শীতে শিশুর ডায়রিয়া প্রতিরোধে রোটা ভ্যাকসিন

ডা. অমৃত লাল হালদার
১৪ জানুয়ারী ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
শীতে শিশুর ডায়রিয়া প্রতিরোধে রোটা ভ্যাকসিন

ডায়রিয়া মূলত পেটের রোগ। এই রোগে আক্রান্ত হলে শরীর থেকে প্রচুর জল বের হয়ে যায়। পাতলা পায়খানা (কখনও কখনও তা শ্লেষ্মাযুক্ত, সঙ্গে পেট ব্যথা, গা গুলিয়ে ওঠা- এসব উপসর্গ দেখা যায়। শীতকালে শিশুদের আক্রান্ত করা বেশিরভাগ ডায়রিয়ার কারণ একটি- সংক্রামক ভাইরাস ‘রোটা’ (Rota Virus)।

শীতকালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের ৫৫ শতাংশই রোটা ভাইরাসের সংক্রমণে অসুস্থ হয়ে পড়ে। গ্রীষ্ম বা বর্ষায় বেশিরভাগ ডায়রিয়ার কারণ থাকে ব্যাকটেরিয়া। আর শীতকালে রোটা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। এটা মুখের মধ্যদিয়েই শিশুদের পাকস্থলীতে প্রবেশ করে। বড়দের ক্ষেত্রে রোটা খুব একটা দুর্বল করতে পারে না। প্রাপ্তবয়স্কদের শরীরের রোটা ভাইরাস প্রতিরোধ ক্ষমতা যথেষ্ট থাকে। কিন্তু রোটা ভাইরাসের সংক্রমণে ডায়রিয়া হলে শিশুরা খুব দ্রুত দুর্বল হয়ে পরে, পানিশূন্যতা তৈরি হয়। চিকিৎসায় দেরি হলে ভয়ানক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ে, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।

পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুরা রোটা ভাইরাসের সংক্রমণে আক্রান্ত হয় বেশি। আর দুই বছরের কম বয়সী শিশুরা বেশি ঝুঁকিতে থাকে এবং মারাত্মক ডায়রিয়া ও বমি সৃষ্টি করে। এটি একটি খুব সংক্রামক ভাইরাস। বলা হয়ে থাকে, বিশ্বের প্রতিটি শিশু তাদের জীবনের প্রথম পাঁচ বছরে একবারের জন্য হলেও রোটাভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হয়। রোটা ভাইরাসের কোনও নির্দিষ্ট চিকিৎসা (Specific Treatment) নেই। অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টিভাইরাল রোটা ভাইরাসের চিকিৎসায় সাহায্য করে না। তবে আশার কথা হলো, শিশুকে এই ভাইরাস থেকে প্রতিরোধ করতে রয়েছে অত্যন্ত কার্যকরী টিকা বা ভ্যাকসিন (Vaccine)। দুই (Rotateq) বা তিন (জড়ঃধঃবয়) ডোজের রোটাভাইরাস ভ্যাকসিন খাওয়ালে শিশুকে নিরাপদ রাখা সম্ভব। এটি মুখে খাওয়ানো টিকা। ইনজেকশনের ঝামেলা নেই।

শিশুর বয়স দেড় মাস পূর্ণ হলে এই টিকা শুরু করা যায়। জড়ঃধৎরী নামে যেটি পাওয়া যায়, সেটি দুটি ডোজ দিতে হবে। দুই ডোজের মাঝে ১ মাসের বিরতি। অর্থাৎ প্রথম ডোজ দেওয়ার ১ মাস পরে দ্বিতীয় ডোজ খাওয়াতে হবে। দুটি ডোজ অবশ্যই ৬ মাস বয়সের আগে সম্পন্ন করতে হবে। জড়ঃধঃবয় নামে টিকাটি তিনটি ডোজ খাওয়াতে হবে। দেড় মাস বয়সের পর শুরু করে ১ মাস বিরতিতে খাওয়াতে হবে। তবে ৮ মাস বয়সের আগে অবশ্যই তিনটি ডোজ সম্পন্ন করতে হবে। তবে শিশুর বয়স দেড় মাসের আগে এ ভ্যাকসিন খাওয়ানো যাবে না। প্রতি ডোজের পর ৪ সপ্তাহ পার হলেই পরবর্তী ডোজ খাওয়াতে হবে। এই ভ্যাকসিন সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (CDC) কতৃক অনুমোদিত। এর তেমন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। তবে ইপিআই (EPI)-এ (সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি) অন্তর্ভুক্ত না থাকায় ভ্যাক্সিনের মূল্য কিছুটা বেশি।

রোটাভাইরাস প্রতিরোধে মায়ের বুকের দুধ অত্যন্ত কার্যকর। যেসব শিশু ৬ মাস বয়স পর্যন্ত শুধু মায়ের দুধ খায়, তাদের এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক কম থাকে।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক

নবজাতক ও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ

বারডেম মহিলা ও শিশু হাসপাতাল

সেগুনবাগিচা, ঢাকা। ০১৬৩৬৬৯২২৯৮