ইতিহাস গড়ল স্পেসএক্স
এমন একটা সময় ছিল যখন রকেট উৎক্ষেপণ করাটাই ছিল এক বিরাট সাফল্যের ব্যাপার। ১৯২৬ সালের ১৬ মার্চ, গডার্ড ম্যাসাচুসেটসের অবার্নে বিশ্বের প্রথম তরল-জ্বালানিযুক্ত রকেট উড্ডয়ন করেন। এর পর কালে কালে অনেক বছর পার হয়ে গেল। এখন রকেট উৎক্ষেপণ যেন একটা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। কয়েক মাস পরপরই শোনা যায় কোনো না কোনো দেশ মহাকাশে রকেট পাঠাচ্ছে। আর এই পুরো ব্যাপারটাকে এরকম স্বাভাবিক একটা বিষয়ে পরিণত করেছে ইলন মাস্ক। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো এবার ইলন মাস্কের এই কোম্পানিটির স্টারশিপ রকেটের একটি অংশ এই প্রথমবার লঞ্চ প্যাডে ফিরে এসেছে, এটাও মূলত বিশ্বে এবারই প্রথম। অনলাইন থেকে তথ্য নিয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন আজহারুল ইসলাম অভি
সম্প্রতি ইলন মাস্কের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সের তৈরি রকেট স্টারশিপ সফলভাবে উৎক্ষেপণের পর সেটির নিম্নাংশ সফলভাবে লঞ্চপ্যাডে ফিরে এসেছে। বিশ্বের ইতিহাসে এই ঘটনা প্রথম। এর আগে বিশ্বে যত রকেট উৎক্ষেপিত হয়েছে, তার সবগুলোই ছিল ওয়ানটাইম ইউজ অর্থাৎ একবার ব্যবহারযোগ্য। রকেট উৎক্ষেপণের একটি সাধারণ প্রক্রিয়া হলো রকেটকে প্রথমে একটি মাদারশিপ দিয়ে একটি নির্দিষ্ট সীমারেখায় নিয়ে যাওয়া হয় এর পর মাদারশিপটি মূল রকেটকে মুক্ত করে দেয় (আরও বিভিন্ন উপায়ে রকেট উৎক্ষেপিত হতে পারে)। এই পুরো প্রক্রিয়ায় মাদারশিপ কিংবা রকেট কেউই আর লঞ্চ প্যাডে ফিরে আসে না। ফলে অপচয় হতো কোটি কোটি ডলার। ইলন মাস্ক ভাবলেন খরচ কমিয়ে আনতে হবে। তিনি মাদারশিপ বা রকেটের অন্যান্য যন্ত্রাংশকে কীভাবে আবার পুনরায় ব্যবহার করা যায় সে বিষয়ে নজর দিলেন। তিনি পুনরায় ব্যবহারযোগ্য রকেট প্রস্তুতের লক্ষ্য নিয়েছিলেন; সেই লক্ষ্যের পথে বড় একটি মাইলফলক স্টারশিপের সফল উৎক্ষেপণ। এর আগে মোট ৪ বার স্টারশিপ উৎক্ষেপণের চেষ্টা করেছিল স্পেসএক্স। কিন্তু প্রতিবারই তা ব্যর্থ হয়েছে।
১৩ অক্টোবর উৎক্ষেপণের আগে এক বিবৃতিতে স্পেসএক্স কোম্পানি বলেছিল, স্টারশিপ সফলভাবে মহাকাশের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করতে পারলেই কোম্পানি সন্তুষ্ট; রকেটটির নিম্নাংশ, যেটির নাম সুপার হেভি বুস্টার যদি লঞ্চপ্যাডে ফিরে নাও আসে, তবুও সমস্যা নেই। স্টারশিপ রকেট ১০০ টনের বেশি যন্ত্রপাতি বা ১০০ জন আরোহী বহন করতে পারে। আর সুপার হেভি বুস্টারে আছে ৩৩টি ইঞ্জিন, যা মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার আর্টিমেস রকেটের চেয়ে দ্বিগুণ শক্তিশালী। স্টারশিপ রকেটে যেসব যন্ত্র এবং যন্ত্রাংশ রয়েছে, সেগুলোর সম্মিলিত ওজন ১০০ টনের বেশি এবং রকেটটি একসঙ্গে ১০০ জন যাত্রী পরিবহনে সক্ষম। যে অংশটি পৃথিবীতে ফিরে এসেছে, সেই সুপার হেভি বুস্টারে মূলত রকেটের ইঞ্জিন বিভাগ। ৩৩টি ইঞ্জিন রয়েছে সুপার হেভি বুস্টারে। নাসার আর্টেমিস রকেটের চেয়ে স্টারশিপ দ্বিগুণ শক্তিশালী।
আরও পড়ুন:
যে গ্রহে হয় বালুবৃষ্টি
১৩ অক্টোবর স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ২৫ মিনিটে টেক্সাসের বোকাচিকা মহাকাশ কেন্দ্র থেকে পঞ্চমবারের মতো রকেটটি উৎক্ষেপণ করা হয়। এক পর্যায়ে এর দ্বিতীয় ধাপের মহাকাশযানটি আলাদা হয়ে ভারত মহাসাগরে পড়ে। আর সুপার হেভি বুস্টার ফিরে আসে স্পেসএক্সের সে টাওয়ারে যেখান থেকে এটি উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল। ইঞ্জিনের অংশটি যেহেতু ফিরে এসেছে, তাই এটি ব্যবহারের মাধ্যমে ফের নতুন রকেট প্রস্তুত করা সম্ভব। স্পেসেএক্স কোম্পানির পক্ষ থেকে স্টারশিপের উৎক্ষেপণকে ঐতিহাসিক ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। অবশ্য স্পেসএক্স যে এককভাবে এই রকেটটি প্রস্তুত করেছে এমন নয়। রকেটটি প্রস্তুতের জন্য স্পেসএক্সকে ২৮০ কোটি ডলার দিয়েছে নাসা।
আরও পড়ুন:
এআই টিম ভেঙে দিল মেটা