ এম চৌধুরী। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির অফিস অফ কমিউনিকেশন্সের ডিরেক্টর খায়রুল বাশার।