শিশুর যত্নে এই সময় আপনার করণীয়
প্রকৃতিতে শীতের হিমেল হাওয়া বইছে দারুণভাবে। তাই শিশুর যত্নেও কিছু পরিবর্তন আনা জরুরি। শিশুর যত্ন নিয়ে বাবা-মায়ের রয়েছে নানা প্রশ্ন। সবচেয়ে বেশি যে প্রশ্নটির উদ্বেগ হয় তা হলো, ত্বকের যত্নে কি লোশন বা তেল ব্যবহার করা যাবে? হ্যাঁ, শীতের সময় ত্বকের আর্দ্রতা কমে যায়। ত্বক শুষ্ক ও খসখসে হয়ে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে লোশন বা তেল ব্যবহার করা যাবে। এমনকি সরিষার তেল ব্যবহারেও কোনো সমস্যা নেই। বেবি অয়েল, কোল্ড ক্রিম, লিপজেল, ময়েশ্চারাইজিং লোশন ইত্যাদি লাগানো যেতে পারে। তবে মানসম্মত ও ত্বকের জন্য সহনীয়Ñ এমন ব্র্যান্ড ব্যবহার করুন। খেয়াল রাখুন, এগুলো ব্যবহারে ত্বকে কোনো অ্যালার্জি বা ফুসকুড়ি ওঠে কিনা। যদি এমন হয়, তাহলে ওই ব্র্যান্ড বন্ধ করে অন্য কোনো ব্র্যান্ড ব্যবহার করে দেখুন।
শরীরে তেল মালিশ করার যে রীতি আমাদের দেশে প্রচলিত তা ঠিক কিনা, এমন প্রশ্ন প্রায়ই শুনতে হয়। ইতোমধ্যে বলেছি, শরীরে তেল মালিশ করলে কোনো ক্ষতি নেই। কেউ কেউ ঠাণ্ডা লেগে গেলে বুকে-পিঠে গরম সরিষার তেল কিংবা তেলের সঙ্গে রসুন মিলিয়ে মালিশ করতে বলেন। এতে রোগী কিছুটা আরাম পেতে পারে হয়তো। তবে শ্বাসকষ্ট, ঠাণ্ডা বা কাশির সমস্যায় চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ সেবন করানো উচিত। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে এসব সমস্যায় অতিসত্বর সঠিক চিকিৎসা করা আবশ্যক। অনেকে ঠাণ্ডা লেগে নাক বন্ধ হলে নাকের ফুটোয় সরিষার তেল দেন। এটা মোটেও কথা ঠিক নয়।
শীতের সময় ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা থেকে রেহাই পেতে গরম কাপড় পরাতে হবে। কোনোভাবেই যেন ঠাণ্ডা না লাগে, তাই মায়েদের চেষ্টা থাকে শিশুকে গরম কাপড়ে মুড়িয়ে রাখার। কিন্তু গরম কাপড় পরানোর ব্যাপারেও কিছু সাবধানতা অবশ্যই রয়েছে। শীতের কবল থেকে শিশুকে বাঁচাতে একটু বাড়তি সতর্ক তো থাকতেই হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, যেন শিশুকে গরম কাপড়ে পেঁচিয়ে রাখার ফলে সে ঘেমে একাকার না হয়ে যায়। কারণ ঘাম বসে গিয়েও শিশুর ঠাণ্ডা লেগে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
আরও পড়ুন:
শীতে গর্ভবতী মায়েদের যত্ন
রোদে রাখার কথা বলেন অনেকেই। দিনের কিছুটা সময় রোদ শিশুর জন্য স্বাস্থ্যকরই বটে। কারণ সূর্যের আলোর সঙ্গে শরীরে ভিটামিন-ডি তৈরি হওয়ার সম্পর্ক রয়েছে। প্রতিদিন ঘণ্টাখানেক রোদে রাখা যেতেই পারে। তবে সারাদিন রোদে রাখা ভালো নয় কারও জন্যই। রোদে রেখে তেল মালিশ করার প্রচলন আছে কোথাও কোথাও। এটি করলে যে কোনো ক্ষতি আছেÑ তা নয়, তবে নেই কোনো বাড়তি সুবিধাও।
শীতে শিশুর স্নান নিয়ে চিন্তার শেষ নেই। পানির তাপমাত্রা কেমন হওয়া উচিত, তা নিয়েও রয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। ২-৪ দিন গোসল না করানোর প্রচলন আছে। এমনিতে শীতের সময় গোসলে অনীহা আসে। তবে প্রতিদিনই গোসল ও পরিষ্কার থাকতে হবে। এজন্য কুসুম গরম পানি ব্যবহার করুন। এতে মন সতেজ থাকে। অবশ্য খুব বেশি ঠাণ্ডা বা খুব বেশি গরম পানিতে গোসল করা ঠিক নয়। অনেকে আবার চুল ভেজাতে চান না ঠাণ্ডা লেগে যাওয়ার ভয়ে। আসলে চুল প্রতিদিন ভেজালেও কোনো ক্ষতি নেই। তবে তাড়াতাড়ি আবার ভালোমতো শুকিয়ে নিতে হবে। দীর্ঘ সময় চুল ভেজা রাখা উচিত নয়।
আরও পড়ুন:
জরায়ুমুখ ক্যানসারের লক্ষণগুলো জেনে রাখুন
লেখক : শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ এবং সহযোগী অধ্যাপক
শিশু ও নবজাতক বিভাগ, বারডেম জেনারেল হাসপাতাল-২
আরও পড়ুন:
শীতে মুলা কেন খাবেন?
(মহিলা ও শিশু হাসপাতাল) , সেগুনবাগিচা, ঢাকা ০১৬৩৬৬৯২২৯৮; ৯৫১১০১০-২১