‘আল্লাহ আপাকে সম্মানের সঙ্গে নিয়ে গেছেন’

বিনোদন প্রতিবেদক
১৭ অক্টোবর ২০২৪, ১৫:০২
শেয়ার :
‘আল্লাহ আপাকে সম্মানের সঙ্গে নিয়ে গেছেন’

সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী গতকাল বুধবার দুপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। আজ বৃহস্পতিবার সকালে রমনায় নিজস্ব বাসভবনে প্রবীণ এই রাজনীতিবিদের প্রথম জানাজা সম্পন্ন হয়। আর বাদ জোহর গুলশান আজাদ মসজিদে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় জানাজা। এরপর মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে প্রয়াত স্বামী সাংবাদিক বজলুর রহমানের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন আওয়ামী লীগের ‘অগ্নিকন্যা’খ্যাত এই নেত্রী।

বেগম মতিয়া চৌধুরীর মৃত্যুর সংবাদটি শুনে কান্না আটকে রাখতে পারেননি বরেণ্য গীতিকার ও সুরকার প্রিন্স মাহমুদ। স্মৃতিচারণ করলেন ফেসবুকে। লিখলেন, ‘বজলু ভাই আর মতিয়া আপা দুজনেই নাই। দুজনের সঙ্গে আমার গানের সম্পর্ক ছিল। কাজের নয়। রাজনৈতিক পরিচয়ের নয়। কাল আমাদের বাসায় আপার জানাজা। আমি জ্বর নিয়ে খুলনায়। শেষ দেখা দেখতে পারলাম না। ২৫ বছর পাশাপাশি থেকেছি। ১৫ বছর আগে এই বাসা ছোট বলে ছেড়ে দিয়েছিলাম। আপা অন্য ফ্ল্যাটের ওনারদের বলে বাসা ঠিক করে আমাকে আবার ফিরিয়ে আনেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘সবাইকে ডেকে বলছেন প্রিন্স আমাদের সম্পদ ওকে এলাকা ছেড়ে যেতে দেওয়া যাবে না। বাড়িয়ে বলছি না। অনেক স্মৃতি, অনেক। চোখ থেকে পানি থামছেই না। আগস্ট ৫-এর পর থেকে প্রায় প্রতিদিন আপাকে দোয়ায় রেখেছি মহান আল্লাহ যেন আপার সম্মান রক্ষা করেন। আল্লাহ আপাকে সম্মানের সঙ্গে নিয়ে গেছেন। এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি নেই। এখন যে যাই বলুক, যা খুশি মনে করুক কিছু আসে যায় না। আপার আত্মার শান্তির জন্য দোয়া চলতেই থাকবে।’

উল্লেখ্য, ১৯৪২ সালের ৩০ জুন মতিয়া চৌধুরী পিরোজপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা এবং মা নুরজাহান বেগম ছিলেন গৃহিণী। ব্যক্তিজীবনে ১৯৬৪ সালের ১৮ জুন খ্যাতিমান সাংবাদিক বজলুর রহমানের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

ইডেন কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৬৫ সালে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন এর সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৭ সালে ‘অগ্নিকন্যা’ নামে পরিচিত মতিয়া পূর্ব পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগ দেন এবং এর কার্যকরী কমিটির সদস্য হন। ১৯৭০ ও ১৯৭১ এর মাঝামাঝি সময়ে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম, প্রচারণা, তদবির এবং আহতদের শুশ্রুষায় সক্রিয় অংশগ্রহণকারী ছিলেন।

১৯৭১ সালে তিনি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছিলেন। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সময়কালে তিনি বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তার হন।

১৯৯৬ ও ২০০৯ এবং ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগ শাসনামলে কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১২ জানুয়ারি ২০২৩ সালে তিনি জাতীয় সংসদের সংসদ উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব নেন। পরে তিনি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হলে পুনরায় তিনি জাতীয় সংসদের সংসদ উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব নেন। গণ আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। পরে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করলে তিনি সংসদ সদস্য পদ হারান। তিনি শেরপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ছিলেন।