গ্রীষ্মকালে নাক, কান ও গলার সমস্যা উত্তরণের উপায়
গ্রীষ্মকালে ফল ও ফসলে ভরে যায় গ্রামবাংলার আঙিনা। গ্রামে চলে ফল সংগ্রহের উৎসব। অন্যদিকে শহরেও এর প্রভাব পড়ে। মানুষ ফসলচক্রে বা সরাসরি কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় শহরের মানুষের মধ্যেও উৎপাদনমুখী আনন্দ নাড়া দেয়। তাজা ফলের ম-ম ঘ্রাণ মানুষকে আকৃষ্ট করে। গ্রামে ও শহরের পথেঘাটে ফল ও ফসল বিক্রিরও ধুম পড়ে। অন্য সময়ের তুলনায় ফল খাওয়ার প্রবণতাও বাড়ে বিশেষ করে আম, কাঁঠাল ও লিচু। অন্যদিকে প্রচণ্ড গরম, ঝড়, বৃষ্টি যেমন ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করে। আবার সামান্য বৃষ্টি ও স্বস্তির বাতাস শরীরে আরাম দেয়। বৈচিত্র্যময় প্রকৃতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে পারাটাই সব থেকে সুখকর এবং স্বাস্থ্যকর। কিন্তু আমরা তাৎক্ষণিক স্বস্তির জন্য শরীরের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করে ফেলি। বাড়ে ফ্লু, সমস্যা সৃষ্টি হয় নাক, কান, গলারও। একমাত্র সাবধানতা বা সচেতনতা আমাদের এই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারে। এ বিষয়ে কথা হয় জাতীয় নাক, কান ও গলা ইনস্টিটিউটের রেজিস্ট্রার ডা. রজত কান্তি সরকারের সঙ্গে। তিনি এই সময়ে কী কী সমস্যা হয় এবং তা কীভাবে এড়ানো সম্ভবÑ এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন।
গ্রীষ্মকালে যেসব সমস্যা হয় : ডা. রজত কান্তি সরকার বলেন, গ্রীষ্মকালীন তাপমাত্রায় প্রচুর উষ্ণতা এবং আর্দ্রতা থাকে; এর জন্য আমাদের নাক, কান, গলার স্পেশাল বা স্পেসিফিক রোগ তৈরি হয়। গরম থাকার কারণে আমরা প্রচুর পানি পান করার চেষ্টা করি। এসির ব্যবহার হয়। কাজের প্রয়োজনে এসির ভেতরে-বাইরে যাওয়ার কারণে বডিতে টেম্পারেচারের ঘন ঘন পার্থক্য হয়। গরমে ঠাণ্ডা পানি বা পানীয় খাওয়ায় ফ্যারিনজাইটিস ও টনসিলাইটিস প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। পাশাপাশি নদীমাতৃক দেশ হওয়ায় বিশাল জনগোষ্ঠী নদী অববাহিকতায় থাকার কারণে নদী বা পুকুরে গোসল করে। আর্দ্র আবহাওয়ার জন্য কানের বহিরাংশে অটাইটিস এক্সটার্না হয়; ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাস থেকে এটি হতে পারে। এটাকে অটোমাইকোসিস বলি। শুধু এটা আর্দ্র পরিবেশের সঙ্গে জড়িত। কারণ গ্রীষ্মকালে প্রচুর ঝড়, বৃষ্টি হয়। হিউমিডিটি বেড়ে যায়। তিনি বলেন, আমাদের দেশ যেহেতু কৃষিপ্রধান। এই সময়ে ধান উৎপাদন, বিক্রি ও সংরক্ষণের কাজ হয়। এ সময়ে যে জটিলতা হয় বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। এই ধান কাটা বা তোলার সময় বা মাড়াইয়ের পদ্ধতির সময়। ধান বা ধানের খড় বা অন্য অসাবধানতাবশত শিশুদের কানে ঢুকে যায়। কানের পর্দা বা রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
আরও পড়ুন:
শীতে গর্ভবতী মায়েদের যত্ন
উত্তরণের উপায় : যেহেতু প্রচণ্ড আর্দ্র ও উষ্ণ পরিবেশ থাকে। গরমে পিপাসা বেশি পায়। সে ক্ষেত্রে আমরা পানি পান করব সাধারণ তাপমাত্রার। অতিশয় ঠাণ্ডা পানি বা পানীয় এভয়েড করা হবে উত্তম। এতে শরীরের ভেতরের এবং বাইরের তাপমাত্রার ঠিকঠাকমতো ব্যালেন্স হবে। হঠাৎ করে ঠাণ্ডা পানি খেলে গলার ভেতরে প্রদাহ তৈরি হয়। এতে ইনফেকশন তৈরি হয়। এটা করা যাবে না। ঘন ঘন পানি খাব, কিন্তু নরমাল তাপমাত্রার পানি খাব। এসিতে বেশি ঠাণ্ডায় থাকা যাবে না। আবার খুব গরম থেকে এসে হুট করে বেশি ঠাণ্ডায় এসি ছেড়ে থাকা যাবে না। একটা এভারেজ টেম্পারেচার মেইনটেইন করলে ভালো হয়। কানের প্রদাহের ক্ষেত্রে যেহেতু বেশি আর্দ্র আবহাওয়া দায়ীÑ এ কারণে আমাদের বদ-অভ্যাস থাকে কান চুলকানো। এতে যে ক্ষতি হয় তা হলো কানের বহিরাংশে ইনজুরি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আর্দ্র আবহাওয়া ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাস দ্বারা ইনফেকশনের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে দেয়। এর ফলে বারবার ইনফেকশন হয়। এটা এভয়েড করতে পারলে ইনফেকশন থেকে দূরে থাকা যায়। ধান, খড় বা ময়লা এটা থেকে শিশুদের একটু সাবধানে রাখতে পারলে বা নিজেরা সাবধানে থাকলে এই সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন:
জরায়ুমুখ ক্যানসারের লক্ষণগুলো জেনে রাখুন