সাত দফা দাবিতে বায়োকেমিস্ট ও মলিকুলার বায়োলজিস্টদের সংবাদ সম্মেলন

নিজস্ব প্রতিবেদক
০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৬:৪৯
শেয়ার :
সাত দফা দাবিতে বায়োকেমিস্ট ও মলিকুলার বায়োলজিস্টদের সংবাদ সম্মেলন

‘ফ্যাসিস্ট রেজিমের’ শাসনামলে প্রস্তাবিত স্বাস্থ্য সেবা ও সুরক্ষা অধ্যাদেশ-২০২৪ বৈষম্যমূলক ধারার (৯ এর ৪ উপধারা) সংশোধনসহ যথাযথ সংস্কারের জন্য সাত দফা দাবি ও প্রস্তাবনা জানিয়েছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ক্লিনিক্যাল বায়োকেমিষ্টস (বিএসিবি)। আজ শনিবার বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনেরর (বিএমএ) সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলন ও মতবিনিময় সভায় এ দাবিসমূহ জানানো হয়। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ক্লিনিক্যাল বায়োকেমিস্টের (বিএসিবি) আহবায়ক কমিটি এ সভার আয়োজন করে।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ বিএসিবির উপদেস্টামন্ডলীদের মধ্য থেকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হোসাইন উদ্দিন শেখর এবং সংবাদ সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) ও বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের (বিএমআরসি) নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য ড. সোহেল আহমেদ।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা অনলাইনে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন ও বায়োকেমিস্টদের দাবির পক্ষে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে অতিদ্রুত সমস্যা সমাধানের জন্য দাবি জানান। উক্ত সংবাদ সম্মেলনে অনলাইনে জুম সংযোগে দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আতিয়ার রহমান।

আলোচনা সভায় অন্যান্যদের মধ্যে আরও অংশগ্রহণ করেন বিএসিবির আহ্বায়ক মো. মাহবুবুর রহমান, যুগ্ম আহ্বায়ক মো. শফিকুর রহমান ও অধ্যাপক ফাতেমা খান মজলিশ, সদস্য মো. আব্দুর রাজ্জাক ও ড. আব্দুল মোত্তালিব। শিক্ষার্থীদের পক্ষ হতে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র মমিনুল ইসলাম বিধান।

শিক্ষার্থীদেরকে তাদের নিজস্ব সেক্টরে স্বাধীনভাবে কাজ করার অধিকার দিলে ব্রেইন ড্রেইনের মতো বিষয় গুলো কমিয়ে আনা সম্ভব। স্বাস্থ্যখাতে যথাযথ উন্নতি সাধন করতে হলে মেডিকেল সাইন্সের সঙ্গে যুক্ত বায়োকেমিস্ট, মলিকুলার বায়োলজিস্ট, মাইক্রোবায়োলজিষ্টদের তাদের নিজস্ব সেক্টরে কাজ করার অধিকার ও ন্যায্য সুবিধাগুলো নিশ্চিত করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্রী সানজিদা হোসেন মোহিনী সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে বায়োকেমিস্ট্রি বিষয়ে লেকচারার পুনঃনিয়োগ করার দাবি জানান এবং পিএসসিতে বায়োকেমিস্টদের জন্য আলাদা টেকনিক্যাল ক্যাডারভুক্ত করার সুযোগ আবশ্যিকভাবে অন্তর্ভুক্ত করার জোর দাবী জানান।

আলোচনা সভায় বক্তারা খসড়া স্বাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষা অধ্যাদেশ-২০২৪-এর স্বাস্থ্য সুরক্ষা নীতিতে বৈষম্য সৃষ্টিকারী ৯ নম্বর ধারার ৪ নম্বর উপধারা সংযোজিত হওয়ায় স্বাস্থ্যসেবা খাতে ল্যাবরেটরিতে রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য ভুল এবং পরবর্তীতে তা থেকে রোগের চিকিৎসায় সৃষ্ট ঝুঁকি, ক্ষতি, ও সংকট নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

প্রস্তাবিত খসড়া স্বাস্থ্য সুরক্ষা নীতিতে ৯ নম্বর ধারার ৪ নম্বর উপধারায় বলা হয়েছে যে, যেকোনো ল্যাবরেটরির রিপোর্ট বিএমডিসির রেজিস্টার্ড চিকিৎসক ছাড়া অন্য কেউ স্বাক্ষর করতে পারবেন না। অর্থাৎ বায়োকেমিষ্টরা যে এতদিন ধরে ল্যাবরেটরি টেস্টের মান উন্নয়নে ভূমিকা রেখে রিপোর্ট সাক্ষর করে আসছেন তা আর করতে পারবেন না। এ বিষয়ে সভায় উপস্থিত সকলে তীব্র প্রতিবাদ করেন এবং বায়োকেমিস্টদের পক্ষ হতে ৭ দফা দাবি ও প্রস্তাবনা পেশ করেন।

বায়োকেমিস্টদের সাত দফা:

১. স্বাস্থ্য নীতিমালায় বায়োকেমিস্টদের স্বীকৃতি: প্রস্তাবিত ২০২৪ স্বাস্থ্যনীতিতে বায্যেকেমিক্যাল, ইমিউনোলজিক্যাল এবং মলিকুলার টেস্টে বায়োকেমিস্টদের স্বাক্ষর প্রদানের বিষয় টি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

২. বায়োকেমিস্টদের পেশাগত সুরক্ষা: যুগোপযোগী স্বাস্থ্য নীতি প্রণয় নের মাধ্যমে বায়োকেমিস্টদের কর্মপরিধি এবং পেশাগত সুরক্ষার জন্য উপযুক্ত নীতিমালা তৈরি করতে হবে।

৩. মেডিক্যাল ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরির লাইসেন্স: লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে ডাক্তারদের পাশাপাশি বায়োকেমিস্ট বা ক্লিনিক্যাল বায়োকেমিস্ট পদ বাধ্যতামূলক করতে হবে।।

৪. সরকারি হাসপাতালে পুনঃনিযোগ: সরকারি মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতালসমূহে বায়োকেমিস্ট লেকচারার নিয়োগ এবং বায়োকেমিস্ট পদ পুনঃস্থাপন করতে হবে।

৫. বায়োকেমিস্টদের পদ সৃষ্টির উদ্যোগ: বিশেষায়িত হাসপাতাল এবং জেলা সদর হাসপাতালগুলোতে বায়োকেমিস্ট/ল্যাবরেটরি সায়েন্টিস্ট পদ সৃষ্টির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

৬. কমিটিতে প্রতিনিষিদ্ধ: স্বাস্থ্যনীতি নির্ধারণী কমিটিতে বিএসিবির একজন প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

৭. পদোন্নতির সুযোগ: সুনির্দিষ্ট অর্গানোগ্রাম এর মাধ্যমে বিভিন্ন পদের পদোন্নতির পথ সুগম করতে হবে।

উল্লেখ্য বিএসিবি আহ্বায়ক কমিটি ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা, স্বাস্থ্য উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী, স্বাস্থ্য সচিব (শিক্ষা ও সেবা) এবং স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের নিকট স্মারকলিপি পেশ করেছেন। স্মারকলিপিতে এসব দাবির যৌক্তিকতা এবং বিদ্যমান অধ্যাদেশ সংস্কারের গুরুত্বের উপর আলোকপাত করেন।

সভায় বক্তারা প্রণীত খসড়া স্বাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৪ এর স্বাস্থ্য সুরক্ষা নীতিতে সংযোজিত বৈষম্য সৃষ্টিকারী অযৌক্তিক, অগ্রহণযোগ্য ও বিভ্রান্তিমূলক ৯ নং ধারার ৪ নং উপধারার অপসারণ/পরিমার্জন সংশোধনের মাধ্যমে সেবা খাতে বিভিন্ন ল্যাবরেটরিতে কর্মরত বায়োকেমিস্টদের অবদানের যথাযথ স্বীকৃতি দিয়ে স্বাস্থ্য সেবা ও সুরক্ষা আইন প্রণয়ন জরুরি বলে একমত হন।

সভায় উপস্থিত সকলে এব্যাপারে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলার ব্যাপারে একমত হন এবং সে লক্ষ্যে শিগগিরই গণমাধ্যমের সহায়তা নিয়ে স্বাস্থ্য সেবা ও সুরক্ষা আইনে যথাযথ সংস্কার না করা হলে সম্ভাব্য ঝুঁকি, ক্ষতি ও সংকটের বিষয় নীতি নির্ধারক ও জনগণের সামনে উপস্থাপন করবার লক্ষ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।