‘লোকজন আমাকে খারাপ ভাবত’

বিনোদন প্রতিবেদক
১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৩৪
শেয়ার :
‘লোকজন আমাকে খারাপ ভাবত’

অভিনয়, লেখালেখি, সিনেমা নির্মাণ- সবখানেই ছিল তার পদচারণা। তবে সকল পরিচয় ছাপিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে তিনি ছিলেন আপাদমস্তক একজন অভিনয়শিল্পী। তিনি এটিএম শামসুজ্জামান। অভিনয়গুণে একাধিক প্রজন্মের কাছে যিনি অনুপ্রেরণার বাতিঘর। তিনি কখনো পর্দায় হাসিয়েছেন আবার কখনো কাঁদিয়েছেন কিংবা কখনো ভয় দেখিয়েছিলেন দর্শকদের।

ক্যারিয়ারের নানা সময়ে বিভিন্ন ভূমিকায় অভিনয় করলেও খলচরিত্রে এটিএম ছিলেন অনবদ্য। এর সর্বশেষ উদাহরণ রেদওয়ান রনির ‘চোরাবালি’ সিনেমাটি। যেখানে অপরাধ জগতের গডফাদার ওসমান গনির ‘বড়ভাই’ চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন এই অভিনেতা। মন্দ চরিত্রে তিনি এমনভাবে নিজেকে ফুটিয়ে তুলতেন যে, অভিনয় নাকি বাস্তব- তা আঁচ করাটা কঠিন হয়ে যেত দর্শকদের কাছে।

নানা ঘটনায় মোড়া এটিএম শামসুজ্জামানের জীবন কাহিনী। সিনেমাপাড়ায় একটা ঘটনা প্রচলিত রয়েছে যে, একদিন জুম্মার দিনে গোসল করে পাজামা-পাঞ্জাবি পরে যখন মসজিদে যাচ্ছিলেন তখন এক লোক এটিএমকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কোথায় যাচ্ছেন?’ এটিএম বললেন, মসজিদে যাচ্ছি। লোকটি তখন বললেন, ‘জুম্মার নামাজ পরে আপনার লাভ কী? জীবনে এত আকাম করেছেন বুঝতে পারছেন না? আপনি একটা বাজে লোক!’

সত্যি বলতে, খলচরিত্রে অভিনয় করলেও ব্যক্তিজীবনে এটিএম ছিলেন খুবই ধার্মিক। এক সাক্ষাৎকারে অভিনয় জীবনে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি সম্পর্কে জানতে চাইলে এই অভিনেতা বলেছিলেন, ‘সিনেমায় আমাকে দেখে লোকজন খারাপ ভাবত, এতেই আমার আনন্দ।’

এই গুণী অভিনেতার জন্মদিন আজ। ১৯৪১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর নোয়াখালীতে তার জন্ম। পুরো নাম আবু তাহের মোহাম্মদ শামসুজ্জামান। স্নাতক সম্পন্ন করেছিলেন তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ থেকে।

১৯৬১ সালে নির্মাতা উদয়ন চৌধুরীর ‘বিষকন্যা’ সিনেমায় সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেন এটিএম শামসুজ্জামান। পর্দায় আগমন ১৯৬৫ সালে, তার অভিনীত প্রথম সিনেমা ‘নয়া জিন্দগানী’; যদিও তা মুক্তি পায়নি। প্রথমবার তাকে পর্দায় দেখা যায় ১৯৬৮ সালে নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত ‘এতটুকু আশা’ সিনেমায়। এতে খবরের কাগজ বিক্রেতার ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন তিনি।

প্রায় চার শতাধিক সিনেমাতে অভিনয় করেছেন এটিএম শামসুজ্জামান। তার অভিনীত সিনেমার মধ্যে ‘ওরা ১১ জন’, ‘লাঠিয়াল’, ‘নয়নমণি’, ‘অশিক্ষিত’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা’, ‘স্বপ্নের নায়ক’, ‘অনন্ত প্রেম’, ‘দোলনা’, ‘এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী’, ‘ম্যাডাম ফুলি’, ‘চুড়িওয়ালা’, ‘হাজার বছর ধরে’, ‘মোল্লা বাড়ির বউ’, ‘মন বসে না পড়ার টেবিলে’, ‘গেরিলা’, ‘চোরাবালি’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।