শিশুশ্রম নিরসনে ২১ সংগঠনের সমন্বয়ে ক্লেপের যাত্রা শুরু

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১:০২
শেয়ার :
শিশুশ্রম নিরসনে ২১ সংগঠনের সমন্বয়ে ক্লেপের যাত্রা শুরু

দেশে দিনদিন শিশুশ্রম বাড়ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জাতীয় শিশুশ্রম প্রতিবেদন অনুযায়ী বর্তমানে দেশে কর্মজীবী শিশুর সংখ্যা ৩৫ লাখ ৩৬ হাজার। যা ২০১৩ সালে ছিল ৩৪ লাখ ৫০ হাজার। শিশুশ্রমে যুক্ত থাকা এসব শিশুরা নিরাপদ ভবিষ্যৎ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।সরকারী ও বেসরকারি সকল অংশীজনের সমন্বয়ে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে সকল ধরণের শিশু শ্রম নির্মূল করার লক্ষ্যে ২১ টি আর্ন্তজাতিক ও জাতীয় উন্নয়ন সংস্থার সমন্বয়ে যাত্রা শুরু করেছে চাইল্ড লেবার ইলিমিলেশন প্লাটফর্ম (সিএলইপি)। 

আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানী গুলশানের লেকশোর হোটেলে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করেছে নতুন এই প্লাটফর্ম। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সুলতান উদ্দিন আহম্মদ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিগত সরকারের নেওয়া শিশুশ্রম নিরসন প্রকল্পের শ্বেতপত্র প্রকাশের আহ্বান জানিয়েছেন শ্রম সংস্কার কমিশনের সভাপতি সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘২০২৫ সালের মধ্যে শিশুশ্রম নিরসনে তিন দফায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। কিন্তু জরিপে দেখা যাচ্ছে, দেশে শিশুশ্রম বেড়েছে। যদিও ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম কমেছে। কিন্তু সেটা সংগার পার্থক্যের কারণে। তাহলে প্রকল্পের টাকা কোথায় গেল এবং কি কাজ হলো, সেটা জনসমক্ষে প্রকাশ করা দরকার।’

শিশুকে শ্রমে রেখে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তোলা অসম্ভব উল্লেখ করে শ্রম সংস্কার কমিশন প্রধান বলেন, ‘বাল্যবিয়ে বন্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পুলিশের অভিযানের খবর পাই। কিন্তু শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে কোন অভিযানের কথা শুনিনা। অথচ শিশুশ্রম আইনে নিষিদ্ধ। তাই শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে অভিযানের জন্য সরকারকে প্রশাসনিক নির্দেশ দিতে হবে। সমাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। জাতীয় পর্যায়ে আইন ও নীতি প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।’

সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘শিশুশ্রম আমাদের কমিশনের কাজে অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছে। আমরা দেখেছি, ঝুঁকিপূর্ণ কাজ নিয়ে নানা মতভেদ থাকলেও লেখাপড়া থেকে বঞ্চিত করে যে কোন কাজই শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা চাই, কোন শিশুই শ্রমে থাকবে না। সামর্থ্যবানরা যদি কমপক্ষে একটি শিশুর দায়িত্ব নেয় তবে এই কাজ অনেকটা এগিয়ে যাবে। এ কাজে শুধু সরকারকে দায়িত্ব দিলে হবে না, এর সাথে জড়িত সকল সংগঠনকেই দায়িত্ব নিতে হবে। তবে সরকারকে এ বিষয়ে জবাবদিহি করতে হবে। শিশুশ্রম নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর সাথে আলোচনা করে কম সুপারিশ চূড়ান্ত করবে।’

অনুষ্ঠানে ক্লেপের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এর উপর প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন এডুকো বাংলাদেশের ব্যবস্থাপক আফজাল কবীর খান। স্বাগত বক্তব্যে শিশুশ্রম বন্ধে গ্রাম থেকে কাজ শুরু করা আহ্বান জানিয়ে ওয়াল্ড ভিশনের সিনিয়র প্রোগ্রাম ডিরেক্টর চন্দন জেড গোমেজ বলেন, ‘ওয়াল্ড ভিশন দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করছে। আমরা ইতোমধ্যে এক হাজার ৩টি ইউনিয়নকে শিশুশ্রম মুক্ত করেছি। যেখানে আগামীতেও শিশু শ্রমিক পাওয়া যাবে না। সকলেই যদি এভাবে কাজ করেন তাহলে দ্রুত দেশকে শিশুশ্রম মুক্ত করা সম্ভব হবে।’

বিএলএফের নির্বাহী পরিচালক এ কে এম আশরাফ উদ্দিনের সঞ্চালনায় মুক্ত আলোচনা পর্বে বক্তব্য দেন ‘গুড নেইবারস-বাংলাদেশ’ (জিএনবি)’র কান্ট্রি ডিরেক্টর এম মাঈনউদ্দিন মইনুল, শাপলা নীড়ের কান্ট্রি ডিরেক্টর তমকো উচিয়ামা, সমাজসেবা অধিদফতরে মাহামুদ উল্লাহ, নারী উন্নয়ন শক্তির প্রধান নির্বাহী ড. আফরোজা পারভীন, বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ পরিষদের মাসুদ মান্না, ইপসার অ্যাডভোকেট শারমিন সুলতানা, বাংলাদেশ সলিডারিটি প্লাটফর্মের হেনা আক্তার রুমা প্রমূখ।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের উপ-পরিচালক এম রবিউল ইসলাম বলেন, ‘শিশুশ্রম নিয়ে সরকারের কাজের মধ্যে সমন্বয়হীনতা রয়েছে। সরকার ও বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন কাজ করতে চাই। বিশেষ করে শিশুদের গৃহ কাজ নিয়ে কাজ করা খুবই জরুরি। এখন পর্যন্ত শ্রম আইনে শিশুদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কাজের তালিকায় গৃহকাজে নিয়োজীতশিশু এখনো যুক্ত করতে পারিনি বা কতৃপক্ষ বিবেচনা নেয়নি।’

বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন এম এম মাহমুদ উল্লাহ, অতিরিক্তি পরিচালক, সমাজসেবা অধিদপ্তর এবংমামুন অর রশিদ, উপ মহাপরিদর্শক, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এডুকো বাংলাদেশের ডিরেক্টর অব প্রোগ্রাম আব্দুর রহিমের

সভাপতির বক্তব্যে তিনি সকলকে ধন্যবাদ জানান এবং সদস্য সকল প্রতিষ্ঠান ও সরকারি বেসরকারি সকল স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে এই ক্লেপ শিশুশ্রম নিরসনে সমনের দিনে এগিয়ে যাবার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।