যে টিউমারগুলো ক্যানসারে পরিণত হয়

অধ্যাপক ডা. মো. ইয়াকুব আলী
০৭ এপ্রিল ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
যে টিউমারগুলো ক্যানসারে পরিণত হয়

টিউমার শব্দটি শুনে লোকে ভাবেন ক্যানসার, আবার ক্যানসার শুনে লোকে ভাবেন টিউমার। যেমনÑ লোকে বলেন, ব্রেইন টিউমার হয়েছে কিংবা ব্রেইন ক্যানসার হয়েছে! কিন্তু দুটো কি একই? মোটেই নয়। যেমন ব্রেস্ট টিউমার কিংবা ব্রেস্ট ক্যানসার দুটো এক নয়।

টিউমার হলো কিছু অস্বাভাবিক টিস্যুর সমাবেশ, যেখানে কোষগুলো অস্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সংখ্যা বৃদ্ধি করে।

টিউমার দুধরনের হয়। এক ধরনের টিউমার একটি জায়গায় বৃদ্ধি পেয়ে সেখানেই বসে থাকে। এগুলোর নাম বিনাইন টিউমার। এগুলো ক্ষতিকারক নয়। আরেক ধরনের টিউমারের ভেতর থাকা অস্বাভাবিক কোষগুলো রক্ত কিংবা লিম্ফ নামক কিছু রাসায়নিক পদার্থের মাধ্যমে শরীরের অন্য কোনো অংশে গিয়ে জমা হয়ে সেখানকার স্বাভাবিক কাজে ব্যাঘাত ঘটায়, নতুন কোনো টিউমার তৈরি করে, সেগুলোকে বলে ম্যালিগন্যান্ট টিউমার। এ টিউমারকে অন্যভাবে বলা হয় ক্যানসারাস টিউমার।

মানবদেহে প্রায় ২০০ ধরনের ক্যানসার জাতীয় সমস্যা আছে। ক্যানসার হলো মূলত শরীরের অনেক জায়গায় বিভিন্ন সমস্যার একটি সমষ্টি। এর শুরুটা শরীরের কোনো একটি অংশে হয়। তার পর যখন সেটি শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে, কেবল তখন তাকে ক্যানসার বলে।

সব টিউমার ক্যানসার নয়, কিছু কিছু টিউমার ক্যানসার, যখন সেই টিউমারগুলোর মধ্যে থাকা কোষগুলো শরীরের অন্য অংশে গিয়ে আরও নতুন টিউমার বা কাজে সমস্যা তৈরি করে। আবার সব ক্যানসার টিউমার নয়, যেখানে অস্বাভাবিক কোষগুলো টিস্যু আকারে কোথাও জমাট বেঁধে প্রকাশ পায়। যেমন ব্লাড ক্যানসারে এমন টিউমার হয় না।

অনেক নারীর ব্রেস্টে জীবনের যে কোনো সময়ে লাম্প বা চাকতির মতো বা পিণ্ডের মতো কিছু দেখা দিতে পারে। এ বাড়তি প্লিটি কেবল একটি টিউমার হতে পারে। এটিকে ভুল করে ব্রেস্ট ক্যানসার বলা যাবে না। কারণ চিকিৎসকরা এমন বাড়তি কোষের সমাবেশ কোথাও হলে প্রথমে তার সিটিস্ক্যান কিংবা এমআরআই করে নিশ্চিত হন এটি কেবল টিউমার কিনা। তার পর সেখান থেকে কিছু কোষ বায়োপসির নামক পরীক্ষার মাধ্যমে মাইক্রোস্কোপের নিচে রেখে কোষগুলো পরীক্ষা করে নিশ্চিত হন কোষগুলো ক্যানসার জাতীয় কোষ কিনা, তখন তেমন পরিবর্তন দেখলে তাকে ব্রেস্ট ক্যানসার বলা যায়। শুধু এমন টিউমার হলে প্রথমে কেবল ওষুধ দিয়ে, তার পর অপারেশন করে সেই বাড়তি অংশটি কেটে ফেলে টিউমারের চিকিৎসা করা হয়। সেই টিউমার যদি শরীরের অন্য কোথাও ছড়িয়ে যায়, শরীরে আরও বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তৈরি করে, তখন যে অংশে টিউমারটি হয়েছে সেটি প্রথমে অপারেশন করে কেটে ফেলার দরকার বা অবস্থায় থাকলে কেটে ফেলে দিতে হয়, সঙ্গে শরীরের অন্য অংশগুলোয় ছড়িয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক ক্যানসার কোষগুলো মেরে ফেলা অথবা তারা যাতে আর সংখ্যা বৃদ্ধি করতে না পারে, সেটা থামিয়ে দেওয়ার জন্য কিছু কেমিক্যালের মাধ্যমে কেমোথেরাপি এবং কিছু রে বা রশ্মির মাধ্যমে রেডিওথেরাপি দিয়ে ক্যানসারটির চিকিৎসা করার চেষ্টা করা হয়।

আশা করি, কারও টিউমার হলেই ক্যানসার হয়েছে- এমনটি বলবেন না, ভাববেনও না। টিউমার বা ক্যানসার হওয়া মানেই সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু নয়। ক্যানসার বা টিউমার শরীরের অন্য হাজার রোগের মতোই একটি রোগ বা সমস্যা। তবে শরীরের কোথাও এমন বাড়তি কোনো মাংসপিণ্ড, কোনো কারণ ছাড়া অনেকদিন ধরে অস্বাভাবিকভাবে শরীরের ওজন কমে যাওয়া, কোনো কারণ ছাড়াই দীর্ঘ সময় দুর্বল অনুভব করাÑ এমন কমন কিছু সমস্যার মুখোমুখি হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।

লেখক : রেডিয়েশন ও মেডিক্যাল অনকোলজিস্ট

অধ্যাপক ও প্রধান, অনকোলজি বিভাগ

এনাম মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, সাভার, ঢাকা

চেম্বার : আল-রাজি হাসপাতাল, ফার্মগেট, ঢাকা

০১৭৪৫৩৪৯৪১০, ০১৭৩২৪২৯৩৯০