ধর্মান্তরিত হওয়া প্রসঙ্গে যা বলেছিলেন প্রবীর মিত্র
পর্দার নবাব’খ্যাত কিংবদন্তি অভিনেতা প্রবীর মিত্র আর নেই। গতকাল রবিবার রাত ১০টার দিকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন বর্ষীয়ান এই অভিনেতা। আজ সোমবার বাদ জোহর এফডিসিতে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর অভিনেতাকে নেওয়া হবে চ্যানেলে আইয়ে। সেখানে জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন কিংবদন্তি এই অভিনেতা।
এদিকে, সনাতন ধর্ম থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন প্রবীর মিত্র। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার পর প্রবীর মিত্রের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছিল হাসান ইমাম। কিন্তু সে নামে পরিচিতি পাননি তিনি। আমৃত্যু প্রবীর মিত্র হিসেবেই সবার কাছে পরিচিত এই অভিনেতা।
বেঁচে থাকা অবস্থায় এক সাক্ষাৎকারে প্রবীর মিত্র নিজেই তার ধর্মান্তরিত হওয়ার ঘটনার বর্ণনা দিয়েছিলেন। জানিয়েছিলেন, তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। তার কথায়, ‘আমি তো কনভার্ট হয়েই ওর মাকে (স্ত্রী) বিয়ে করেছিলাম। তখন মুসলমান হয়েছিলাম। তখন প্রয়োজন হয়েছিল মুসলমান হওয়া, এখনো সে ধর্মেই আছি।’
তিনি আরও বলেছিলেন, ‘বিয়ের সময় কনভার্ট হয়েই বিয়ে করেছিলাম। তবে ধর্ম নিয়ে আমার কোনো বাড়াবাড়ি নাই। সবার উপরে মানুষ সত্য তার উপরে নাই। মানুষ সবার উপরে।’
আরও পড়ুন:
স্ত্রীর কবরের পাশে পরীর নানা সমাহিত
সেই সাক্ষাৎকারে জীবনের কষ্টের কথাও বর্ণনা করেছিলেন তিনি। তার কষ্টটা ছিল মূলত, অভিনয় করতে না পারা নিয়ে। বলেছিলেন, ‘আমার খুব কষ্ট হয় যদি আমি অভিনয় করতে না পারি। অভিনয় করতে পারছি না, এটাই আমার বড় কষ্টের কারণ।’
প্রবীর মিত্রের সেই প্রিয়তমা স্ত্রীর নাম অজান্তা মিত্র, যিনি ২০০০ সালে মারা যান। তাদের তিন ছেলে- মিথুন মিত্র, সিফাত ইসলাম, সামিউল ইসলাম। এক মেয়ে ফেরদৌস পারভীন। চার সন্তানের মধ্যে সামিউল মারা গেছেন।
উল্লেখ্য, ১৯৪৩ সালের ১৮ আগস্ট কুমিল্লার চান্দিনায় জন্মগ্রহণ করেন প্রবীর মিত্র। পুরান ঢাকায় বড় হওয়া প্রবীর মিত্র স্কুলজীবন থেকেই নাট্যচর্চার সঙ্গে যুক্ত হন। স্কুলজীবনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকে অভিনয় করে খ্যাতি অর্জন করেন তিনি।
আরও পড়ুন:
ওটিটি প্ল্যাটফরম আমার জন্য বেশ লাকি
১৯৬৯ সালে প্রয়াত এইচ আকবরের ‘জলছবি’ সিনেমা দিয়ে প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান প্রবীর মিত্র। যদিও সিনেমাটি মুক্তি পায় ১৯৭১ সালের ১ জানুয়ারি। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে প্রবীর মিত্র ‘নায়ক’ হিসেবে কয়েকটি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। এরপর চরিত্রাভিনেতা হিসেবে কাজ করেও তিনি পেয়েছেন দর্শকপ্রিয়তা।
‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘জীবন তৃষ্ণা’, ‘সেয়ানা’, ‘জালিয়াত’, ‘ফরিয়াদ’, ‘রক্ত শপথ’, ‘চরিত্রহীন’, ‘জয় পরাজয়’, ‘অঙ্গার’, ‘মিন্টু আমার নাম’, ‘ফকির মজনু শাহ’, ‘মধুমিতা’, ‘অশান্ত ঢেউ’, ‘অলংকার’, ‘অনুরাগ’, ‘প্রতিজ্ঞা’, ‘তরুলতা’, ‘গাঁয়ের ছেলে’, ‘পুত্রবধূ’সহ চার শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি।