শীতে অ্যাজমা রোগীরা কিভাবে ভালো থাকবেন?
শীতকাল অ্যাজমা রোগীদের জন্য বেশ কষ্টকর একটা সময়। বছরের অন্যান্য সময়ের থেকে এই সময়টায় অ্যাজমা রোগীদের একটু বেশি সাবধানে চলতে হয়। সারা বিশ্বের প্রায় ১৫ কোটিরও বেশি মানুষ অ্যাজমাতে আক্রান্ত হন। বাংলাদেশে প্রতি বছর ৫০ হাজার লোক এই রোগে আক্রান্ত হয়। যাদের অ্যাজমা আছে তাদের সঙ্গে সাধারণত ইনহেলার থাকে। আবার অনেকে ইনহেলার ছাড়াই নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন।
শীতে অ্যাজমা বেড়ে যাওয়ার প্রধান কারণগুলো হলো- এই সময়ে ঠাণ্ডা, জ্বর, শুষ্ক বাতাস যা শ্বাসতন্ত্র সংকুচিত করে, শীতে বেড়ে যাওয়া ধুলাবালু ও ধোঁয়ার পরিমাণ, কুয়াশা ও বদ্ধ গুমোট পরিবেশ ইত্যাদি।
অ্যাজমার লক্ষণগুলো জানেন তো কী কী
১। শ্বাসকষ্ট হওয়া
২। শ্বাস নেয়ার সময় সাঁ সাঁ শব্দ হওয়া
৩। বুকে চাপ অনুভব করা এবং দমবন্ধভাব হওয়া
৪। বুকে ব্যথা হওয়া
৫। শুকনো কাশি
শীতের সময়টায় আবহাওয়া শুষ্ক আর ধুলোবালির প্রকোপ বেড়ে যায়। তাই অ্যাজমা প্রতিরোধে সবচেয়ে বেশি সতর্ক থাকতে হয়। বিনা সতর্কতায় অ্যাজমা রোগীর জীবনে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। সেকারণেই সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে শীতে অ্যাজমা রোগীরা সুস্থ থাকতে কিছু বিষয় মেনে চলবেন।
আরও পড়ুন:
শীতে গর্ভবতী মায়েদের যত্ন
অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণে কী করবেন?
ধুলা থেকে থাকুন দূরে
অ্যাজমার সবচেয়ে বড় শত্রু ধুলা। আর তাই যতটা পারা যায় এটি এড়িয়ে চলতে হবে। ধুলামুক্ত নির্মল ও সুন্দর পরিবেশে থাকার চেষ্টা করুন। বেডরুমে সূক্ষ্ম কাজের আসবাবপত্র রাখবেন না, এতে বেশি ধুলা জমে যা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
নেওয়া যাবে না ফুলের ঘ্রাণ
ফুলের সুবাস বা ঘ্রাণ কে না পছন্দ করে। কিন্তু এই শীতের মৌসুমে এ কাজ থেকে দূরে থাকতে হবে। অন্তত যদি অ্যাজমার সমস্যা থাকে তবে অবশ্যই তা করতে হবে। কারণ, ফুল এবং বাড়ন্ত গাছের পাতার গন্ধ আপনার সমস্যা বাড়াতে পারে।
ছেড়ে দিন ধূমপান
শুধু অ্যাজমা নয়, শীতকালীন অন্যান্য সমস্যা থেকেও দূরে থাকতে পারবেন যদি ধূমপানের অভ্যাস এড়াতে পারেন। বিশেষ করে শুষ্ক কাশি থেকে মুক্তি পাবেন। তাই যদি সুস্থ থাকতে চান, তবে বদলে ফেলুন ধূমপানের বাজে অভ্যাস।
আরও পড়ুন:
জরায়ুমুখ ক্যানসারের লক্ষণগুলো জেনে রাখুন
নিয়মিত করুন শরীরচর্চা
সুস্থ থাকতে শরীরচর্চার বিকল্প খুব আছে। শীতের এই সময়ে প্রতিদিন অল্প কিছু সময় হলেও ব্যায়াম করুন। অ্যাজমা সমস্যা থাকবে নিয়ন্ত্রণে।
মুখ ঢেকে রাখুন
শীতে সুস্থ থাকতে মুখ খোলা রেখে না বাইরে বের হয়ে একটি মাফলার বা স্কার্ফ দিয়ে নাক মুখ ভালো করে ঢেকে বেরোবেন। কারণ শীতের ঠাণ্ডা বাতাস আপনার নাক মুখ দিয়ে ভেতরে গেলে বা ফুসফুসে প্রবেশ করলে অ্যাজমা রোগীরা আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়বেন।
হাত পরিষ্কার রাখুন
শীতের সময়টায় সুস্থ থাকতে কিছু সময় পর পর আপনার হাত ধুয়ে ফেলার অভ্যাস করুন। যাতে কোন রোগ জীবাণু হাতের মাধ্যমে আপনার শরীরে প্রবেশ করতে না পারে। এক্ষেত্রে ভালো কোনও হ্যান্ডওয়াশ ব্যবহার করুন আর সাথে চাইলে গরম পানি ব্যবহার করতে পারেন।
বেমানান পরিবেশ থেকে থাকুন দূরে
আরও পড়ুন:
শীতে মুলা কেন খাবেন?
অতিরিক্ত ঠাণ্ডা কিংবা গরম কোনও পরিবেশই অ্যাজমা রোগীদের জন্য উপযুক্ত নয়। অনেকেই শীতে ঘরের তাপমাত্রা ঠিক রাখতে এসি বাড়িয়ে দেন, যা ক্ষতির কারণ হতে পারে অ্যাজমা রোগীর। অনেকে আবার ঠাণ্ডার প্রকোপ থেকে বাঁচতে অনেক গরম জামাকাপড় পরেন। এতে শরীর ঘেমে যেতে পারে। এটিও অ্যাজমা রোগীর জন্য শুভকর কিছু নয়।
এই ব্যাপারগুলো এড়িয়ে চললে এবং নিয়ম মেনে ইনহেলার বা ওষুধ গ্রহণ করলে, শীতের মৌসুমে অ্যাজমা সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে।
শীতে ঘরদোর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার পাশাপাশি লেপ তোশক, বিছানাপত্র, বালিশ ও ঘরের কার্পেট ম্যাট ঘন ঘন রোদে শুকাতে দিন। ঘন ঘন হালকা গরম পানি বা স্বাভাবিক পানি পান করুন। এতে শ্বাসনালীতে তৈরি হওয়া কফ পাতলা থাকবে। এতে করে কাশি কমবে, শ্বাসকষ্ট কমবে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ঔষধ খান।