জরায়ুর মুখে ক্যানসারে নিয়মিত স্ক্রিনিং করুন
উন্নয়নশীল দেশে নারীর জরায়ুমুখ ক্যানসারের প্রকোপ ৮০ শতাংশ বলে বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায়। সাধারণত নারীরা যত ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে থাকে, তার মধ্যে তৃতীয় হলো জরায়ুমুখের ক্যানসার। বাংলাদেশে প্রতিবছর জরায়ুমুখের ক্যানসারে হাজার হাজার নারী আক্রান্ত হন এবং মৃত্যুবরণ করে থাকেন। ‘ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি অব রিসার্স অন ক্যানসার’র (আইএআরসি) তথ্যমতে, বাংলাদেশে প্রতিবছর ১২ হাজারের বেশি নারী জরায়ুমুখ ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে থাকেন এবং প্রায় সাড়ে ৬ হাজার নারী মারা যান এই ক্যানসারে। গবেষণাটি হয়েছিল ২০১৮ সালে। জরায়ুমুখের কোষগুলো অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পায়। তবে শারীরিক এ পরিবর্তন একদিনে হয় না। জরায়ুমুখের স্বাভাবিক কোষগুলো বিভিন্ন কারণে পরিবর্তিত হয়ে ক্যানসার কোষে রূপান্তরিত হতে বেশ সময় লাগে। জরায়ুমুখে অনেকদিন ধরে ক্যানসারপূর্ব অবস্থা থাকতে পারে, যা সাধারণত রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায় না। ক্যানসারপূর্ব অবস্থা খালি চোখেও দেখা যায় না। জরায়ুমুখে ক্যানসার ৩৫ বছর এবং ৫০-৫৫ বছর বয়সে বেশি দেখা দেয়। এ ক্যানসার হওয়ার কোনো সুনির্দিষ্ট একক কারণ নেই। তবে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস এ ক্যানসারের জন্য দায়ী করা হয়। শুধু অনিরাপদ শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে জরায়ুমুখ সংক্রমিত হয়ে এ ক্যানসারে রূপান্তরিত হয়। রোগটি হতে পারে তাদের যারা নিরাপদ যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে অসচেতন; বাল্যবিবাহ, অল্প বয়সে গর্ভধারণ, অধিক ও স্বল্প বিরতিতে গর্ভধারণ, বহুগামিতা, অনেকদিন ধরে জন্মনিয়ন্ত্রণের বড়ি সেবন, ধূমপান ইত্যাদি করে থাকে। রোগের উপসর্গগুলো হলোÑ যোনিপথে অতিরিক্ত সাদা স্রাব, বাদামি বা রক্তমিশ্রিত বেশি স্রাব, অনিয়মিত রক্তস্রাব, সহবাসের পর রক্তক্ষরণ, ঋতুস্রাব স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর পুনরায় রক্তক্ষরণ, তলপেটে বা কোমরব্যথা ইত্যাদি।
রোগের কারণ : হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচআইভি) মূলত এই ক্যানসার হওয়ার জন্য দায়ী বলে মনে করা হয়। ভাইরাসটি যৌনবাহিত। যৌনমিলনের ফলে নারীদেহে তা প্রবেশ করে রোগটি সৃষ্টি করে থাকে।
স্ক্রিনিং করা প্রয়োজন যাদের : ৩০ থেকে ৬০ বছরের নারীকে ৩ বছর পরপর জরায়ুমুখ পরীক্ষা করাতে হবে। ১৮ বছরের আগে (বিবাহিত নারীর ক্ষেত্রে ২৫ বছর হলে) জরায়ুমুখ পরীক্ষা করাতে হবে। আবার বিয়ের বয়স ১০ বছরের বেশি হলে সে ক্ষেত্রে ৩০ বছরের কম বয়স হলেও জরায়ুমুখ পরীক্ষা করাতে হবে। রোগটি প্রতিরোধ করা যায়। এ জন্য নারীদের শিক্ষিত হয়ে নিরাপদ যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে হবে। বেশি সন্তান নেওয়া যাবে না। সঠিক জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে। ৩০ থেকে ৬০ বছর বয়সী সব নারীর জরায়ুমুখের ক্যানসার স্ক্রিনিং কর্মসূচির আওতাধীন থেকে প্রতি ৩ বছর পরপর জরায়ুমুখ পরীক্ষা করাতে হবে। বর্তমানে আমাদের দেশে জরায়ুমুখের ক্যানসার প্রতিষেধক টিকা পাওয়া যাচ্ছে। এটি গ্রহণ করেও ক্যানসারমুক্ত থাকা যায়।
আরও পড়ুন:
শীতে গর্ভবতী মায়েদের যত্ন
লেখক : রেডিয়েশন ও মেডিক্যাল অনকোলজিস্ট
অধ্যাপক ও প্রধান, অনকোলজি বিভাগ
আরও পড়ুন:
জরায়ুমুখ ক্যানসারের লক্ষণগুলো জেনে রাখুন
এনাম মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল সাভার, ঢাকা
চেম্বার : আল-রাজী হাসপাতাল, ফার্মগেট, ঢাকা
আরও পড়ুন:
শীতে মুলা কেন খাবেন?
০১৬৪৪৪৩৩৪৯৮; ০১৭৩২৪২৯৩৯০