যে লক্ষণগুলোয় বোঝা যায় মিনি স্ট্রোক
আজ ২৯ অক্টোবর। বিশ্ব স্ট্রোক দিবস। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে দিবসটি। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘গ্রেটার দেন’।
মিনি স্ট্রোক কেমন : মিনি স্ট্রোক (Mini Stroke) বা ট্রান্সিয়েন্ট ইসকেমিক অ্যাটাক (টিআইএ) হলো স্ট্রোকের পূর্ববর্তী অবস্থা। বেশিরভাগ মানুষই স্ট্রোকের পূর্ববতী উপসর্গগুলো সম্পর্কে ভালোমতো কিছু জানেন না। যদিওবা জানেন, তবে এ সম্পর্কে সচেতন থাকেন না। হিসাব বলছে, এই টিআইএ-কে যদি প্রথম থেকে চিহ্নিত করা যায়, তবে স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা আটকে দেওয়া যায়।
স্ট্রোক কি : মাথার কোনো রক্তনালিতে স্থায়ীভাবে রক্তজমাট বাঁধলে সেই অংশে রক্তচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রক্ত চলাচল বন্ধ হওয়ার কারণে মস্তিষ্কের সেই নির্দিষ্ট অংশে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত পৌঁছায় না। ফলে সেই অংশটি কাজ করতে পারে না। এই হলো স্ট্রোক। স্ট্রোকের ক্ষেত্রে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, কাউকে চিনতে না পারা, মাথা ঘোরানো, হাত-পা নড়াতে না পারা, শরীরের ভারসাম্য হারানো, কথা বলতে না পারা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়। স্ট্রোক একটি ভয়ঙ্কর রোগ। এই রোগ একজন মানুষের জীবনকে মুহূর্তে ওলটপালট করে দিতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে এই রোগটি আটকানো যেতে পারে। এক্ষেত্রে টিআইএ চিহ্নিত করতে পারলে সব থেকে ভালো হয়। গবেষণাপ্রাপ্ত তথ্য বলছে, টিআইএ (ঞওঅ) হওয়ার পরের তিন মাসে স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে ২ থেকে ১৭ শতাংশ। আর টিআইএ আক্রান্ত প্রায় ৩৩ শতাংশ মানুষ ১ বছরের মধ্যেই স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। তাই এ রোগটি থেকে সচেতন থাকতে হবে। টিআইএ-এর ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের কোনও একটি রক্তনালির মধ্যে সামান্য কিছু সময়ের জন্য রক্ত জমাট বাঁধে। তাই কিছুক্ষণের জন্য রোগীর শরীরে দেখা দেয় লক্ষণ। তার পর নিজে থেকে জমাট রক্ত বিলীন হয়ে যায়। ফলে কমে যায় উপসর্গ। টিআইএ-এর উপসর্গ প্রায় স্ট্রোকেরই মতো। কাউকে চিনতে না পারা, চোখে ঝাপসা দেখা, শরীর অবশ হয়ে যাওয়া, হাত-পা নাড়াতে না পারা, মাথা ঘোরা ইত্যাদি। তবে এক্ষেত্রে সমস্যা হয় ক্ষণস্থায়ী। সাধারণত টিআইএ-এর লক্ষণ ঘণ্টাখানেকের মধ্যে চলে যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত থাকতে পারে।
যে কারণে হয় : স্ট্রোক ও টিআইএ- দুই ক্ষেত্রেই দায়ী হলো উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবিটিস, কোলেস্টেরলের মতো অসুখ। এছাড়া পরিবারের কারও স্ট্রোক আক্রান্ত হয়েছেÑ এমন ইতিহাস থাকলেও স্ট্রোক হতে পারে। এছাড়া ধূমপান, মদ্যপান, ওজন বেশি ইত্যাদি স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
আরও পড়ুন:
চোখের রক্তবর্ণ ধারণের কারণ ও প্রতিকার
টিআইএ কি : ডায়াবিটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরলের মতো অসুখ থাকলে টিআইএ-এর লক্ষণ দেখা দিলে অবেহলা করা যাবে না। এ সংক্রান্ত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। অনেক সময় অনেকের টিআইএ ধরা পড়ে না। এমনকি কোনও পরীক্ষায়ও বোঝা যায় না। এমন পরিস্থিতিতে রোগটি কেবল চিকিৎসকরা বুঝতে পারেন।
চিকিৎসা : স্ট্রোক বা টাইআইএ যা-ই হোক না কেন, চিকিৎসা নিতে হবে। চিকিৎসা যত দ্রুত শুরু করা যাবে, রোগীর সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি। হাসপাতালে চিকিৎসাকালে রোগীর স্পিচ থেরাপি, ফিজিওথেরাপির দরকার হতে পারে।
লেখক : অধ্যাপক, ক্লিনিক্যাল নিউরোলজি বিভাগ
আরও পড়ুন:
জরায়ুমুখ ক্যানসারের লক্ষণগুলো জেনে রাখুন
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল
০১৮৬৫৪৪৪৩৮৬; ০১৮৬৫৪৪৪৩৮৫