শরীরে ভুল রক্ত দেওয়ায় রোগীর মৃত্যু
মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক রোগীর শরীরে ভুল রক্ত দেওয়ার প্রায় ৬ ঘণ্টা পর তার মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পওয়া গেছে। এ ঘটনায় হাসপাতালজুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে।
নিহত বিল্লাল মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার খাগড়াকুড়ি গ্রামের বাসিন্দা। গতকাল শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকে ওই হাসপাতালে তার শরীরে রক্ত দেওয়া হয়। একই দিন রাত ১০টার দিকে তার মৃত্যু হয়। এর আগে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে গত বুধবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে তিনি মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন।
স্বজনদের অভিযোগ, হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংক থেকে তাদের ‘ও’ পজিটিভ রক্তের পরিবর্তে ‘বি’ পজিটিভ রক্ত সরবরাহ করা হয়। তারা সেই রক্ত নার্সদের দেন, কিন্তু নার্সরা তখন ডাক্তারি অর্ডারপত্র চান। পরবর্তীতে ডাক্তার রক্ত দেখে অর্ডারপত্র প্রদান করেন এবং সেই রক্তই রোগীর শরীরে পুশ করা হয়।
তাদের দাবি করেন, তিন ধাপে রক্ত যাচাইয়ের কথা। এক জায়গায় ভুল হতে পারে, কিন্তু তিন জায়গায় ভুল হওয়ার কথা নয়। এটি চিকিৎসকদের ইচ্ছাকৃত অবহেলা। আমরা এর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই।
আরও পড়ুন:
ডেঙ্গুতে ৬ জনের মৃত্যু
রোগীর ভাই জানান, ‘রক্ত দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই রোগীর শরীর ঠান্ডা হয়ে আসে। আমরা তখনও বুঝতে পারিনি যে ভুল রক্ত দেওয়া হয়েছে। একপর্যায়ে হাসপাতালের এক ব্যক্তি বিষয়টি আমাদের জানায়। তখন আমরা নার্স ও ডাক্তারদের অনেকবার ডাকলেও তারা গুরুত্ব দেয়নি। বরং তারা রক্তের ব্যাগ ও কাগজপত্র নিয়ে চলে যায়।’
তিনি আরো বলেন, ‘শুক্রবার রাত ৮টার দিকে একজন চিকিৎসক এসে আমাদের ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্ত আমাদের সামর্থ্য না থাকায় আমরা এই সরকারি হাসপাতালেই চিকিৎসা করানোর কথা বলি। এরপর থেকে রোগীকে আর কোনো চিকিৎসা দেওয়া হয়নি।’
এই বিষয়ে জানতে চাইলে মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, ‘বিকেল ৪টার দিকে ইন্টার্ন চিকিৎসক ঐশী ও মেডিকেল অফিসার ডা. নূরজাহানের ডিউটি ছিল। সেসময় ভুলবশত রোগীর শরীরে ‘বি’ পজিটিভ রক্ত পুশ করা হয়। এরপর থেকেই রোগীর অবস্থার অবনতি হয়।’
তিনি জানান, ‘আমি রাত ৮টায় ডিউটি শুরু করি এবং সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি রোগীকে বাঁচানোর জন্য। যদিও রক্তের পরিমাণ বেশি ছিল না, তবুও কাগজপত্র ছাড়া রক্ত পুশ করা উচিত হয়নি। এটি মারাত্মক ভুল।’
তবে রোগীর মৃত্যু সনদে মৃত্যুর কারণ হিসেবে ‘শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা’ উল্লেখ করা হয়েছে। ভুল রক্ত পুশের বিষয়টি সেখানে লেখা হয়নি। এ বিষয়ে ডা. ইশতিয়াক জানান, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরামর্শ করেই মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করা হয়েছে।’
এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন নিহতের পরিবার ও স্থানীয়রা।