অগ্নিকাণ্ডে ছেয়ে গেল প্যারিসের আকাশ
প্যারিসের ১৭তম অ্যারোন্ডিসমেন্টে সোমবার বিকেলে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড নগর জীবনের এক গোপন দুর্বলতাকে সামনে নিয়ে এল। একটি আধুনিক বর্জ্য পুনর্ব্যবহার কেন্দ্র, যা প্রতিদিন ৯ লক্ষ প্যারিসবাসীর গৃহস্থালি বর্জ্য প্রক্রিয়াজাত করে। সেই গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো এক বিকেলের আগুনে সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়ে গেল। এর ফলে শুধু প্যারিস নয় গোটা ইউরোপীয় শহর পরিকল্পনার নকশার অবকাঠামো প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে ওঠে।
স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। তা মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে ছাদ ও মাটির নিচে থাকা স্থাপনাগুলোতে। আগুনের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে, এর কালো ধোঁয়া দেখা গেছে আইফেল টাওয়ার থেকেও। যদিও কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি, তবে এই অত্যাধুনিক রাজধানীর ঐতিহ্য আর আধুনিকতাকে ঢেকে ফেলছে অব্যবস্থাপনার ধোঁয়া।
ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হয় প্রায় ২০০ দমকলকর্মী ও ৬০টিরও বেশি অগ্নিনির্বাপক যান। এ সময় স্থানীয়দের অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেই ছবি ও ভিডিও পোস্ট করেন। শহরের কিছু অংশে ধোঁয়ার কারণে শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দেয়, বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে।
আরও পড়ুন:
মৌচাকের গোল্ডেন প্লাজায় অগ্নিকাণ্ড
প্যারিস পুলিশ ও জরুরি সেবাদাতা সংস্থা দ্রুতই এলাকা ঘিরে ফেলে। স্থানীয়দের নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নেওয়া হয় এবং সংশ্লিষ্ট রিং রোডের একটি অংশ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়। জনগণকে এলাকা এড়িয়ে চলার আহ্বান জানানো হয়। তবে সেই সঙ্গে উঠে এসেছে আরও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন- এই পুনর্ব্যবহার কেন্দ্রে যথাযথ অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ছিল কি? নিয়মিত ঝুঁকি নিরূপণ ও মেরামতের প্রক্রিয়া কতটা কার্যকর ছিল? ২০১৯ সালে চালু হওয়া এমন একটি কেন্দ্রে মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে এমন দুর্ঘটনা কেন?
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর টুইট বার্তায় দমকল বাহিনীর সাহসিকতার প্রশংসা যেমন এসেছে, তেমনি এই ঘটনার রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যাখ্যার দায়িত্বও অস্বীকার করা যায় না। নগর ব্যবস্থাপনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা এমন একটি অবকাঠামোয় দুর্যোগ মানেই এটি কেবল প্রযুক্তিগত ব্যর্থতা নয়, এটি নীতিগত অবহেলার প্রতিচ্ছবিও।
প্যারিসের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ইউরোপের মধ্যে অন্যতম উন্নত মডেল হিসেবে বিবেচিত হলেও শুধু প্যারিসের জন্য নয়, বরং বিশ্বের সব মহানগরের জন্য এই অগ্নিকাণ্ড ছিল এক সতর্কবার্তা।
আরও পড়ুন:
২৪ দিনে রেমিট্যান্স এল ১৪৯ কোটি ডলার