বোরকাকে পতিতাবৃত্তির সঙ্গে তুলনাসহ ৯ অভিযোগে রাবি শিক্ষকের অপসারণ দাবি

রাবি প্রতিনিধি
০২ অক্টোবর ২০২৪, ১৬:২২
শেয়ার :
বোরকাকে পতিতাবৃত্তির সঙ্গে তুলনাসহ ৯ অভিযোগে রাবি শিক্ষকের অপসারণ দাবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরীকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তাকে দ্রুত অপসারণের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। বোরকাকে পতিতাবৃত্তির সঙ্গে তুলনা, খোলামেলা পোশাক নিয়ে অশোভন মন্তব্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে কাজ করার জন্য অর্থের প্রলোভন দেখানোসহ ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ৯টি অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

আজ বুধবার সকাল ৯টায় বিভাগে তালা দিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন শতাধিক শিক্ষার্থী। দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত এই কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা। পরবর্তীতে বেলা ১২টার দিকে প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান নেন তারা। এ সময় উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তাদের একটি প্রতিনিধি দল।

ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরীর বিরুদ্ধে করা অন্য অভিযোগগুলো হলো- বিভাগের উন্নয়ন তহবিলের অর্থ আত্মসাৎ, অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, ফল বিপর্যয় এবং পাঠদানে ফাঁকি দেওয়া।

বিক্ষোভ সমাবেশে ‘অ্যাকশন! অ্যাকশন! ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘এক দুই তিন চার, মামুন তুই আইআর ছাড়’, ‘জেগেছেরে জেগেছে, আইআরবাসী জেগেছে’, ‘রাতের পর আসে ভোর, মামুন তুই টাকা চোর’, ‘দালালী না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’, ‘লড়াই লড়াই লড়াই চাই, লড়াই করে বাঁচতে চাই’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের।

বিক্ষোভ সমাবেশে বিভাগের প্রথম বর্ষের এক ছাত্রী বলেন, ‘আমি কয়েকজন ফ্রেন্ডের সঙ্গে একটা কাজে তার চেম্বার গিয়েছিলাম। তিনি কাজের কথায় না এসে আমাকে বলেন, ‘তুমিতো গেঞ্জি পরো! তুমি গেঞ্জি পরো এটা তোমার কাছে নর্মাল। কিন্তু ছেলেদের তো এসব দেখলে মাথা খারাপ হয়ে যাবে।’ তিনি আজব অঙ্গভঙ্গি করে আমাকে বলেন, ‘সমাজে যারা এসব ড্রেস আপ পরে তারাই টার্গেটেড থাকে আর তারাই ধর্ষণের শিকার হয়।’ কিন্তু, উনি (অধ্যাপক মামুন) ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয় তিনি নাকি মেয়েদের পোশাক নিয়ে কথা বলেন না।

তিনি আরও বলেন, ‘একদিন ক্লাসে আমি ফতুয়া এবং আমার পাশের এক সহপাঠী বোরকা পরা ছিল। তিনি আমাদের দুজনের উদ্দেশ্যে বলেন, আমরা নাকি কেউই বাঙালি সংস্কৃতির অংশ না। কারণ, আমি ফতোয়া পরে ছিলাম এবং আমার ফ্রেন্ড বোরকা। আমার সেই বোরকা পরা ফ্রেন্ডকে বলে, সে নাকি জঙ্গি। এভাবে প্রায়ই আমাদের ক্লাসে অপমান করা হতো।’

ড. মামুনকে স্বৈরাচারের দালাল আখ্যা দিয়ে বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী নৌশিন ইসলাম বলেন, ‘অধ্যাপক মামুন বিভাগের প্রতিটি শিক্ষার্থীর ভোগান্তির কারণ। তিনি গত ৬ বছরে আমাদের সাথে যে অন্যায়-অবিচার করেছেন, তার বিরুদ্ধে আমরা দাঁড়িয়েছি। সেশনজট থেকে শুরু করে বিভাগের অর্থ কেলেঙ্কারি, নারীদের যৌন হয়রানির মতো অভিযোগ রয়েছে। তাকে আমাদের বিভাগের শিক্ষক হিসেবে চাই না। এমনকি তিনি আমাদের বিভাগের নন, তিনি ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক। আমাদের বিভাগে সভাপতি হয়ে আসার পর তার মেয়াদ শেষ হলেও তিনি আর ফেরত যাননি। তার এসব কাজের জন্য আমরা প্রতিবাদ জানাচ্ছি। প্রশাসন থেকে এর কোনো পদক্ষেপ না আসা পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি চলবে।’

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ মিথ্যা। শিক্ষকদের কারণেই সেশনজট হয়েছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমার ইমেজ খারাপ করার জন্য শিক্ষার্থীদের দিয়ে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। বিভাগের অর্থ ব্যয়ে শুধু আমি একা নই, অন্যান্য শিক্ষকও ছিল। আমি তো শুধু চেক স্বাক্ষর করেছি। আমিও এর সঠিক তদন্ত চাই।’

এ ব্যাপারে জানতে উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীবের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।

এর আগে, গত সোমবার এই অধ্যাপকের অপসারণের দাবিতে উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেন শিক্ষার্থীরা।