জাবির সাবেক দুই উপাচার্য ও প্রক্টরসহ ২০০ জনের নামে মামলা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সাবেক দুই উপাচার্য ও প্রক্টরসহ অজ্ঞাতনামা ১৫০-২০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। আন্দোলন চলাকালে গত ১৫ জুলাই রাতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগসহ বহিরাগত সন্ত্রাসীদের হামলার ঘটনায় এ মামলা করা হয়।
গত শনিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী সাজ্জাদুল ইসলাম বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় মামলাটি করেন। ১৫ জুলাই রাতে তিনি উপাচার্যের বাসভবনে হামলার শিকার হয়েছিলেন।
আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক মামলা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এতে তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছেন পুলিশ পরিদর্শক কামাল হোসেন।
মামলায় সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমকে প্রধান আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলায় শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন- সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক আলমগীর কবির, আ স ম ফিরোজ উল হাসান, সহযোগী অধ্যাপক মেহেদী ইকবাল, অধ্যাপক বশির আহমেদ, সহযোগী অধ্যাপক ইখতিয়ার উদ্দিন ভূঁইয়া, অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবির, অধ্যাপক ফরিদ আহমেদ ও অধ্যাপক ইসরাফিল আহমেদ।
কর্মকর্তাদের মধ্যে রাজিব চক্রবর্তী, নাহিদুর রহমান খান, সুদীপ্ত শাহীন ও ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্যে সভাপতি আখতারুজ্জামান সোহেল ও সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন ছাড়াও অজ্ঞাতনামা প্রায় ১৫০-২০০ জনকে আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এজাহারে বলা হয়, গত ১৫ জুলাই সন্ধ্যা ৬টায় ছাত্রলীগ কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে বাদীসহ শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত হন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টরসহ কয়েকজন শিক্ষক আলোচনার নামে কালক্ষেপণ করেন। শিক্ষার্থীদের দাবি না শুনে উলটো তাদের হুমকি দেওয়া হয় পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ও প্রশাসনের সরাসরি নির্দেশে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ নেতাকর্মী ও বহিরাগত সন্ত্রাসীরা সশস্ত্র হামলা চালায়। এ সময় অভিযুক্ত কর্মকর্তা ও শিক্ষকগণ উপস্থিত ছিলেন।
এতে আরও উল্লেখ করা হয়, আটকে পড়া শিক্ষার্থীদেরকে হত্যার উদ্দেশ্যে দফায় দফায় হামলা চালানো হয়। নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের কমপক্ষে ১৫ জন এতে মারাত্মকভাবে জখম ও আহত হন। হামলাকালে অভিযুক্তদের কাছে রামদা, পেট্রোলবোমা ও আগ্নেয়াস্ত্র ছিল।
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, হামলার সময় শিক্ষার্থীরা জীবন বাঁচাতে এদিক-সেদিক আত্মরক্ষার চেষ্টা করলেও অজ্ঞাত ১৫০-২০০ জন সন্ত্রাসী সেখানে মুহুমুর্হু পেট্রোল বোমা ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। কাঁচের বোতল ও পেট্রোল বোমা ছুড়ে মারলে একাধিক শিক্ষার্থী কাটা, ফাটা ও জখমের স্বীকার হয়। এ হামলায় বাদীসহ অজ্ঞাত ১০-১৫ জন রক্তাক্তভাবে আহত হন। এ ঘটনা ব্যাপকতা ও হামলার সময় দীর্ঘ হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীরা মানসিক ও শারীরিকভাবে ভেঙে পড়ে এবং একাধিক শিক্ষার্থীকে অজ্ঞান হতে দেখা যায়। রাত সাড়ে তিনটায় বিভিন্ন হল থেকে আসা সহস্রাধিক সাধারণ শিক্ষার্থীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় উক্ত অবরুদ্ধ অবস্থা ও হত্যাচেষ্টা থেকে তারা প্রাণে বাঁচেন।
আরও পড়ুন:
ইবির ইসলামের ইতিহাস বিভাগে তালা!
মামলার বাদী সাজ্জাদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের ওপর অতর্কিত হামলার বিচার চাইতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রশাসনের মদদে ছাত্রলীগ ও ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা হামলা করেছিল। দীর্ঘদিন অপেক্ষা করলেও পুলিশ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় কেউ মামলা করে নাই। আমিসহ আমার সহযোদ্ধাদের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা করেছি। আশা করি, আসামিদের পুলিশ দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসবে।’
বিশ্ববিদ্যাললের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এ বি এম আজিজুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় পুলিশ কোনো সহযোগিতা চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তা প্রদান করবে। একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা হিসেবে তারাও কোনো আইনি সহযোগিতা চাইলে সেটিও বিবেচনা করবে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কামাল হোসেকে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে জুলাই গণহত্যা বিচার নিশ্চিত পরিষদের মুখপাত্র ইমরান শাহরিয়ার বলেন, ‘অভ্যুত্থানের পর থেকেই আমরা লক্ষ্য করছি সাভার-আশুলিয়া থানা প্রশাসন জুলাই অভ্যুত্থানে সংঘটিত গণহত্যায় জড়িত আওয়ামী খুনি ও দোসরদের বিরুদ্ধে মামলা নেওয়া কিংবা তাদেরকে গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে গড়িমসি করছে। স্বাধীন বাংলাদেশে খুনিদের বিরুদ্ধে মামলা নিতে কিসের ভয় পুলিশের? আমরা ইতঃপূর্বেও সংবাদ সম্মেলন ও বিক্ষোভ মিছিল করে এ ব্যাপারে জানিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে যারা আমাদের ওপর ন্যাক্কারজনক হামলা করেছে, তাদের আইনের আওতায় আনার ব্যাপারে কোনো ধরনের কালক্ষেপণ সহ্য করব না। এরপর যদি পুলিশ প্রশাসন পদক্ষেপ নিতে গড়িমসি করে, আমরা ছাত্র-জনতা মিলে থানা ঘেরাওয়র মতো কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।’