গ্লুকোমায় আক্রান্ত বুঝবেন যেসব লক্ষণে

অধ্যাপক ডা. ইফতেখার মো. মুনির
২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
গ্লুকোমায় আক্রান্ত বুঝবেন যেসব লক্ষণে

গ্লুকোমা রোগে চোখের স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়, চোখের দৃষ্টি কমে যায়। রোগী অন্ধত্ববরণ করে। তবে চিকিৎসা গ্রহণে অন্ধত্ব থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

রোগের কারণ : সুনির্দিষ্ট কারণ নেই। সাধারণত চোখের উচ্চ চাপ প্রধান কারণ বলে মনে করা হয়। স্বাভাবিক চাপেও এ রোগ হতে পারে। কিছু কিছু রোগের সঙ্গেও এ রোগের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এছাড়া পরিবারের অন্য কোনো নিকটাত্মীয়ের (মা-বাবা, দাদা-দাদি, নানা-নানি, চাচা, মামা, খালা, ফুপু) এ রোগ থাকা, চল্লিশ বা তদূর্ধ্ব বয়স, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ, মাইগ্রেন, রাতে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ সেবন, স্টেরোয়েড দীর্ঘদিন সেবন করা, চোখের ছানি অপারেশন না করলে বা দেরি করলে, চোখের অন্যান্য রোগ, জন্মগত চোখের ত্রুটি ইত্যাদি দায়ী বলে মনে করা হয়। এসবের মধ্যে কেবল চোখের উচ্চ চাপ ওষুধে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

রোগের লক্ষণ : অনেক ক্ষেত্রে রোগী এ রোগের কোনও লক্ষণ অনুধাবন করতে পারেন না। চশমা পরিবর্তনের সময় কিংবা নিয়মিত চোখ পরীক্ষাকালে চিকিৎসক এ রোগ নির্ণয় করে থাকেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ঘন ঘন চশমার গ্লাস পরিবর্তন হওয়া, চোখে ঝাপসা দেখা বা আলোর চারপাশে রংধনুর মতো দেখা, ঘন ঘন মাথাব্যথা বা চোখে ব্যথা হওয়া, দৃষ্টিশক্তি ক্রমে কমে আসা বা দৃষ্টির পারিপার্শ্বিক ব্যাপ্তি কমা, মৃদু আলোয় কাজ করলে চোখে ব্যথা অনুভূত হওয়া, ছোট শিশু অথবা জন্মের পর চোখের কর্নিয়া ক্রমাগত বড় হয়ে যাওয়া বা চোখের কর্নিয়া সাদা হয়ে যাওয়া, চোখ লাল হওয়া, চোখ দিয়ে পানি পড়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়।

যাদের চোখ পরীক্ষা জরুরি : পরিবারের কারও এ রোগ আছে, চল্লিশোর্ধ্ব ব্যক্তি, বিশেষ করে যাদের ঘন ঘন চশমা পরিবর্তন করতে হচ্ছে, চোখে যারা মাঝে মধ্যে ঝাপসা দেখেন বা ঘন ঘন চোখ ব্যথা বা লাল হওয়া অনুভব করেন, যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, মাইগ্রেন ইত্যাদি রোগ আছে, যারা চোখে দূরের জন্য মাইনাস গ্লাস ব্যবহার করেন, তারা চোখ পরীক্ষা করবেন চিকিৎসকের পরামর্শমতো।

চিকিৎসা : গ্লুকোমা রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। দৃষ্টি যাতে আর না-কমে যায়, সেজন্য চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে। প্রচলিত তিন ধরনের চিকিৎসা রয়েছে। যেমনÑ ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা, লেজার চিকিৎসা, শৈল্যচিকিৎসা বা সার্জারি। যেহেতু চোখের উচ্চ চাপ এ রোগের প্রধান কারণ, তাই ওষুধের মাধ্যমে চোখের চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়। একটি ওষুধ দ্বারা নিয়ন্ত্রণে রাখা না গেলে একাধিক ওষুধ ব্যবহার করতে হবে এবং তিন মাস পর পর চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে নিয়মিত কতগুলো পরীক্ষা করিয়ে দেখতে হবে রোগ নিয়ন্ত্রণে আছে কিনা।

রোগীর করণীয় : চিকিৎসক যে ওষুধের মাত্রা নির্ধারণ করে দেবেন, তা নিয়মিত ব্যবহার করা। নিয়মিত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া। সময়মতো চোখের বিভিন্ন পরীক্ষা করিয়ে দেখা, তার গ্লুকোমা নিয়ন্ত্রণে আছে কিনা। পরিবারের সবার চোখ পরীক্ষা করিয়ে গ্লুকোমা আছে কিনা, তা নিশ্চিত হওয়া। এটি দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা। ঠিকমতো ওষুধ ব্যবহার করে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চললে গ্লুকোমা রোগী তার স্বাভাবিক দৃষ্টি নিয়ে বাকি জীবন সুন্দরভাবে অতিবাহিত করতে পারেন।

লেখক : অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান

জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট এবং

গ্লুুকোমা বিশেষজ্ঞ, বাংলাদেশ আই হসপিটাল

শান্তিনগর, ঢাকা। ০১৭৮৯৭৭৯৯৫৫