শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য হলে যে কাজগুলো করবেন
কোষ্ঠবদ্ধতা একটি মারাত্মক শারীরিক সমস্যা। সাধারণত দুয়েক দিন পরপর মলত্যাগের চাপ অনুভূত হওয়া এবং শুষ্ক ও কঠিন মল নিষ্কাশনই হলো কোষ্ঠকাঠিন্য বা কোষ্ঠবদ্ধতা নামে পরিচিত। এ সমস্যা যেমন বড়দের হয়ে থাকে, তেমনি শিশুদেরও হয়ে থাকে। এতে শিশুরা যে শুধু কষ্ট পায় তা নয়, ব্যথা থেকে শুরু করে মলের সঙ্গে রক্তপাত, এমনকি পায়ুপথের মুখ পর্যন্ত ফেটে যেতে পারে।
শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ: আঁশযুক্ত খাবার না-খাওয়ার পরিবর্তে ব্লেন্ড করা খাবার বেশি বেশি খাওয়া এবং খাবারে শাকসবজি, ফলমূল ইত্যাদি না থাকা, পানি কম পান করা, কৌটার দুধ খাওয়ালে এবং তা সঠিক পদ্ধতিতে তৈরি করতে না পারলে, গরুর বেশি বেশি করে দুধ পান করলে, খেলাধুলা কম করলে, ইচ্ছাকৃতভাবে পায়খানা চেপে রাখলে, পরিবারের অন্য সদস্যদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকলে শিশুও এ সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারে।
শিশুকে প্রতিদিন সময়মতো টয়লেটের অভ্যাস না করালে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। কারণ অনিয়মিতভাবে মলত্যাগ করালে বা অভ্যাস না করালে শরীর সময় নিরূপণ করতে পারে না। একবার কোনো শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য হলে টয়লেট করার ব্যাপারে তার মনে এক ধরনের ভীতির জন্ম নিতে পারে। সে ভাবতে পারে, মলত্যাগ করতে গেলে বুঝি আবার কষ্ট হবে। এটা চিন্তা করে সে মল চেপে রাখার চেষ্টা করে। এর ফলে কন্সটিপেশন হয়ে যায়।
এ ছাড়া কিছু ওষুধ, যেমন-Iron, Anti- Depressant, Anti-Cholinergic সেবন করলে, কিছু রোগ (Cereberal Palsy, Down Syndrome, Anal fissure & Stenosis, Hypothyrodism Hirschprung's diseases) কোনও শিশুকে আক্রান্ত করলে সে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যায় ভুগতে পারে।
আরও পড়ুন:
শীতে গর্ভবতী মায়েদের যত্ন
শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রতিকার : শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে কয়েকটি অভ্যাসের পরিবর্তন করাতে হবে। প্রথম ৬ মাস শুধু মায়ের বুকের দুধ ও তার পরে ২ বছর পর্যন্ত অন্যান্য খাবারের সঙ্গে মায়ের বুকের দুধ দিলে এ সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে। তোলা ও ফমূর্লা দুধ কোষ্ঠকাঠিন্যের অন্যতম কারণ। মিহি বা ব্লেন্ড করা খাবার, বেশি তেলে ভাজা খাবার পরিহার করতে হবে। বেশি করে শাকসবজি, ফল, ছোট মাছ এবং অন্যান্য আঁশযুক্ত খাবার শিশুকে বেশি বেশি করে খাওয়াতে হবে। প্রচুর পানি ও অন্যান্য পানীয় বেশি বেশি পান করাতে হবে। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ১ গ্লাস পানি পান করানো সম্ভব হলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
অতিরিক্ত দুধ, মাংস, মাংসের তৈরি খাবার পরিহার করতে হবে। নিয়মিতভাবে ৫ থেকে ১০ মিনিটের জন্য শিশুকে একটি নির্দিষ্ট সময়ে টয়লেটে বসানোর অভ্যাস করাতে হবে। অনেক সময় শিশুরা ইচ্ছা করে টয়লেট আটকে রাখে। সুতরাং নিয়মিত টয়লেট করতে তাকে উৎসাহ দিতে হবে। কোনও অবস্থায় তাকে তিরষ্কার বা বকাঝকা করা যাবে না। শিশুদের খেলাধুলার অভ্যাস করাতে হবে। ঘরোয়া ব্যায়াম ও নিজের কাজ গোছানোর মতো বিষয়গুলোয়ও অভ্যাস করানো জরুরি। তাতে কায়িক পরিশ্রম হবে, হজমশক্তি বাড়বে এবং পেট পরিষ্কার থাকবে।
চিকিৎসা : পরপর ২-৩ দিন টয়লেট না করলে পায়খানার রাস্তায় গ্লিসারিন সাপোজিটরি দেওয়া যায়। এতে কাজ না হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
লেখক : শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ
এমবিবিএস, ডিসিএইচ পেডিয়াট্রিক্স
চেম্বার : আলোক মাদার অ্যান্ড চাইল্ড কেয়ার
আরও পড়ুন:
জরায়ুমুখ ক্যানসারের লক্ষণগুলো জেনে রাখুন
মিরপুর-৬, ঢাকা। হটলাইন : ১০৬৭২