শ্বাসকষ্টে ইনহেলার, না নেবুলাইজার- কোনটা নিরাপদ

অধ্যাপক ডা. মো. খায়রুল আনাম
০৭ জানুয়ারী ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
শ্বাসকষ্টে ইনহেলার, না নেবুলাইজার- কোনটা নিরাপদ

শীতকালে শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত রোগীর সমস্যা আরও বাড়ে, বিশেষ করে যারা অ্যাজমা বা হাঁপানি, সিওপিডি, ব্রঙ্কাইটিস, ব্রংকিয়েক্টাসিস বা দীর্ঘমেয়াদি কোনো শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভোগেন। শ্বাসকষ্টের চিকিৎসায় নানা ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে। মুখে খাওয়ার ওষুধ ছাড়াও কার্যকরী চিকিৎসা হচ্ছে ইনহেলার বা নেবুলাইজার। শ্বাসকষ্টের জন্য ব্যবহৃত মুখে খাওয়ার ওষুধ সেবনের পর পরিপাকতন্ত্রের মাধ্যমে রক্তের সাহায্যে শরীরের বিভিন্ন স্থানে তথা শ্বাসতন্ত্রে পৌঁছায়। এতে শ্বাসকষ্টের লাঘব তাৎক্ষণিক বা আশাপ্রদ হয় না কিন্তু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বেশি হয়। পক্ষান্তরে ইনহেলার বা নেবুলাইজারের মাধ্যমে প্রয়োগকৃত ওষুধ সরাসরি শ্বাসযন্ত্রে প্রবেশ করায় অনেক বেশি কার্যকর ও নিরাপদ হয়।

ইনহেলার বা নেবুলাইজারের মাধ্যমে প্রয়োগকৃত স্টেরয়েড বা শ্বাসযন্ত্র সম্প্রসারণ করার ওষুধ (ব্রংকোডাইলেটর) সূক্ষ্ম কণায় প্রস্তুতকৃত, যা শ্বাসের মাধ্যমে শ্বাসযন্ত্রে তথা ফুসফুসের ভেতরে টেনে নিতে হয়। এভাবে ওষুধ সরাসরি শ্বাসযন্ত্রে কাজ করে, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও হয় কম এবং অনেক কম পরিমাণ ওষুধেই নির্দিষ্ট কার্যকারিতা পাওয়া যায়। সঠিক পদ্ধতিতে ইনহেলার ব্যবহার হাঁপানি বা অন্যান্য শ্বাসকষ্টের চিকিৎসায় খুবই কার্যকরী। তবে স্টেরয়েড জাতীয় ইনহেলার ব্যবহারের পর ভালোভাবে কুলকুচি করতে হবে, যাতে মুখগহবরে ওষুধ না লেগে থাকে। ইনহেলার দুধরনেরÑ মিটার ডোজ ইনহেলার (এমডিআই) ও ড্রাই পাউডার ইনহেলার (ডিপিআই)। মিটার ডোজ ইনহেলার স্পেসারের সাহায্যে ব্যবহার করলে বেশি উপকার পাওয়া যায়, বিশেষ করে বেশি অসুস্থ বা অল্পবয়সী শিশু-কিশোর এবং বেশি বয়সী রোগীর জন্য স্পেসারের মাধ্যমে ইনহেলার নেওয়া আবশ্যক।

কোনও সময় রোগীর শ্বাসকষ্টের সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করলে ইনহেলার টেনে নেওয়ার মতো সক্ষমতা বা পরিস্থিতি থাকে না। তখন নেবুলাইজার মেশিনের মাধ্যমে তরল অবস্থায় প্রস্তুতকৃত ওষুধগুলো মেশিনের সাহায্যে বাষ্পাকারে পরিণত করে ফেসমাস্কের মাধ্যমে ব্যবহার করতে হয়, যা রোগীরা সহজেই শ্বাসযন্ত্র তথা ফুসফুসের ভেতরে টেনে নিতে পারে। জটিল শ্বাসকষ্টের রোগীকে নেবুলাইজারের মাধ্যমে ওষুধ প্রয়োগ করা হলে দ্রুত উপশম বা রোগনিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়। তবে নিয়মিত চিকিৎসার জন্য নেবুলাইজার ব্যবহার না করে ইনহেলারই ব্যবহার করতে হবে। ইনহেলারের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ, যেমনÑ সালবিউটামল, সালমেটেরল, ফরমোটেরল, ইপ্রাটোপিয়াম, ফ্লুটিকাসন, বুডিসোনাইড, বেক্লোমেথাসন ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। উল্লিখিত কিছু কিছু ওষুধ নেবুলাইজারের মাধ্যমে ব্যবহারের জন্য তরল বা সল্যুশন আকারে পাওয়া যায়। এছাড়া কিছু ওষুধ ডিপিআই পাউডার ক্যাপসুল হিসেবে পাওয়া যায়, যা রোটাহেলার জাতীয় ডিভাইস দিয়ে শ্বাসযন্ত্র তথা ফুসফুসের ভেতর টেনে নিতে হয়।

ইনহেলার, এমডিআই বা ডিপিআই ও নেবুলাইজার কীভাবে ব্যবহার করবেন, তা চিকিৎসকের কাছে জেনে নেবেন। সঠিক পদ্ধতিতে ইনহেলার বা নেবুলাইজার ওষুধ ব্যবহার করলে শ্বাসকষ্ট নিয়ন্ত্রণ বা নিরাময় করা সম্ভব।

অনেকে মনে করেন, ইনহেলার শ্বাসরোগের শেষ চিকিৎসা! তা কিন্তু নয়। ইনহেলার হলো আধুনিক, নিরাপদ ও সর্বোত্তম চিকিৎসা। রোগের শুরুতে তথা বয়স যত কমই হোক, ইনহেলার দিয়ে চিকিৎসা করলে রোগ নিরাময়ের সম্ভাবনা বেশি। ফুসফুসের কার্যক্ষমতাও কম নষ্ট হয়। তাই শুধু বেশি শ্বাসকষ্টের সময় নয়, হাঁপানি বা অন্যান্য শ্বাসকষ্টের রোগীর চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সারা বছর ইনহেলার ব্যবহার করতে হয়। যদিও ইনহেলার বা নেবুলাইজারের কাজ প্রায় একই, তবে নিয়মিত ব্যবহারের জন্য ইনহেলার আর রোগ জটিল আকার ধারণ করলে তাৎক্ষণিক উপশমের জন্য নেবুলাইজার ব্যবহার করার দরকার হতে পারে।

লেখক : সাবেক পরিচালক এবং অধ্যাপক

রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগ, জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, মহাখালী, ঢাকা

চেম্বার : পপুলার কনসালটেশন সেন্টার, রোড-২, ধানমন্ডি, ঢাকা হটলাইন : ১০৬৩৬, ০৯৬৬৬ ৭৮৭৮০১