আবু সাঈদ হত্যা মামলায় বেরোবির সাবেক প্রক্টর রিমান্ডে

রংপুর প্রতিনিধি
১৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৮:৫৩
শেয়ার :
আবু সাঈদ হত্যা মামলায় বেরোবির সাবেক প্রক্টর রিমান্ডে

কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত আবু সাঈদ হত্যা মামলায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শরিফুল ইসলামকে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ মঙ্গলবার বিকেলে শুনানি শেষে রংপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২-এর বিচারক মো. আসাদুজ্জামান এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে গতকাল সোমবার রাতে নগরীর আলমনগর এলাকা থেকে তাকে আটক করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

আবু সাঈদ হত্যা মামলার আইনজীবী অ্যাডভোকেট রোকনুজ্জামান রোকন বলেন, ‘তদন্তের স্বার্থে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন জানানো হয়েছিল। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।’

রোকনুজ্জামান রোকন বলেন, ‘গত ১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেটের সামনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন আবু সাঈদ। সেই দিনের সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, উসকানিদাতাদের অন্যতম একজন ছিলেন তৎকালীন প্রক্টর শরিফুল ইসলাম। বিষয়টি আদালতে তুলে ধরা হয়েছে। শুনানি শেষে অধিকতর তদন্তের স্বার্থে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রিমান্ড আবেদন জানালে আদালত মঞ্জুর করেন।’

এর আগে এই মামলায় রংপুর মহানগর পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আমীর আলী ও কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলার বাকি আসামিদেরও অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানান এই আইনজীবী।

প্রক্টরের বোন শিক্ষানবিশ আইনজীবী সাদিয়া আক্তার ববি বলেন,‘কোন প্রমাণ না থাকার পরেও ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমার ভাইকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।আমার ভাই যদি জড়িত থাকত, তাহলে তিনি আত্মগোপনে থাকতেন। আমার ভাই আত্মগোপনে না গিয়ে নিয়মিত বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছিল এবং আন্দোলনের সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়কদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছিল। কোন প্রমাণ না থাকার পরও আমার ভাইকে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে। আমরা ন্যায়বিচারের স্বার্থে আইনি লড়াই চালিয়ে যাব।’

আদালতে প্রক্টর শরিফুল ইসলাম জামিন প্রার্থনা করে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই আমি নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছি। আমার জীবনে কোন মানুষের গায়ে হাত দেয়নি। আমি জীবনে রাজনীতি করিনি। আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছি। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারী সমন্বয়ক ছাত্ররা অবগত আছে। সমন্বয়ক যারা ছিল তারা সকলেই জানে আমি শুধুমাত্র দায়িত্ব পালন করেছি। মিছিল শুরুর আগেই আমি গিয়েছিলাম আমার দায়িত্ব পালনের উদ্দেশ্যে। আমার প্রিয় ছাত্র আবু সাঈদ শহীদ হয়েছে। আমি কোনদিন আত্মগোপন করিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব পালনের কারণে আমাকে অপরাধী সাব্যস্ত করা হলে আমি ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হব। আমি ন্যায়বিচার চাই। আমাকে আটক করলে আমার সম্মানহানি ঘটবে। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটিতে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের তালিকায় আমার নাম নেই। এটাই প্রমাণ করে আমি নির্দোষ।’

প্রসঙ্গত গত ১৮ আগস্ট পুলিশের সাবেক আইজিপিসহ ১৭ জনের নাম উল্লেখ এবং ৩০ থেকে ৩৫ জনকে অজ্ঞাতনামা উল্লেখ করে মামলা করেন আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী। পরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলামসহ সাতজনের নাম মামলায় নথিভুক্ত করার জন্য সম্পূরক এজাহার করেন তিনি। পরে আদালতের আদেশে তাদের ওই মামলায় নামীয় এজহারভুক্ত আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।