নবজাতকের ত্বকের যত্ন নেবেন যেভাবে
নবজাতকের যত্নের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে ত্বকের যত্ন। নবজাতকের ত্বক অত্যন্ত কোমল, নাজুক ও স্পর্শকাতর। কারণ নবজাতকের ত্বকে কেরাটিন স্তরটি তৈরি থাকে না। তাই সহজেই ত্বক ভেদ করে বিভিন্ন কেমিক্যাল, ধুলোবালি বা জীবাণু ত্বকের ভেতরে প্রবেশ করে এবং ত্বকের ক্ষতি করে। আজ আমরা নবজাতকের ত্বকের যত্ন নিয়ে কথা বলব।
ভার্নিক্স : জন্মের পরপর নবজাতকের ত্বকে আঠালো ক্রিমের মতো যে পদার্থটি লেগে থাকে, সেটাই ভার্নিক্স। শিশু গর্ভে থাকাকালীন পানিতে ডুবে থাকে। এ অবস্থায় শিশুর ত্বককে ঘর্ষণজনিত ক্ষতি থেকে ভার্নিক্স রক্ষা করে থাকে। শিশুর জন্মের পর এই ভার্নিক্স ময়েশ্চারাইজার এবং জীবাণু প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। জন্মের পর শিশুর ত্বক থেকে ভার্নিক্স মুছে ফেলা উচিত নয়। জন্মের পর, শিশুকে জীবাণুমুক্ত নরম সুতি কাপড় দিয়ে চেপে চেপে পানি মুছে ফেলতে হবে এবং আরেকটি নরম সুতি কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে রাখতে হবে, যাতে নবজাতক শিশু উষ্ণ থাকে।
নবজাতকের গোসল : শিশুর জন্মের ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত গোসল দেওয়ার প্রয়োজন নেই। দেখা গেছে, নাভি পড়ে যাওয়ার পরে গোসল করানো হলে তাতে নাভিতে জীবাণু সংক্রমণের হার কমে যায়। পায়খানা বা বমির কারণে শিশুর শরীর যদি নোংরা হয়ে যায়, তা হলে সেটি কুসুম গরম পানি এবং নরম সুতি কাপড় দিয়ে মুছে ফেলা উচিত।
মাথার ত্বকের যত্ন : গোসলের সময় নরম ব্রাশ এবং শ্যাম্পু দিয়ে ও ময়লা পরিষ্কার করে দিতে হবে। নবজাতকের মাথায় তেল দেবেন না। তাতে খুশকি বা ফোঁড়া হতে পারে।
আরও পড়ুন:
শীতে গর্ভবতী মায়েদের যত্ন
লোশন তেল বা পাউডার ব্যবহার : নবজাতকের ত্বকে কোনো ধরনের লোশন বা পাউডার লাগানোর প্রয়োজন নেই। ভ্রƒ বা চোখে কাজল দিলেও তাতে জীবাণু সংক্রমণ হতে পারে। সরিষার তেল শিশুর ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। গোসলের আগে বা পরে অলিভ অয়েল বা সানফ্লাওয়ার সিড অয়েল দিয়ে মেসেজ করা ত্বকের জন্য উপকারী।
নাভির যত্ন : জন্মের পরপরই জীবানুমুক্ত সুতা বা ক্ল্যাম্প দিয়ে নাভি বেঁধে কেটে দেওয়া হয় এবং চিকিৎসক তার মধ্যে ঘন জীবাণুনাশক দ্রবণ দিয়ে থাকেন, যা খুব কার্যকর। এর পর নাভিতে অন্য কিছু লাগানোর প্রয়োজন নেই। নাভি শুকনো ও পরিচ্ছন্ন রাখাই যথেষ্ট।
নবজাতকের কাপড় : বাজারে পাওয়া যায়Ñ এমন কাপড় নবজাতকের জন্য সব সময় উপযোগী নাও হতে পারে। তাই সুতি কাপড় ধুয়ে ইস্ত্রি করে পরানো উচিত। মোটা কাপড় বা বড় তোয়ালে দিয়ে না পেঁচিয়ে নরম সুতি কাপড় কয়েক ভাঁজ করে পরানো ভালো। মাথা সবসময় ঢেকে রাখা উচিত।
আরও পড়ুন:
জরায়ুমুখ ক্যানসারের লক্ষণগুলো জেনে রাখুন
নবজাতকের পরিচ্ছন্নতা : অনেক অভিভাবক ভেজা বা ওয়েট টিস্যু দিয়ে শিশুর পায়খানা-প্রস্রাব পরিষ্কার করে থাকেন। টিস্যুতে অ্যালকোহল ও পারফিউম থাকে, যা শিশুর ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। নরম সুতি কাপড় বা তুলা কুসুম গরম পানিতে ভিজিয়ে প্রস্রাব-পায়খানার স্থান পরিষ্কার করে দেওয়া ভালো। পরে একটি শুকনো কাপড় দিয়ে চেপে চেপে ভেজা ত্বক মুছে ফেলতে হবে। ডায়াপার পরানোর আগে ন্যাপি ক্রিম ব্যবহার করুন, যাতে ত্বক সুরক্ষিত থাকে। একটি ডায়াপার কোনো অবস্থায়ই চার ঘণ্টার বেশি পরিয়ে রাখবেন না। এতে ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
লেখক : নবজাতক, শিশু-কিশোর রোগ বিশেষজ্ঞ
বিভাগীয় প্রধান, এনাম মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল
আরও পড়ুন:
শীতে মুলা কেন খাবেন?
চেম্বার : আলোক মাদার অ্যান্ড চাইল্ড কেয়ার
মিরপুর-৬, ঢাকা। হটলাইন : ১০৬৭২