শুধু ড্রপ ব্যবহারে শিশুর গ্লুকোমা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়
‘আমরা সবাই, গ্লুকোমা মুক্ত বিশ্ব চাই’- এই প্রতিপাদ্য নিয়ে ৯-১৫ মার্চ পালিত হলো বিশ্ব গ্লুকোমা সপ্তাহ। উদ্দেশ্য জনসচেতনতা বাড়িয়ে তোলা। আসুন, তার আগে জেনে নিই, জন্মগত গ্লুকোমা আসলে কী।
গ্লুকোমা চোখের এমন এক অবস্থা, যেখানে চোখের প্রেসার বা চাপ স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি থাকে। ফলে রেটিনাল নার্ভ বা স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে অন্ধত্ব নেমে আসে। শিশুও গ্লুকোমা নিয়ে জন্মগ্রহণ করতে পারে। জন্মগ্রহণের পর অন্য শিশুদের তুলনায় তার চোখের আকার বড় হয়। খুব ডাগর ডাগর চোখ থাকে। মানে পুরো চোখে কালো মণি। কর্নিয়া মনে হবে চোখজুড়েই রয়েছে। অনেক ভারী ও ভেজা ভেজাভাব থাকে। শিশুর চোখ দিয়ে পানি পড়ে এবং আলো সহ্য করতে পারে না। একদিনের শিশুও আলো দেখতে পারে না। আলো দেখলেই সে প্রতিক্রিয়া দেখায়। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। এছাড়া অনেক শিশুর অ্যালার্জির খুব প্রবণতা থাকে। অন্য যে ওষুধই দেওয়া হোক, স্টেরয়েড দিলে সে ভালো হয়ে যায়। পাঁচ শতাংশের স্টেরয়েডের কারণে গ্লুকোমা হতে পারে। শিশুর চোখের পরীক্ষা করা যেমন কঠিন, প্রেসার মাপাও। এসব ঝামেলার কারণে অনেক অভিভাবক চিকিৎসকের কাছে আসতে চান না। এমন এক সময় আসেন, যখন শিশুটি প্রায় অন্ধ হয়ে যাওয়ার পর্যায়ে।
লক্ষণ : শিশুর চোখ দিয়ে পানি পড়ে, সরাসরি আলোর দিকে তাকাতে পারে না। চোখের মণি ঘোলা হয়ে যায়। শুরুতে এ ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। সমস্যা বাড়তে থাকলে চোখের মণি অনেক বড় হয়ে যায়। চোখের যখন প্রেসার বাড়ায় স্থায়ীভাবে অন্ধত্বের দিকে চলে যায় চোখ।
পরীক্ষা : গ্লুকোমা শনাক্ত করার কিছু পরীক্ষা আছে। চোখের ইন্ট্রাকুলার চাপ মেপে দেখা। যাকে বলে টনোমেট্রি। অপটিক নার্ভ ড্যামেজ পরীক্ষা করে দেখা। এ কাজে ডায়ালেটেড আই এক্সামিনেশন ও ইমাজিং টেস্ট করা হয়। ভিশন লস পরীক্ষা বা ভিজুয়্যাল ফিল্ড টেস্ট করা হয়। কর্নিয়ার পুরুত্ব পরীক্ষা করা হয়। একে বলে প্যাকিমেট্রি। চোখের ড্রেনেজ অ্যাঙ্গেল পরীক্ষা করা হয়। যাকে বলে গোনিওস্কোপি।
আরও পড়ুন:
শীতে গর্ভবতী মায়েদের যত্ন
চিকিৎসা : লক্ষণ দেখা দিলে শিশুকে যে কোনো চক্ষুচিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। গ্লুকোমার নানারকম চিকিৎসা রয়েছে। ওষুধ প্রয়োগ বা অপারেশনের মাধ্যমে চিকিৎসা করা যায়। সাধারণত বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই চোখের ড্রপের মাধ্যমে শিশুর গ্লুকোমা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। আরও কিছু চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যে আছে- লেজার থেরাপি, ফিল্টারিং সার্জারি, ড্রেনেজ টিউবস, মিনিমালি ইনভ্যাসিভ গ্লুকোমা সার্জারি। তবে রোগীর সমস্যা বুঝে ও পরীক্ষা করে তবেই চিকিৎসক সিদ্ধান্ত নেবেন কোন পদ্ধতিটি কার্যকর হবে। চিকিৎসা করতে অহেতুক দেরি করলে দৃষ্টি হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। পরে অপারেশন করেও আর লাভ হয় না। রোগের প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা করালে গ্লুকোমা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। তাই শিশুর চোখ স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বড় মনে হলেই শিশু চক্ষু গ্লুকোমা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
লেখক : চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ
পরিচালক ও সিনিয়র কনসালট্যান্ট
আরও পড়ুন:
জরায়ুমুখ ক্যানসারের লক্ষণগুলো জেনে রাখুন
বাংলাদেশ আই হসপিটাল, মালিবাগ, ঢাকা।
০১৭৮৯৭৭৯৯৫৫; ০৯৬১৩৯৬৬৯৬৬