গ্লুকোমা সম্পর্কে জানুন, নিজেকে ভালো রাখুন
‘গ্লুকোমামুক্ত বিশ্ব চাই’ প্রতিপাদ্য নিয়ে মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহজুড়ে চলছে বিশ্ব গ্লুকোমা সপ্তাহ। প্রতিবছরের ৯ থেকে ১৫ মার্চ বিশ্ব গ্লুকোমা সপ্তাহ। দিবস উপলক্ষে নানা আয়োজন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।
গ্লুকোমা : গ্লুকোমা চোখের এক জটিল সমস্যা। দ্রুত শনাক্ত ও চিকিৎসা না হলে এতে স্থায়ী অন্ধত্বের ঝুঁকি থাকে। যেহেতু এ রোগে কোনো পূর্বসতর্কতা বা উপসর্গ থাকে না, তাই রোগটি কীভাবে শনাক্ত করা হয় বা অন্ধত্ব প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নিতে হয়, তার একটা সম্যক ধারণা থাকা প্রয়োজন। বিশ্বব্যাপী গ্লুকোমার প্রাদুর্ভাব রীতিমতো ভয়াবহ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ৪০ থেকে ৮০-এর মধ্যে যাদের বয়স, তাদের প্রায় ৩ দশমিক ৫ শতাংশ গ্লুকোমায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন। বিশ্বে প্রায় আট কোটি মানুষ গ্লুকোমায় আক্রান্ত। ২০৪০ সালে গ্লুকোমা আক্রান্তের সংখ্যা ১১২ মিলিয়নে (১১ কোটি ২০ লাখ) দাঁড়াবে। এশিয়ায় গ্লুকোমায় আক্রান্তের হার বেশি (৩-৫ শতাংশ)। এর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শনাক্তবিহীন, যার অর্থ তারা প্রায় সবাই ভবিষ্যতে কোনো এক সময় স্থায়ী অন্ধত্বের শিকার হবেন।
গ্লুকোমা হলে করণীয় : গ্লুকোমা হলে চোখের প্রেশার স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে। ফলে চোখে দৃষ্টি পরিবাহী স্নায়ু বা অপটিক নার্ভ স্থায়ীভাবে অকেজো হয়ে পড়ে। ফলে অন্ধত্ব অবধারিত হয়ে পড়ে। প্রাথমিক অবস্থায় চোখের বাড়তি প্রেসারের কারণে কোনো উপসর্গ ছাড়াই ধীরে ধীরে স্নায়ু অবশ হতে থাকে। একসময় স্থায়ীভাবে অকেজো হয়ে যায়। এ প্রক্রিয়ায় বছরের পর বছর সময় লাগে, কিন্তু তা নীরবে সংঘটিত হতে থাকে।
বেশি ঝুঁকিতে কারা : সাধারণত পারিবারিক প্রভাবে বেশির ভাগ রোগী আক্রান্ত হয়ে থাকেন। তাই যাদের পরিবারে গ্লুকোমার ইতিহাস আছে, তারা অধিকতর ঝুঁঁকিপূর্ণ ব্যক্তি। ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিদের মধ্যে এর প্রাদুর্ভাব বেশি। চল্লিশের পরই সাবধান হতে হবে। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, দূরদৃষ্টির সমস্যায় আক্রান্ত যারা, তাদের ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি।
আরও পড়ুন:
শীতে গর্ভবতী মায়েদের যত্ন
গ্লুকোমা নির্ণয় : ঝুঁঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের উচিত গ্লুকোমা আছে কিনা বা ভবিষ্যতে এতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁঁকি আছে কিনা, তা নিয়মিত যাচাই করে নেওয়া। গ্লুকোমা শনাক্ত করার সহজ উপায়, চক্ষু চিকিৎসকের কাছে গিয়ে চোখের প্রেসার নির্ণয় করা। সঙ্গে স্নায়ুর অবস্থা জেনে নিতে ভিজ্যুয়াল ফিল্ড টেস্ট করা।
পরামর্শ : গ্লুকোমা সাসপেক্ট বলে একধরনের রোগী আছেন, তাদের ভবিষ্যতে গ্লুকোমা হওয়ার ঝুঁকি আছে। এমনটি হলে তঁদের নিয়মিত ফলোআপ বা তত্ত্বাবধানে থাকতে হবে। গ্লুকোমা সম্পর্কে সাধারণ সচেতনতা বাড়াতে এ সম্পর্কে জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে হবে। কমিউনিটিতে শনাক্তকরণের জন্য প্রচুর স্ক্রিনিং বা শনাক্তকরণ প্রোগ্রাম করা প্রয়োজন।
নিয়মিত চোখ পরীক্ষাই গ্লুকোমাজনিত অন্ধত্ব নিবারণের উপায়। একবার শনাক্ত হলেই শুধু অন্ধত্ব প্রতিরোধের সুযোগ তৈরি হয়। তখন নিয়মিত চিকিৎসায় থাকলে অনেক ক্ষেত্রেই অন্ধত্ব প্রতিরোধ বা বিলম্বিত করা সম্ভব। তাই শুরু থেকেই সচেতন হই নিরাপদ থাকি।
আরও পড়ুন:
জরায়ুমুখ ক্যানসারের লক্ষণগুলো জেনে রাখুন
লেখক : অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান
মার্কস মেডিক্যাল কলেজ, ঢাকা
চেম্বার : আইডিয়াল আই কেয়ার সেন্টার
আরও পড়ুন:
শীতে মুলা কেন খাবেন?
লিং রোড, শ্যামলী, ঢাকা। ০১৯২০৯৬২৫১২