বাকৃবিতে ‘জয় বাংলা’ গান বাজিয়ে এক শিক্ষার্থী দুইবার বহিষ্কার
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) প্রশাসনের বিরুদ্ধে একই শিক্ষার্থীকে দুইবার বহিষ্কার করার অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহজালাল হলের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থীদের হল ফিস্ট অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারণামূলক গান বাজানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের এক শিক্ষার্থীকে দুই সেমিস্টারের জন্য বহিষ্কার করা হয়।
পরবর্তীতে কোনো আপিল ছাড়াই সেই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করার পরের দিন তাকে আবার হল থেকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে প্রশাসনের এই বহিষ্কার প্রত্যাহারের দাবিতে গতকাল সন্ধ্যায় বিক্ষোভ করেছে শাহজালাল হলের শিক্ষার্থীরা।
বহিষ্কৃত ওই শিক্ষার্থী জানান, ওইদিন শাহজালাল হলে ১ম বর্ষের শিক্ষার্থীদের অনুষ্ঠান চলছিল। গানগুলোও ১ম বর্ষের শিক্ষার্থীরাই বাজিয়েছিলেন। তিনি শুধু পাশে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন। গান বাজানোর ঘটনার সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা না থাকার পরেও হল প্রভোস্ট ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে তাকে হেনস্থা করার জন্য এ সকল কাজ করছেন।
হল প্রভোস্টের সঙ্গে ব্যক্তিগত আক্রোশের বিষয়ে তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রদল নেতার সঙ্গে তার সুসস্পর্ক রয়েছে। এদিকে ছাত্রদলের আরেক নেতা শাহজালাল হলে প্রভাব বিস্তার করার প্রচেষ্টায় আছেন। একারণেই ওই শিক্ষার্থীকে হল থেকে সরানোর জন্য এমন কাজ করছেন হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদিউজ্জামান খান। বার বার এভাবে শাস্তি দেওয়া ও শাস্তি পাল্টানোর ঘটনাকে প্রশাসনের অন্যায্য ও প্রতিহিংসামূলক আচরণ হিসেবে দেখছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।
প্রশাসনিক নথিপত্র থেকে জানা যায়, ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীকে গত ২ ফেব্রুয়ারি (রবিবার) প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘শিক্ষার্থীদের শৃঙ্খলা বিধি’ অনুযায়ী শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে দুই সেমিস্টারের (১২ মাস) জন্য বহিষ্কার করা হয়। পরে গতকাল (৫ ফেব্রুয়ারি) শাস্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীর কোনো প্রকার আনুষ্ঠানিক আবেদন ছাড়াই ওই শাস্তির আদেশ বাতিল করে নোটিশ জারি করা হয়। এরপর বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) ওই শিক্ষার্থীকে হল থেকে এক বছরের জন্য বহিষ্কারাদেশ জারি করা হয়।
শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বহিষ্কারাদেশ তুলে নেওয়ার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা শাখার এডিশনাল রেজিস্ট্রার মো. সারওয়ার জাহান বলেন, ‘এখানে প্রশাসনিক কিছু ত্রুটি ছিল। হলভিত্তিক সমস্যায় প্রাধ্যক্ষই সকল কিছু নির্ধারণ করেন। একারণেই প্রথমে শিক্ষার্থীকে একাডেমিক বহিষ্কার করা হলেও পরবর্তীতে সেটি বাতিল করা হয়েছে। হল প্রভোস্ট পরবর্তীতে তার বিষয়টি নিয়ে কাজ করেছেন।’
এ বিষয়ে শাহজালাল হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদিউজ্জামান খান বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থী যখন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারণার ওই গানটি বাজাচ্ছিলেন তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তাকে প্রথমে তার শিক্ষা কার্যক্রম থেকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়। পরে ওই শিক্ষার্থীর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে শাস্তি কিছুটা কমিয়ে তাকে হল থেকে একবছরের জন্য বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ১ম বর্ষের প্রায় ৪০ জন শিক্ষার্থীকে জনপ্রতি ৫০০ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন:
ইবির ইসলামের ইতিহাস বিভাগে তালা!
এ সময় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর প্রতি ব্যক্তিগত আক্রোশের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার হলের একজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত আক্রোশ কেন থাকবে? এরকম হলে তার শাস্তি কমানোর বিষয়ে ভাবতাম না।’
জানা যায়, গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর বাকৃবির শাহজালাল হলে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে আয়োজিত একটি ফিস্টে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রচারণা এবং বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গান বাজানোকে কেন্দ্র করে চরম অস্তিরতা ও চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্ষিপ্ত হয় এবং কেউ ইচ্ছে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট করার পায়তারা করছে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তারা। শিক্ষার্থীরা সে সময় প্রশাসনকে বলেন তারা ব্যঙ্গ করার উদ্দেশ্যে গান বাজিয়েছেন।