বিশ্ব বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি দিবস উদযাপন করল এনএসইউ

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৮:৩৪
শেয়ার :
বিশ্ব বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি দিবস উদযাপন করল এনএসইউ

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির (এনএসইউ) আইন বিভাগের উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুট কোর্ট রুমে আজ বুধবার এক সেমিনার আয়োজনের মধ্য দিয়ে “বিশ্ব বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি দিবস” উদযাপন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন অস্ট্রেলিয়ার ম্যাকোয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের অধ্যাপক নিলুফার স্যালভাদুরাই। এছাড়াও আলোচনায় বিশেষ বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন “সেন্টার ফর লার্নিং ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি”-এর পরিচালক মহুয়া জহুর এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের জেষ্ঠ্য প্রভাষক অ্যাডভোকেট সাকিব রহমান। অনুষ্ঠানটি সভাপতিত্ব করেন এনএসইউ উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল হান্নান চৌধুরী এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন এনএসইউ’র কোষাধ্যক্ষ ও ভারপ্রাপ্ত উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আবদুর রব খান।

প্রধান বক্তা অধ্যাপক নিলুফার স্যালভাদুরাই পেটেন্ট আইনের মূল উদ্দেশ্য হিসেবে উদ্ভাবনকে সমর্থন করার বিষয়টি তুলে ধরেন এবং বলেন, ‘পেটেন্ট আইন “স্বতন্ত্র ব্যক্তি” সংক্রান্ত আলোচনায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা উদ্ভাবকদের স্বীকৃতি দিতে ব্যর্থ হয়েছে। ’ তিনি এই বিষয়টি একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার আদালতের রায় তুলে ধরেন। এছাড়াও, তিনি সুপারিশ করেন আইন প্রণেতাদের উচিত উদ্ভাবনের ভবিষ্যৎ বিবেচনায় এনে ধারণাগত ও ভাষাগত পরিবর্তন করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা উদ্ভাবকদের স্বীকৃতি সংক্রান্ত বিষয়ে নতুন নীতিমালা ও বিধিমালা প্রণয়ন করা।

বিশেষ বক্তা মহুয়া জহুর কপিরাইট আইন ২০২৩ এর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিক, বিশেষত, লোকসঙ্গীত কাজের সুরক্ষা ও সঙ্গীত শিল্পে প্রভাবক ধারাগুলোর উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, কপিরাইট আইন ২০২৩ অডিও-ভিজুয়াল সম্পাদনকারীদের জন্য পর্যাপ্ত সুরক্ষা প্রদান করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং আইন প্রণেতাদের উচিত দৃশ্য-শ্রব্য পরিবেশকদের জন্য বিশেষ সুরক্ষা প্রদানের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা।

অপর বিশেষ বক্তা অ্যাডভোকেট সাকিব রহমান উল্লেখ করেন, কেন ‘dilution-by-blurring’ বা ‘ট্রেডমার্কের অস্পষ্টতার মাধ্যমে ক্ষতিসাধন’ ট্রেডমার্ক আইনের একটি ধারণাগতভাবে জটিল দিক। তিনি জানান, এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশের আদালত ‘অস্পষ্টতা’ বা এই ধরণের ক্ষতিসাধনের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়নি। তাঁর মতে, ২০০৯ সালের ট্রেডমার্ক আইনে এই ধারণার অন্তর্ভুক্তি এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।

সবশেষে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল হান্নান চৌধুরী আইন শিক্ষার্থীদের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি আইন বিষয়ে জ্ঞান সমৃদ্ধ করতে এই ধরনের উদ্যোগের প্রশংসা করেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, শিক্ষার্থীরা এই জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে ভবিষ্যতে তাদের পেশাগত জীবনে আরও দক্ষ এবং সক্ষম হয়ে উঠবে।

ভারপ্রাপ্ত উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুর রব খান তার সমাপনী বক্তব্যে বলেন “আধুনিক জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতিতে উদ্ভাবন ও সৃজনশীলতা রক্ষায় বুদ্ধিবৃত্তিক আইন অপরিহার্য।” তিনি শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে আগ্রহ বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং এ ধরনের আয়োজনকে নিয়মিত ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে চালিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানান।

আইন বিভাগের চেয়ারম্যান এবং সহযোগী অধ্যাপক ড. ইশতিয়াক আহমেদ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন এবং এই ধরনের উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের আইনি কাঠামোর ভেতরে সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবন সুরক্ষিত করার মাধ্যমে বাস্তবজ্ঞান অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে আশা ব্যক্ত করেন।

ড. মো. রিজওয়ানুল ইসলাম, মানবিক ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন এবং আইন বিভাগের অধ্যাপক, তার উদ্বোধনী বক্তৃতায় উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদের সুরক্ষাকে এই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা উচিত নয়, এর সুরক্ষার মাধ্যমে শুধুমাত্র বিদেশী বিনিয়োগকারী বা বড় বড় বহুজাতিক কোম্পানির রক্ষা হবে এবং ভোক্তাদের ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে। তিনি মতামত দেন যে, সৃজনশীলতাকে উৎসাহিত করতে এবং বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদের সুরক্ষার ওপর জোর দেওয়া উচিত।