ফুলে ফুলে সেজেছে জাবি
নিসর্গের রঙ তুলিতে নিপুণ হাতে আঁকা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নান্দনিক ক্যাম্পাস জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। বিস্তৃত জলাভূমি, ছায়াঘেরা বৃক্ষরাজি আর নিঃশব্দে বইতে থাকা নির্মল বাতাসে মোড়ানো এই সবুজ ক্যাম্পাস যেন প্রকৃতির কোলে গড়ে ওঠা এক স্বপ্নপুরী।
প্রতিটি ঋতু যেন এখানে হাজির হয় তার নিজস্ব রঙ, ঘ্রাণ ও আবেগ নিয়ে। আবার নিঃশব্দে মিলিয়ে গিয়ে রেখে যায় স্মৃতির অনুপম চিহ্ন। বসন্তের কোমলতা থেকে গ্রীষ্মের সেই উতপ্ত দিন, প্রতিটি সময়েই জাহাঙ্গীরনগর নিজস্ব সৌন্দর্যে হৃদয়কে মোহিত করে তোলে।
প্রকৃতির রঙিন ক্যালেন্ডারে বসন্ত ইতোমধ্যেই তার কবিতার পাতা গুটিয়ে বিদায় নিয়েছে। ঋতুর পালাবদলে এসেছে গ্রীষ্ম, সঙ্গে নিয়ে এসেছে প্রখর রোদের খেলা আর ধুলিমলিন দিন। বাংলা বর্ষপঞ্জির বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাস জুড়ে যখন জনজীবন হাঁসফাঁস করে, প্রকৃতি তখনও থেমে থাকে না রুক্ষতা ছাপিয়ে এক অপার সৌন্দর্যের খাতা মেলে ধরতে।
গ্রীষ্মের এই তীব্র তাপদাহেও প্রাণের স্পন্দনে মুখর হয়ে ওঠে জাবি ক্যাম্পাস। সবুজ প্রকৃতি আর লাল ইটপাথরের ফাঁকে ফাঁকে যেন ঝরে পড়ে ফুলের এক অনুপম ফোয়ারা। কৃষ্ণচূড়ার লাল জ্বলে ওঠা ডাল, জারুলের বেগুনি কুয়াশা, সোনালুর ঝুলন্ত সোনালি ঘণ্টা, কনকচূড়ার হলুদ আলো, কাঠগোলাপের শুভ্রতা প্রতিটি ফুলই যেন এই নিঃসঙ্গ গ্রীষ্মে একেকটি রঙিন প্রেমপত্র হয়ে দাঁড়ায়। রাজ্যের সব ফুল একত্রে মিলিত হয়ে ফুটিয়ে তুলেছে এক স্বপ্নের বাগিচা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হলরোড, চৌরঙ্গী, ভিসি চত্বর, শিক্ষক ক্লাব, মুন্নী চত্বর, পরিবহন চত্বর, বটতলা, সমাজবিজ্ঞান অনুষদ ভবনের সামনে কৃষ্ণচূড়া, ক্যাসিয়া রেনিজেরা আর সোনালু ফুলের রাজত্ব। পাশাপাশি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তিনিকেতন, সুইজারল্যান্ড, মওলানা ভাসানী হলসংলগ্ন পুকুরপাড়ে জারুলের ঘন বেগুনি ফুল যেন নিজেই রচনা করছে এক কাব্যিক দৃশ্যপট।
রাস্তার দুই ধারে ছড়িয়ে পড়া ঝরে-পড়া ফুলের পাপড়ি দেখে মনে হয়, প্রকৃতি যেন আপন হাতে বিছিয়ে দিয়েছে এক ফুলেল গালিচা।
আরও পড়ুন:
ইবির ইসলামের ইতিহাস বিভাগে তালা!
এই সৌন্দর্যের আকর্ষণে প্রতিদিন ভিড় করেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। শুধু মানুষ নয়, পাখি ও প্রজাপতিরাও এতে মুগ্ধ। ফুলের মিষ্টি ঘ্রাণে, রঙের ছায়ায় তারা যেন নেচে বেড়ায় সারাদিন সারাক্ষণ।
প্রতিটি ঋতু এখানে যেন নিজের একেকটি পরিচয় নিয়ে হাজির হয়। গ্রীষ্মকাল হোক বা শীত, প্রতিবার ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য নতুন করে মুগ্ধ করে। কৃষ্ণচূড়ার নিচে দাঁড়িয়ে ছবি তোলা, জারুলের নিচে হেঁটে যাওয়া এই সবকিছুই যেনো ক্যাম্পাস জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
প্রকৃতির এই সৌন্দর্য শিক্ষার্থীদের মনেও প্রশান্তি আনে। ক্লাস আর পরীক্ষার চাপের মাঝে একটুখানি সময় কাটাতে অনেকেই ছুটে যান লেকপাড়ে, কোথাও বসে গান শুনেন, কেউ কেউ আবার বই হাতে সময় কাটান পাতার ছায়ায়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অর্ধশতাধিক জারুলগাছ আছে। গ্রীষ্মে কচি পাতায় ভরা গাছের ডালের আগায় বেগুনি রঙের জারুল ফুল বেশ নজর কাড়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মওলানা ভাসানী হলের পুকুরপাড়ে সারি সারি জারুলগাছ দেখতে পাওয়া যায়। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইজারল্যান্ড এলাকায় লেকের ধারের গাছগুলোয় বেগুনি রঙের ফুল যখন বাতাসে দোল খায়, তখন দেখেও শান্তি লাগে।