ন্যায়বিচার চাইলেন গায়ক তবীব
র্যাপ গান দিয়ে শ্রোতাদের মন জয় করে নিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মাহমুদ হাসান তবীব। কামরাঙ্গীরচরে বেড়ে ওঠা পথশিশু রানাকে নিয়ে তিনি গেয়েছিলেন ‘গল্লি বয়’ গানটি। ২০১৯ সালে ভাইরাল হওয়া এই গানের পর তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।
গানের কথায় তবীব মাহমুদ বরারবই তুলে ধরেছেন সমাজের নানা অসংগতি। আর সে কারণে ভক্তমহলে তার পরিচিতিও ‘সাহসী’ গায়ক হিসেবে। সবশেষ কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে তিনি গেয়েছেন ‘কোটা সাম্যের পৃথিবীর কুসংস্কার’ গানটি। যা প্রকাশ হয় গেল ৪ জুলাই।
এবার কোনো গান নয়, তবীব ভক্ত-শ্রোতাদের সামনে তুলে ধরলেন তার জীবনের ঘটে যাওয়া নির্মম একটি ঘটনা। যা আজও পীড়া দেয় এই শিল্পীকে।
এক ফেসবুক পোস্টে গায়ক বলেন, ‘২০১৮ সালে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপনের নির্দেশে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আপেল, বশিরসহ আরো কিছু নেতা প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে নিজকক্ষে বন্দি করে। প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষকের থেকে জোরপূর্বক সাইন নিয়ে তারা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে বরখাস্ত করে ও পরে চাকরিচ্যুত করে। সেদিন এই ঘটনার প্রতিবাদ করেছিলেন নজরুল ইসলাম চঞ্চল স্যার যাকে তখনই অমানবিক নির্যাতন করা হয়। চঞ্চল স্যার আজ পৃথিবীতে নেই। জুলুমের শিকার হওয়া এই চাকরিচ্যুত অধ্যক্ষ আমার পিতা জনাব মুহাম্মদ ফজলুর রহমান।’
আরও পড়ুন:
স্ত্রীর কবরের পাশে পরীর নানা সমাহিত
তবীব মাহমুদ আরও বলেন, ‘সেদিন আম্মু আমাকে ফোন দিয়ে বলল, “ওরা তোমার আব্বুকে বন্দি করেছে। তাকে তুলে নিয়ে যাবে। তুমি কিছু করো।” আমি ঢাবির কলা ভবনের চতুর্থ তলায় আরবি বিভাগের বাড়ান্দায় দাঁড়িয়ে মায়ের আর্তনাদ শুনছিলাম আর দেখছিলাম অপরাজেয় বাংলার সামনে দিয়ে শোডাউন যাচ্ছে- জয় বাংলা।’
ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়ে এই গায়ক লিখেছেন, ‘চোখের কোনে এক ফোটা পানি… আজও আমার পিতা চাকরিচ্যুত। যদি আমার পিতার মত হাজার হাজার নির্যাতিত শিক্ষক এখন ন্যায়বিচার না পায়, তবে আমি বিদ্রোহ করব। আবু সাঈদ, মুগ্ধসহ শত শত শহীদ রক্তে আগুন জ্বালিয়েছে। ইনসাফ চাই, ন্যায়বিচার।’
বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করা হলে তবীব বলেন, ‘২০১৮ সালে বাবাকে সাময়িকভাবে বহিস্কার করা হয়েছিল। তখন আমরা আদালতেও গিয়েছিলাম। আর চলতি বছর আগের সরকারের আমলে ডিসি অফিসের মাধ্যমে বাবাকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়।’
আরও পড়ুন:
গণভবনে ডাক পেলেন আ. লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা
তার বাবার বিষয়ে কী অভিযোগ আনা হয়েছিল জানতে চাইলে তবীব বলেন, ‘যে অভিযোগ আনা হয়েছিল, সেগুলোর কয়েকটি বেশ হাস্যকর। যেমন- ১০-১২ হাজার টাকার বই লোপাট করার মতো অভিযোগ। আবার গুরুতর একটি অভিযোগ হলো- আমার বাবার সার্টিফিকেট নাকি জাল। বিশ্ববিদ্যালয়ে তার পড়াশোনা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। অথচ আমার বাবা শারীরিক প্রতিবন্ধী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমে ইংরেজি বিভাগে পরবর্তী সময়ে ইসলামিক স্টাডিজে মাইগ্রেশন নিয়েছিলেন। বিভাগের সহকর্মী-শিক্ষকরা বাবার অসুস্থতার চিকিৎসার উদ্যোগও নিয়েছিলেন। বাবা যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এ বিষয়ে বহু প্রমাণ যেমন আছে, তেমনি বাবার সার্টিফিকেটও আছে। এ বিভাগে তার বেশ সুনাম ছিল। যারা বাবার বিষয়ে অভিযোগ এনেছিল, তারা শুধু কিছু অজুহাত দাঁড় করাতে চেয়েছিলেন। এমনকি এ বিষয়ে আদালতের রায়ও আমাদের পক্ষে ছিল।’
তবীব জানান, মানুষের সাম্য-অধিকারের গান তৈরি করলেও তিনি ও তার পরিবার নিজেই হয়েছেন নির্যাতনের শিকার। বিষয়গুলো নিয়ে আইনি পথেও হাঁটবেন বলে জানান এই গায়ক। নতুন ডিসি নিয়োগ হলে, সেখানে তার আবেদনটি জানাতে চান। প্রয়োজনে এমন বঞ্চনার শিকার শিক্ষকদের নিয়ে আন্দোলনে নামবেন বলেও জানলেন তবীব।